Cult Movies of Soumitra Chatterjee through decades dgtl
soumitra chatterjee
অপু থেকে অমূল্য, ময়ূরবাহন, ফেলুদা... প্রজন্মজয়ী সৌমিত্র ছাপ ফেলেছেন সব ভূমিকাতেই
সত্যজিতের হাত ধরে বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ পায় এক নতুন নাম, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কয়েক দশক পরে সেই নাম মহীরুহের রূপ ধারণ করে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
একটি করে দশক পার হয়েছে, একের পর এক অলঙ্কারে বাংলা চলচ্চিত্রকে সাজিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। একটা যুগ শেষ হয়ে বহমান যাত্রাপথ মিশে গেল মহাসিন্ধুতে। এক বার ফিরে দেখে নেওয়া যাক কী কী অমূল্য রত্ন রয়ে গেল নামজীবনের বিভিন্ন অংশে।
০২২৪
১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় ‘অপুর সংসার’। সত্যজিতের হাত ধরে বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ পায় এক নতুন নাম, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কয়েক দশক পরে সেই নাম মহীরুহের রূপ ধারণ করে।
০৩২৪
এর পরের বছরই সৌমিত্র অভিনয় করলেন ‘দেবী’-তে। বিপরীতে প্রথম ছবির নায়িকা শর্মিলাই। বিভূতিভূষণের অপু থেকে এ ছবিতে সৌমিত্র পারিবারিক দ্বন্দ্বে দীর্ণ উমাপ্রসাদ।
০৪২৪
সত্যজিতের পরিচালনায় হ্যাটট্রিক হত। মাঝে এলেন তপন সিংহ। ১৯৬০ সালেই তাঁর পরিচালনায় মুক্তি পেল ‘ক্ষুধিত পাষাণ’। পরের বছর আবার কাজ সত্যজিতের সঙ্গে। এ বার তাঁর ‘তিন কন্যা’-র ‘সমাপ্তি’-তে অপর্ণা সেনের বিপরীতে তিনি অমূল্য। এই ছবির ৪ দশক পরে অপর্ণারই পরিচালনায় তিনি অভিনয় করেন ‘পারমিতার একদিন’ ছবিতে।
০৫২৪
পঞ্চম ছবিতেই ধরা দিলেন খলনায়কের ভূমিকায়। তত দিনে উত্তম-সৌমিত্র ঘরানায় বিভক্ত বাংলা ছবির দর্শক। এ বার তাঁরা ফ্রেমবন্দি তপন সিংহের ‘ঝিন্দের বন্দি’-তে। শুধু নিজের বাহনেরই নয়। বাংলা ছবির ভালমন্দের রাশও তখন ময়ূরবাহনের তালুবন্দি।
০৬২৪
জীবনের ষষ্ঠ ছবিতেই অভিনয় মৃণাল সেনের পরিচালনায়। ছবির নাম, ‘পুনশ্চ’। মুক্তি পায় ১৯৬১ সালে। তার পরের বছরই সত্যজিতের পরিচালনায় তিনি ‘অভিযান’-এর নরসিংহ।
০৭২৪
সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় ‘সাত পাকে বাঁধা’-য়। ১৯৬২ সালে মুক্তি পায় অজয় করের পরিচালনায় এই ছবিটি। সৌমিত্র-সুচিত্রার অনবদ্য অভিনয়ে বাংলা ছবির ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে ছবিটি।
০৮২৪
‘চারুলতা’-র অমল হওয়ার জন্য অপেক্ষা আরও ২ বছরের। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় ‘চারুলতা’। সে বছর তাঁর নামের পাশে যুক্ত হয় আরও দু’টি স্মরণীয় ছবি। ‘কিনু গোয়ালার গলি’ এবং মৃণাল সেনের ‘প্রতিনিধি’।
০৯২৪
১৯৬৫ সালে একদিকে তিনি সত্যজিতের পরিচালনায় ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’-এর অমিতাভ রায়। অন্যদিকে, মৃণাল সেনের ‘আকাশ কুসুম’-এ অজয় সরকার।
১০২৪
৫ বছর পরে আবার কাজ সত্যজিতের পরিচালনায়। এ বার তিনি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র অসীম চট্টোপাধ্যায়। তারও ৮ বছর পরে তিনি সত্যজিতের ছবি ‘অশনি সঙ্কেত’-এর গঙ্গাচরণ পুরোহিত।
১১২৪
‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়’ নাম বললেই ‘অপু’র পরেই, বা অনেক দর্শকের কাছে অপুর আগেই যে চরিত্রের নাম মুখে চলে আসে, তা হল ফেলুদা। প্রদোষচন্দ্র মিত্র আসলে কে? সৌমিত্র, না কি স্রষ্টা সত্যজিৎ নিজেই, সে উত্তর খুঁজে চলবে বাঙালির মগজাস্ত্র।
১২২৪
১৯৭৪ সালে ফেলুদা হিসেবে সৌমিত্র প্রথম সেলুলয়েডবন্দি হন ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে। ৪ দশক পার করেও, বাঙালির রাজস্থান ভ্রমণের অন্যতম নেপথ্য কারিগর ফেলুদার এই অভিযান।
১৩২৪
সোনার কেল্লা থেকে মুকুলকে নিয়ে কলকাতায় নির্বিঘ্নে ফেরার পরে আরও ৫ বছর অপেক্ষা করতে হল দর্শককে। আবার ফেলুদাকে বড় পর্দায় সত্যজিৎ আনলেন ১৯৭৯-এ। এ বার ক্যাপ্টেন স্পার্ক রুকুর সোনার গণেশ উদ্ধার করতে ফেলুদা-তোপসে-জটায়ু কাশীর গলিতে।
১৪২৪
বাংলা কিশোর সাহিত্য এবং বাংলা ছবি যত দিন থাকবে, মগনলাল মেঘরাজের সঙ্গে মিস্টার মিত্তিরের ‘এক্সট্রা আর্ডিনারি’ বুদ্ধির টক্কর অমর হয়ে থাকবে।
১৫২৪
বাঙালি দর্শকের মগজাস্ত্ররই প্রতীক অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে ছাড়া ‘হীরক রাজের দেশে’-এর উদয়ন পণ্ডিত অন্য কাউকে ভাবতে পারেননি সত্যজিৎ।
১৬২৪
১৯৮০ সালের ‘হীরক রাজার দেশে’-এর উদয়ন পণ্ডিতই ৪ বছর পরে বড় পর্দায় এলেন ‘ঘরে বাইরে’-এর সন্দীপ হয়ে।
১৭২৪
১৯৮৬ তে তিনি কোনির ‘ক্ষিদ্দা’। পর্দায় ক্ষিতীশ নন্দী হয়ে শিখিয়ে গিয়েছেন জীবনের শেষ শক্তিবিন্দু অবধি লড়াই চালিয়ে যাওয়া কাকে বলে।
১৮২৪
রক্তচক্ষুর চাপে আবার সেই ক্ষিদ্দা’ই সব দেখেও না দেখার মাস্টারমশাই হয়ে যান তপন সিংহের ‘আতঙ্ক’-এ। যে কয়েকটি চরিত্রের রূপায়ণের জন্য সৌমিত্রর অভিনয়জীবন শাশ্বত, তার মধ্যে অন্যতম ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি।
১৯২৪
১৯৮৯ সালে ‘গণশত্রু’ এবং ১৯৯০-এ ‘শাখা প্রশাখা’। সত্যজিতের সঙ্গে শেষ কাজ হয়ে রয়েছে এই দু’টি ছবি। খেয়ালী অপু থেকে শুরু করে উজানস্রোতে পাড়ি দেওয়া ‘গণশত্রু’-র ডাক্তার অশোক গুপ্ত এবং ‘শাখা প্রশাখা’-র প্রশান্ত, সৌমিত্র নিজেকে বার বার ভেঙেছেন এবং গড়েছেন তাঁর প্রিয় পরিচালকের পরিচালনায়।
২০২৪
পরিচালকের পালাবদল হয়েছে। প্রজন্মজয়ী সৌমিত্র কাজ করেছেন বিভিন্ন প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গে। ১৯৯৯ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় তিনি অভিনয় করেন ‘অসুখ’ ছবিতে।
২১২৪
পরবর্তী সময়ের আর এক পরিচালক সুমন ঘোষের পরিচালনায় ‘পদক্ষেপ’ ছবি তাঁকে এনে দেয় জাতীয় পুরস্কার। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচলানয় ‘হেমলক সোসাইটি’, গৌতম ঘোষের ‘শূন্য অঙ্ক’, নন্দিতা রায় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলাশেষে’, ‘পোস্ত’, সুজয় ঘোষের ‘অহল্যা’, অতনু ঘোষের ‘ময়ূরাক্ষী’— সৌমিত্র নিরবচ্ছিন্ন এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে।
২২২৪
সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন ‘সত্যজিতের গপ্পো’ সিরিজে ‘অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য’ গল্পে। সেখানে অম্বর সেনের চরিত্রে মুখোমুখি হয়েছেন আর এক ফেলুদা সব্যসাচী চক্রবর্তীর। আবার সব্যসাচী যেখানে কাকাবাবু, পিনাকি চৌধুরীর পরিচালনায় সেই ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন?’-এ সৌমিত্র অভিনয় করেছেন খলনায়ক অসিত ধরের ভূমিকায়।
২৩২৪
২০১৯ সালে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মুক্তি পাওয়া ‘সাঁঝবাতি’ হয়ে রইল মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর শেষ পূর্ণাঙ্গ ছবি। তার আগে সে বছর তিনি অভিনয় করেছেন অনীক দত্তর পরিচালনায় ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ ছবিতেও। ২০১৮ সালে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘সোনার পাহাড়’-এ সৌমিত্র-তনুজা জুটি নস্টালজিক করে তুলেছিল দর্শকদের।
২৪২৪
নামী পরিচালকদের পরিচালনায় সমান্তরাল ছবিই নয়। মূলধারার ছবিরও অন্যতম অংশ তিনি। ‘বেনারসি’, ‘বাঘিনি’, ‘পরিণীতা’, ‘তিন ভুবনের পারে’, ‘প্রথম কদমফুল’, ‘বাক্স বদল’, ‘মাল্যদান’, ‘স্ত্রী’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘গণদেবতা’ এবং ‘দেবদাস’-এর মতো বক্সঅফিসে বাজিমাত করা ছবির উল্লেখ না করলে অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাঁর কুশীলবজীবনের অন্যতম দিক। (ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)