Delhi man quits job and sells house to distribute 50,000 helmets free of cost across 22 states dgtl
Helmet Man of India
বাইক দুর্ঘটনায় হারান প্রিয় বন্ধুকে, চাকরি ছেড়ে, বাড়ি বিক্রি করে হেলমেট বিলি করেন তরুণ
রাঘবেন্দ্র এবং কৃষ্ণ স্বপ্ন দেখেছিলেন দিল্লি যাওয়ার। ঘড়ি ধরে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চাকরি করার মধ্যে তাঁদের স্বপ্ন সীমাবদ্ধ ছিল না। চাকরির পাশাপাশি সমাজের উদ্দেশে কল্যাণমূলক কাজও করার ইচ্ছা ছিল দুই বন্ধুর।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:১৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
চাকরির পাশাপাশি সমাজসেবার স্বপ্ন নিয়ে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে দিল্লি গিয়েছিলেন তরুণ। কিন্তু দু’জনে একসঙ্গে তাঁদের স্বপ্নপূরণ করতে পারেননি। বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর প্রিয় বন্ধু। তার পর থেকে জমি, বাড়ি সব কিছু বিক্রি করে দেন তরুণ। আর কেউ যেন বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ না হারান সে কারণে বিনামূল্যে হেলমেট বিলি শুরু করেন তিনি। দেশ জুড়ে ‘হেলমেট ম্যান’ নামে পরিচিত দিল্লির তরুণ রাঘবেন্দ্র কুমার।
০২২৩
বিহারের কাইমুর জেলায় জন্ম রাঘবেন্দ্রের। বাবা-মা এবং পাঁচ ভাইবোনের সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকতেন তিনি। পরিবারের কনিষ্ঠতম সন্তান ছিলেন রাঘবেন্দ্র। তাঁর বাবা যুক্ত ছিলেন চাষবাসের সঙ্গে।
০৩২৩
দশম শ্রেণি পর্যন্ত কাইমুর জেলার একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেন রাঘবেন্দ্র। তার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বারাণসী চলে যান তিনি। রাঘবেন্দ্রের প্রিয় বন্ধু ছিলেন কৃষ্ণ কুমার। বিহারের মধুবনি জেলার বাসিন্দা ছিলেন কৃষ্ণ।
০৪২৩
রাঘবেন্দ্র এবং কৃষ্ণ স্বপ্ন দেখেছিলেন দিল্লি গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। ঘড়ি ধরে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চাকরি করার মধ্যে তাঁদের স্বপ্ন সীমাবদ্ধ ছিল না। চাকরির পাশাপাশি সমাজের জন্য কল্যাণমূলক কাজও করার ইচ্ছা ছিল দুই বন্ধুর।
০৫২৩
রাঘবেন্দ্রের পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা ভাল ছিল না। ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য খরচ করতেও অক্ষম ছিলেন রাঘবেন্দ্রের বাবা। তাই বারাণসীতে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে সেখানে চার-পাঁচ বছর বিভিন্ন ধরনের চাকরি করে অর্থ সঞ্চয় করেন রাঘবেন্দ্র।
০৬২৩
২০০৯ সালে আইন নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য দিল্লি যান রাঘবেন্দ্র। দিল্লির একটি কলেজে ভর্তিও হন তিনি। রাঘবেন্দ্রের সঙ্গে দিল্লি যান তাঁর প্রিয় বন্ধু কৃষ্ণ। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন কৃষ্ণ। পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরিও পেয়ে যান রাঘবেন্দ্র।
০৭২৩
কয়েক বছরের মধ্যে জীবন অন্য দিকে মোড় নেয় রাঘবেন্দ্রের। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান কৃষ্ণ। ‘দ্য বেটার ইন্ডিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ জানিয়েছিলেন রাঘবেন্দ্র।
০৮২৩
রাঘবেন্দ্র জানিয়েছিলেন হেলমেট না পরে বাইক চালাচ্ছিলেন কৃষ্ণ। পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১০ থেকে ১২ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছিল কৃষ্ণের। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় কৃষ্ণের।
০৯২৩
সাক্ষাৎকারে রাঘবেন্দ্র বলেছিলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর শোনার পর আমি এবং কৃষ্ণের বাবা-মা ছুটে হাসপাতালে যাই। ১০-১২ দিন ধরে আমরা শুধু ওর গলার আওয়াজ শুনব বলে অপেক্ষা করেছি। সেই সময় লক্ষ করেছিলাম পথ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে।’’
১০২৩
কৃষ্ণের মৃত্যু প্রসঙ্গে রাঘবেন্দ্র বলেছিলেন, ‘‘কৃষ্ণকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। ওর কত স্বপ্ন ছিল। ওকে ঘিরে ওর বাবা-মা কত স্বপ্ন দেখেছিলেন। সব যেন নিমেষের মধ্যে চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে গেল। হেলমেট পরে থাকলে হয়তো কৃষ্ণকে আমরা হারাতাম না।’’
১১২৩
হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণের বাবা-মায়ের চোখে রাঘবেন্দ্র যে যন্ত্রণা দেখেছিলেন তা দেখে জীবনের পথ স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর কাছে। সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছিলেন তিনি। তার পরেই বিনামূল্যে হেলমেট বিলি করার সিদ্ধান্ত নেন রাঘবেন্দ্র।
১২২৩
২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে হেলমেট বিলি করা শুরু করেন রাঘবেন্দ্র। চাকরির ফাঁকে যখনই অবসর সময় খুঁজে পেতেন তখনই হেলমেট বিলি করতে বেরিয়ে পড়তেন তিনি।
১৩২৩
সাক্ষাৎকারে রাঘবেন্দ্র জানিয়েছিলেন, বিহার থেকে গ্রেটার নয়ডা যাতায়াতের পথে তিনি অন্তত এক জনকে হলেও বিনামূল্যে হেলমেট বিলি করতেন। রাস্তাঘাটে কাউকে হেলমেট ছাড়া বাইক চালাতে দেখলে স্থির থাকতে পারতেন না রাঘবেন্দ্র।
১৪২৩
হেলমেট বিলির পাশাপাশি স্কুল-কলেজের অনগ্রসর পড়ুয়াদের বিনামূল্যে বই দান করেন রাঘবেন্দ্র। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কৃষ্ণের মৃত্যুর কয়েক মাস পর আমি ওর বাড়ি গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি কৃষ্ণের বইয়ের উপর ধুলো জমছে। ওর বাবার অনুমতি নিয়ে কৃষ্ণের বইগুলো নিয়েছিলাম আমি।’’
১৫২৩
ট্রেনে ফেরার পথে পটনার এক কলেজপড়ুয়ার সঙ্গে আলাপ হয় রাঘবেন্দ্রের। বইপত্র কেনার টাকা ছিল না সেই ছাত্রের কাছে। তাই কৃষ্ণের বইগুলি ওই ছাত্রকে বিনামূল্যে দান করে দেন রাঘবেন্দ্র।
১৬২৩
সাক্ষাৎকারে রাঘবেন্দ্র জানিয়েছিলেন, ট্রেনে ওই পড়ুয়াকে বই দান করার কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর বাবা ফোনে রাঘবেন্দ্রের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ধন্যবাদ জানান। কৃষ্ণের বইগুলি পড়ে কলেজের পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন ছাত্রটি। এমনকি জেলায় সবচেয়ে বেশি নম্বরও পেয়েছেন তিনি।
১৭২৩
২০১৬ সাল পর্যন্ত চাকরির পাশাপাশি হেলমেট এবং বই দান করার পর চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন রাঘবেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি হেলমেট বিনামূল্যে বিলি করেছেন তিনি। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে চাননি তিনি। নিজের খরচেই হেলমেট কিনতেন রাঘবেন্দ্র।
১৮২৩
সাক্ষাৎকারে রাঘবেন্দ্র জানিয়েছিলেন, গ্রেটার নয়ডায় তাঁর যে বাড়ি ছিল তা ৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি। বিটকয়েনের মাধ্যমে যা উপার্জন করেছিলেন তার সমস্ত খরচ করার সিদ্ধান্ত নেন রাঘবেন্দ্র। মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রির পাশাপাশি স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন তিনি।
১৯২৩
অতিমারির সময় তিন বিঘা পৈতৃক জমিও বিক্রি করে দিয়েছিলেন রাঘবেন্দ্র। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন এখনও পর্যন্ত আড়াই কোটি টাকার বেশি খরচ করে ফেলেছেন তিনি। স্কুল-কলেজের অনগ্রসর পড়ুয়াদের সাহায্য করতে গ্রামে গ্রামে ‘বুক ব্যাঙ্ক’ও তৈরি করেন তিনি।
২০২৩
গ্রেটার নয়ডার পারি চক এলাকায় ভারতের প্রথম ‘হেলমেট ব্যাঙ্ক’ তৈরি করেন রাঘবেন্দ্র। বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে এই ব্যাঙ্ক তৈরি করেন তিনি। বাড়ি থেকে কেউ হেলমেট নিয়ে বেরোতে ভুলে গেলে তাঁরা এই ব্যাঙ্ক থেকে সাত দিনের জন্য হেলমেট ধার নিতে পারেন।
২১২৩
রাঘবেন্দ্র জানান, বাইকের নম্বর-সহ বাইক চালকের আধার কার্ডের নম্বর নিয়ে ‘হেলমেট ব্যাঙ্ক’ থেকে হেলমেট ধার দেওয়া হয় চালকদের। কিন্তু সাত দিনের মাথায় হেলমেট ফেরত না দিলে দিনপ্রতি ১০ টাকা জরিমানা নেওয়া হয়।
২২২৩
কোনও বাইকচালক যদি হেলমেট ফেরত না দেন তা হলে ২ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। সারা বছর সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ‘হেলমেট ব্যাঙ্ক’ খোলা থাকে।
২৩২৩
চার বছর বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রেও যেন হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক হয়, সেই আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাঘবেন্দ্র। তিনি জানিয়েছিলেন, গাড়ি চালানোর সময় নিজেই হেলমেট পরে থাকেন তিনি। পথ নিরাপত্তা নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে এই পন্থা অবলম্বন করেছেন রাঘবেন্দ্র।