Refusing a producer who asked to compromise, made Richa Chaddha loose films dgtl
Richa Chaddha
কাস্টিং কাউচে মানা করায় হাত থেকে ছবির সুযোগ চলে যায় রিচার
সুপারস্টার বা নায়িকা না, অভিনয় করাটাই তাঁর একমাত্র ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে গিয়ে কোটি কোটি বাধা পেরতে হয়েছে অভিনেত্রী রিচা চাড্ডাকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
কোনও গডফাদার ছিল না তাঁর। তিনি স্টারকিডও নন। কেবল একটা স্বপ্ন ছিল তাঁর কাছে। বলিউডের অভিনেত্রী হবেন। সুপারস্টার বা নায়িকা না, অভিনয় করাটাই তাঁর একমাত্র ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে গিয়ে কোটি কোটি বাধা পেরতে হয়েছে অভিনেত্রী রিচা চাড্ডাকে।
০২২০
অভিনয়ে তাঁর দক্ষতা আগে থেকেই ছিল। ১৯৮৬ সালে পঞ্জাবে জন্ম তাঁর। দিল্লিতে বড় হয়েছেন। ছোট থেকেই অভিনয়ের দিকে মন ছিল। খুদে রিচা নিজের বাবাকে নকল করতেন। বাবার ভুঁড়ি ছিল বলে জামার ভিতরে বালিশ নিয়ে বাবার নকল করতেন।
০৩২০
দিল্লি থেকে ইতিহাস নিয়ে স্নাতক। পাশ করেই তিনি মডেলিং শুরু করেন। ফের মঞ্চে পা রাখেন। বিখ্যাত ব্রিটিশ পরিচালক বেরি জন-এর তত্ত্বাবধানে মঞ্চাভিনয় শেখেন।
০৪২০
সাংবাদিকতা নিয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন রিচা চাড্ডা। মুম্বই যাওয়ার পর রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন প্রথম প্রথম। এমনকি ‘আহিস্তা আহিস্তা’-র ছবির জন্য অভিনেতা অভয় দেওলের সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি অডিশন দিতেন।
০৫২০
দুঃখের বিষয়, অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে স্ট্রাগল করার সময়ে তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কেউ কথাই বলতেন না। সকলেই তাঁর চেহারা দেখে তাঁকে নাকচ করে দিতেন। কখনও তাঁর ঠোঁট নিয়ে সমস্যা। কখনও তাঁর নাক নিয়ে। কখনও বা গোটা শরীরের আকৃতি নিয়েও কুমন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয় রিচাকে।
০৬২০
পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে ছবি’-তে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। খুব বড় চরিত্র না হলেও নজর কেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু পর্দায় তাঁর অভিনয় দেখার পরেও তাঁর শরীর নিয়ে মন্তব্য করতে থাকে গোটা বলি-পাড়া। কিন্তু দু’এক জন সমালোচক তাঁর অভিনয় ক্ষমতার প্রশংসা না করে পারেননি।
০৭২০
‘ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে’ ছবিটির স্ক্রিনিং চলছিল গোয়াতে। সে সময়ে খবর আসে মুম্বই হামলার। ২৬/১১-র সেই ভয়াবহ জঙ্গী হামলায় প্রাণহানি তো হলই। মানসিক রোগও বেড়ে গেল বাণিজ্যনগরীর মানুষের মধ্যে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হল সিনেমা জগতও। সেই সময়ে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবিটি। কিন্তু দর্শক ছবি দেখতে হলে গেলেন না।
০৮২০
এর পর দু’বছর ধরে কোনও কাজ পাননি তিনি। পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের ‘ডেভ ডি’ ছবির মুখ্য চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন রিচা। কিন্তু শেষমেশ কলকি কেকলা এই ছবিতে অভিনয় করেন।
০৯২০
‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’ ছবির জন্য অনুরাগ কাশ্যপের এমন এক অভিনেত্রীর প্রয়োজন ছিল, যিনি তরুণী ও মধ্যবয়সি—দুই চরিত্রেই মানিয়ে যাবেন। সেখানেই ‘নাগমা খাতুন’ চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয় রিচা চাড্ডাকে। মনোজ বাজপেয়ীর স্ত্রী ও নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সকলকে চমকে দেন।
১০২০
দু’বছর তাঁর কাছে কোনও সুযোগ ছিল না। কিন্তু নাগমা খাতুনের চরিত্রের কারণে তাঁর কাছে ফিল্মফেয়ার থেকে শুরু করে সমস্ত নামি দামি পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে আসতে থাকে। তার পর ১১টি ছবির সুযোগ আসে তাঁর কাছে।
১১২০
কিন্তু হায়! যতই ভাল অভিনয় করুন না কেন, বলিউডে টাইপ-কাস্ট হওয়ার থেকে কে বাঁচাতে পারে। ‘অগ্নিপথ’ ছবিতে তাঁকে হৃতিক রোশনের মায়ের ভূমিকাও অফার করা হয়। কিন্তু রিচা জানতেন তিনি কী করতে চান, আর কী করতে চান না। তিনি এই ধরনের ছবির জন্য সোজাসুজি ‘না’ করে দেন। ধর্মা প্রোডাকশনের কাস্টিং ডিরেক্টরের সঙ্গে সেই থেকেই তাঁর কুসম্পর্ক।
১২২০
২০১৩ সালে ‘ফুকরে’ ছবি থেকে ফের তাঁর জীবনের মোড় ঘোরে। সেই ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখার পর তাঁর ফ্যানবেসও তৈরি হয়। শুধু তাই না। এই ছবির শ্যুটিংয়েই তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় তাঁর। অভিনেতা আলি ফজল। আগামী বছরের শুরুতে তাঁদের বিয়ে হবে বলেও শোনা যাচ্ছে।
১৩২০
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ছবি ‘রামলীলা’-তে রিচা চাড্ডা দীপিকা পাড়ুকোনের বৌদির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘সর্বজিৎ’ ছবিতেও তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু চিত্রনাট্যে তাঁর চরিত্রের যতটা গুরুত্ব ছিল, এডিটিংয়ের পরে সেই গুরুত্ব আর নজরেই পড়ে না। তিনি জানিয়েছিলেন, এই ছবি দু’টিতে কাজ না করলেই ভাল হত।
১৪২০
২০১৫ সালে ‘মসান’ ছবিতে কাজ করাটা তাঁর জীবনের মাইলস্টোন বলা হয়। ছবিটি যে এই পরিমাণ প্রশংসা পাবে, তা হয়তো খোদ অভিনেত্রী রিচা ও স্বেতা ত্রিপাঠী, অভিনেতা ভিকি কৌশাল ও সঞ্জয় মিশ্র, এমনকি পরিচালক নীরজ ঘাইওয়ানও ভাবতে পারেননি। কান ফিল্ম ফেস্টিভালে দর্শকেরা ৫ মিনিট ধরে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিলেন।
১৫২০
আন্তর্জাতিক সম্মান পাওয়ার পর থেকে সংবাদমাধ্যমে তাঁর অভিনয় নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়। এখন তাঁর ছবি কেবল দেশের গণ্ডির মধ্যে আটকে নেই। বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে তাঁর ছবি। রিচার অভিনয় নিয়ে সারা দুনিয়ায় কথা বলছে মানুষ।
১৬২০
প্রথম বার বাণিজ্যিক ছবি ‘ম্যায় অর চার্লস’-এ কাজ করেন তিনি। যদিও বক্স অফিসে এই ছবি খুব একটা নাম করতে পারেনি। একে একে ‘চক অ্যান্ড ডাস্টার’, ‘সেকশন ৩৭৫’, ‘পঙ্গা’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন তিনি।
১৭২০
তাঁর আগামী ছবিতে তিনি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন। ‘শকীলা’ ছবিটিতে তিনি দক্ষিণী অ্যাডাল্ট সুপারস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।
১৮২০
পুরুষতান্ত্রিক ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন তিনি। কেবল মাত্র প্রতিভার জোরে।
১৯২০
কিন্তু এই পর্যন্ত আসতে তাঁকে অনেক কসরৎ করতে হয়েছে। এমনকি ‘কাস্টিং কাউচ’-এর মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও তাঁর হয়েছে। একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন রিচা। এক প্রযোজক এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ডিনার করবে’? রিচা সঙ্গে সঙ্গেই জানান যে ডিনার করে নিয়েছেন, এবং কী কী খেয়েছেন তার বিস্তারিত তথ্যও দেন। তার পর রিচার গায়ে হাত দিয়ে সেই প্রযোজক তাঁকে বলেন, ‘এই ডিনার না, ওই রকম ডিনারের কথা বলছি।’ মুখের উপর ‘না’ বলে দিয়েছিলেন বলে তাঁর হাত থেকে একাধিক ছবির কাজও চলে যায়।
২০২০
একটি ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ আসে তাঁর। ছবির জন্য নির্দিষ্ট একটি ভাষা শিখতে হয়, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বদলে ফেলতে হয়, এমনকি পোশাকও তৈরি করা হয় তাঁর মাপের। প্রথম দিনের শ্যুটের আগে তিনি জানতে পারেন, ছবির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির প্রেমিকা তাঁর জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।