Comparative analysis of Brazil and Argentina in last 2 games dgtl
FIFA World Cup Qatar 2022
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা: তিন শক্তি! তিন খামতি! দুই-দুই ম্যাচে যা খুঁজে পেল আনন্দবাজার অনলাইন
পর পর দুই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ইতিমধ্যেই পরের পর্বে উঠে গিয়েছে ব্রাজিল। অন্য দিকে, প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের পর মেক্সিকোর বিরুদ্ধে জয়ে ফিরেছে মেসির আর্জেন্টিনা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
ফুটবল মাঠের আয়তক্ষেত্রে দৃষ্টিনন্দন ফুল ফোটানোর সবচেয়ে বড় মালি কে? এই প্রশ্নের জবাব দিতে কাউকেই বিশেষ মাথা খাটাতে হয় না। একবাক্যে উত্তর, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। যদিও এখন দু’দলই সেই দৃষ্টিনন্দন ফুটবল থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। তবু কাতারে যখন চলছে বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞ, তখন এই দুই দলকে নিয়ে নিত্য চায়ের কাপে তুফান উঠছে। কী তাদের শক্তি, কী-ই বা দুর্বলতা— তা নিয়ে তুলনাত্মক বিশ্লেষণ করল আনন্দবাজার অনলাইন।
০২১৫
প্রথমে সার্বিয়া, তার পর সুইৎজারল্যান্ড। পর পর দুই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ইতিমধ্যেই পরের পর্বে ওঠার ছাড়পত্র পকেটে পুরে ফেলেছে ব্রাজিল। অন্য দিকে, প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের পর মেক্সিকোর বিরুদ্ধে জয়ের রাজপথে ফিরেছে মেসির আর্জেন্টিনা। কিন্তু সকলের নজর পোল্যান্ড ম্যাচের দিকে। সেই ম্যাচে জিততেই হবে নীল-সাদা জার্সিধারীদের। তবেই পরের রাউন্ডে খেলার সুযোগ পাবে মারাদোনার দেশ।
০৩১৫
ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা— দুই দেশেই রয়েছে একাধিক এমন ফুটবলার, যাঁরা একার হাতে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। কিন্তু আধুনিক ফুটবলে বার বার তেমন ঘটনা ঘটবে, তা বলা কার্যত অসম্ভব। তবুও সুযোগ পেলেই ঝলসে উঠছেন, উঠবেন মেসি, রিচার্লিসন, দি মারিয়ারা। কাতারেও তেমনই দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় তাবড় ফুটবলপ্রেমী।
০৪১৫
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, এ বারের ব্রাজিল দলের মূলধন ঠিক কী। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে বোঝা যায়, ব্রাজিল কিন্তু বরাবরই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের কাঁধে ভর করে এগিয়ে গিয়েছে কাপের দিকে। যা পূর্ণতা পেয়েছে দলগত প্রচেষ্টার মিশেলে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এ বার হলুদ জার্সির ‘রিং মাস্টারে’র নাম নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র।
০৫১৫
ব্রাজিলের এ বারের দলটিকে দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক রাশিয়ার ভুলত্রুটি এ বার আর রাখতে চাইছে না পেলের দেশ। তিনকাঠির তলায় এক জনকে রেখে দশ জনে মিলে যে গতিতে উঠছেন, সেই গতিতেই নেমে আসছেন। মূলত আক্রমণাত্মক খেলার জন্যেই ব্রাজিলের পরিচিতি। কাতারের মাঠে সেই চিরচেনা ব্রাজিলই হাজির।
০৬১৫
নেমার রিং মাস্টার বটে, কিন্তু মাস্টার রিংয়ে না থাকলেও সেই অভাব ঢেকে দিচ্ছেন বাকিরা। হাতেগরম উদাহরণ, সুইৎজ়ারল্যান্ড ম্যাচ। গোটা মাঠ জুড়ে রাজত্ব করেছে নেমারহীন ব্রাজিল। কাসেমিরোর ডান পায়ের জোরালো শট মুহূর্তে চুরমার করে দিয়েছে সুইস আল্পসের মতো দুর্ভেদ্য রক্ষণ। আবার প্রমাণিত, শুধু রক্ষণে লোক বাড়িয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবলকে ঠেকানো যায় না।
০৭১৫
তবে এই ব্রাজিলকে নিয়ে থাকছে একাধিক প্রশ্নও। লাতিন আমেরিকার দলগুলোর মধ্যে সাধারণত দেখা যায়, এক জন গোটা ম্যাচ পরিচালনা করছেন, আবার গোল করে দলকেও জেতাচ্ছেন। এ বারের ব্রাজিল দল এখনও পর্যন্ত খেলেছে যে দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের দক্ষতা এবং ক্ষমতা পরীক্ষিত নয়। পরের পর্বে আরও কঠিন লড়াই। সেখানে নেমারকে (যদি খেলেন) বোতলবন্দি করে ফেলা গেলে ব্রাজিলের ফুল ফোটানো অব্যাহত থাকবে কি? সাম্প্রতিক ইতিহাস কিন্তু কপালে ভাঁজ ফেলে দিতে পারে।
০৮১৫
মূলত আক্রমণ নির্ভর খেলা খেলতে পছন্দ করে ব্রাজিল। ইউরোপের ক্লাব ফুটবলেও যে ধারার আমদানি হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য শক্তিশালী দল ব্রাজিলকে রুখতে তাই পাল্টা আক্রমণের রাস্তাতেই হাঁটছে। সে ক্ষেত্রে ব্রাজিলের রক্ষণ ভাগের ‘টুটাফুটা’ অবস্থা প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়ার ঘোর আশঙ্কা রয়েছে।
০৯১৫
ব্রাজিল কি অতিরিক্ত নেমার নির্ভর? সুইৎজ়ারল্যান্ড ম্যাচের পর অবশ্য এই প্রশ্ন উড়িয়ে দিচ্ছেন ব্রাজিল ভক্তরা। প্রশ্নটা কিন্তু তবুও উঁকিঝুঁকি মেরে যাচ্ছে। আর এই প্রশ্ন থেকে জন্ম নিচ্ছে আশঙ্কার চোরাস্রোত। নেমারের দক্ষতার ফুটবলার কিন্তু ব্রাজিল দলে আর নেই। পরের পর্বে নেমার নির্ভরতার খেসারত দিতে হতে পারে কি ব্রাজিলকে?
১০১৫
এ বার আর্জেন্টিনা। তাদের মূলধনও সেই মেসি। দুই ম্যাচেই গোল করে তার স্বাক্ষরও রেখেছেন তর্কাতীত ভাবে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম এই সেরা বল প্লেয়ার। প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি এবং দ্বিতীয় ম্যাচে বহুদূর থেকে চকিতে গড়ানো শটে তিন কাঠি ভেদ করেছেন মেসি। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে তাই মেসির কাছ থেকে আরও এমন মুহূর্তের অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।
১১১৫
তাঁর জন্য যে জ়োনাল মার্কিংয়ের বন্দোবস্ত করে রাখবে প্রতিপক্ষ, তা মেসির কাছে অজানা নয়। ঠিক তেমনই বিপক্ষ দলেরও অজানা নয়, মার্কিংয়ের সামান্য ভুলচুকেও মেসি বল জড়িয়ে দেবেন জালে। অঙ্কের বিচারে এতে বিপক্ষ দলের সাফল্যের সম্ভাবনা যতটা, বিপক্ষ দলের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাও ঠিক ততটাই। এ ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের গলার জোর বাড়াচ্ছে তরুণ ফের্নান্দেসের অনবদ্য গোল। স্কিলের বিচারে একশোয় একশো! এমন ফুটবলার দলে থাকলে মেসিকে আটকেও লাভ হবে কি?
১২১৫
মেসি যেমন মাঝমাঠ থেকে এগোচ্ছেন, দি মারিয়া তেমনই উইং ধরে রকেট হানা চালাচ্ছেন। ‘ইউটিলিটি’ ফুটবলের অসাধারণ নজির এ বারের দি মারিয়া। যেখানে বল, সেখানেই দি মারিয়া। এই পরিস্থিতিতে মেসি পাশে পাচ্ছেন এমনই কয়েক জনকে, যাঁরা ৯০ মিনিট দৌড়চ্ছেন তো ঠিকই, পাশাপাশি মাথা খাটিয়ে সাজাচ্ছেন দলের খেলা। বিপক্ষ কোচকে আলাদা করে ছক কষতেই হবে দি মারিয়াদের নিয়েও। কারণ, এই দলটি দীর্ঘ দিন ধরে রেখেছেন কোচ লিয়ো স্কালোনি। তারই ঝলক দেখা গিয়েছে মেক্সিকো ম্যাচে। টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ডও অ্যালবিসেলেস্তের ঝুলিতে। তার ফল কাতারের মাঠে পড়ছে। অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে সৌদি ম্যাচে ভরাডুবির পর মেক্সিকো ম্যাচে কিন্তু অন্য আর্জেন্টিনাকে দেখা গিয়েছে। পোল্যান্ড ম্যাচেও তারই পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা ষোল আনা।
১৩১৫
মেসি, দি মারিয়াদের দুর্বলতা কোথায়? এক কথায় উত্তর হল, মাঝমাঠ। মধ্যিখানে আলপনা দেওয়ার মতো ফুটবলারের দেখা মেলেনি এখনও। লিসান্দ্রো মার্টিনেজ়, গুইদো রড্রিগেজ়, অ্যালেক্স ম্যাক অ্যালিস্টার বা আলেজ়ান্দ্রো গোমেজ়, লিয়ানদ্রো পারেদেসদের দক্ষতা কেমন তা ক্লাব ফুটবলে প্রমাণিত। কিন্তু নীল-সাদা জার্সিতে বিশ্বের ফুটবল মহাযজ্ঞের মঞ্চে তা এখনও প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায়।
১৪১৫
সৌদি ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দু’টি গোল বুঝিয়ে দিয়েছিল, আপাতদৃষ্টিতে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে জমাট মনে হলেও চাপের মুখে তা ভেঙে পড়তে সময় নেয় না। যদিও সেই ত্রুটি মেক্সিকো ম্যাচে দেখা যায়নি। তবুও শক্তিশালী দলের পর পর আক্রমণ ঠেকানোর মতো দক্ষতা মারাদোনার দেশের রক্ষণের আছে কি না তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। জবাব খুঁজতে দিশেহারা হতে হবে কোচ স্কালোনিকে।
১৫১৫
আর্জেন্টিনা দলের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতি বারই একটা অভিযোগ শোনা যায়, তা হল, মেসি ছাড়া সঠিক সময়ে গোল করার লোক আর কেউ নেই। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে দি মারিয়ার ব্যর্থ হওয়ার নজির একাধিক। অনেকেই কোপা ফাইনালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। কোপা জিতলেও বিশ্বকাপ অনেক কঠিন ঠাঁই। ফলে প্রশ্ন থাকছে, চাপের মুখে দল হিসাবে আর্জেন্টিনা কেমন খেলবে তা নিয়ে। আরও স্পষ্ট করে বললে, মেসি কেমন খেলবেন, তা নিয়ে। সমালোচকদের অনেকে এই প্রেক্ষিতে বলে ফেলছেন সেই কথাটি, যা মারাদোনার আমল থেকেই সত্য। আর্জেন্টিনার শক্তি যেমন মেসি, দুর্বলতার নামটিও তাই।