US President Donald Trump hates Ukraine and its President Volodymyr Zelenskyy know the reason dgtl
Donald Trump on Ukraine
বহু বছরের ‘শত্রুতা’, বিপদে জ়েলেনস্কিকে পাশে পাননি! তাই কি ইউক্রেনের নাম শুনলে জ্বলেন ট্রাম্প?
ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জ়েলেনস্কির বচসাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় গোটা বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইউক্রেনের প্রতি বিদ্বেষের নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে একাধিক কারণ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৩:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
আটলান্টিকের পারে ‘শ্বেত প্রাসাদ’-এ তুলকালাম! সংবাদমাধ্যমের সামনে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালেন দুই প্রেসিডেন্ট। ভেঙে গেল যাবতীয় শিষ্টাচারের বিধিনিষেধ। শিকেয় উঠল শান্তি সমঝোতা ও খনি চুক্তি। দুই রাষ্ট্রনেতার রকম-সকম দেখে থ’ বনে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। তাৎক্ষণিক রাগের বহিঃপ্রকাশ? না কি বিবাদের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে সম্পর্কের অনেক গভীরে? এই প্রশ্নেই এখন উত্তাল গোটা দুনিয়া।
০২২০
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। ২১ শতকের ক্যালেন্ডারে এই তারিখটা লাল অক্ষরে লেখা থাকবে কি না তা ঠিক করবেন ভবিষ্যতের কোনও ইতিহাসবিদ। কারণ, ওই দিনেই শান্তি সমঝোতা ও খনি চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুমুল বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি।
০৩২০
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ঐতিহ্যশালী ‘শ্বেত প্রাসাদ’ (পড়ুন হোয়াইট হাউস)-এর মধ্যেই রয়েছে তাঁর কার্যালয়। দফতরটি জনপ্রিয় ওভাল অফিস নামে। সেখানেই শান্তি সমঝোতা এবং খনি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য পাশাপাশি বসেছিলেন ট্রাম্প ও জ়েলেনস্কি। ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। বৈঠক চলাকালীনই মেজাজ হারান দুই প্রেসিডেন্ট। গোটাটাই ক্যামেরাবন্দি করেন সেখানে হাজির থাকা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
০৪২০
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ব্যক্তিগত ভাবে ইউক্রেনকে অত্যন্ত অপছন্দ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আরও স্পষ্ট করে বললে, জ়েলেনস্কিকে এক রকম ঘৃণাই করেন তিনি। প্রথম দিকে কিন্তু দু’জনের সম্পর্ক এমন ছিল না। কিন্তু সময়ের চাকা গড়াতেই বদলে যায় গোটা পরিস্থিতি। ট্রাম্পের ইউক্রেন বা জ়েলেনস্কি-বিদ্বেষের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ।
০৫২০
বিরোধের সূত্রপাত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। সূত্রের খবর, ওই সময়ে জ়েলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। পরের বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলে বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতার বিরুদ্ধে ওঠে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ। এর জন্য তিনি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে কাজে লাগিয়েছেন বলে ব্যাপক প্রচার শুরু করে দেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা। ফলে ভোটে হার হয় ট্রাম্পের। গোটা পর্বে নির্বাক ছিলেন জ়েলেনস্কি।
০৬২০
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। সে বারই প্রথম ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব। যদিও তাতে তেমন লাভ হয়নি। প্রেসিডেন্ট হিসাবে চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেন তিনি। পরবর্তী কালে তদন্তে জানা যায়, ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরিকল্পনা ছিল কিভের মস্তিষ্কপ্রসূত। ফলে ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের ঘৃণা বাড়তে শুরু করে।
০৭২০
২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারে দায়িত্বে ছিলেন পল মানাফোর্ট। একটা সময়ে ইউক্রেনের সাবেক রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের হয়ে কাজ করতেন তিনি। কিভকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দূরে রেখেছিলেন তিনি। মস্কোর প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্যের জেরে ভিক্টরের উপর আমজনতার ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে গণঅভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশে ছেড়ে চম্পট দেন তিনি।
০৮২০
ইয়ানুকোভিচ পালিয়ে যেতেই তাঁর দলের সদর দফতরে অগ্নিসংযোগ করে উন্মত্ত জনতা। সেখান থেকে হাতে লেখা ‘ব্ল্যাক লেজ়ার’ নামের একটি বই উদ্ধার হয়। বইটিতে একাধিক বার মানাফোর্টের নাম লেখা ছিল। শুধু তা-ই নয়, তাঁর নামের পাশে অন্তত ২২ বার ১.২৭ কোটি ডলার নিয়েছেন বলে উল্লেখ ছিল। ওই টাকা ট্রাম্পের প্রচারে খরচ করার অভিযোগ ওঠে। যদিও গোটা ঘটনাটি আগাগোড়া অস্বীকার করেন মানাফোর্ট।
০৯২০
২০১৬ সালের অগস্টে এই খবর ফলাও করে প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তখন আর বাকি মাত্র তিন মাস। সে বছর ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের স্ত্রী তথা ডেমোক্র্যাটিক নেত্রী হিলারি। এই ঘটনায় তিনিও রিপাবলিকান নেতাকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। ভোটের পর প্রেসিডেন্ট হলেও রাশিয়ার থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তাড়া করে বেড়িয়েছে ট্রাম্পকে। আর এর জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করেন তিনি।
১০২০
২০১৭ সালে অর্থপাচার এবং কর ফাঁকি-সহ মোট ১২টি মামলায় অভিযুক্ত হন মানাফোর্ট। এগুলির সঙ্গে অবশ্য ‘ব্ল্যাক লেজ়ার’-এর কোনও সম্পর্ক ছিল না। তবুও ‘পাপের ভাগীদার’-এর মতো কটাক্ষ হজম করতে হয় ট্রাম্পকে। গত বছরের মার্কিন নির্বাচনে ফের নাক গলানোর অভিযোগ ওঠে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। এতে আরও চটে যান যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট।
১১২০
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ছিলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাটিক দলের নেত্রী কমলা হ্যারিস। জ়েলেনস্কি তাঁর হয়ে প্রচার পর্যন্ত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের। ইউক্রেন অবশ্য এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে।
১২২০
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, গত বছরের নির্বাচনে জ়েলেনস্কির কাছে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করা ছাড়া দ্বিতীয় রাস্তা খোলা ছিল না। কারণ, ভোটের প্রচারেই ট্রাম্প স্পষ্ট করে দেন, ক্ষমতায় ফিরলে ইউক্রেনকে যুদ্ধের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার দেওয়া বন্ধ করবেন তিনি। ফলে আতঙ্কিত ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট কমলাকে জেতাতে মরিয়া ছিল।
১৩২০
জ়েলেনস্কির উপর ট্রাম্পের রাগের সর্বশেষ কারণ হল আর্থিক কেলেঙ্কারি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, গত তিন বছরে ইউক্রেনকে ৩০ হাজার কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। কিন্তু এই অঙ্ক মানতে নারাজ কিভ। জ়েলেনস্কির দফতর সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আমেরিকার দেওয়া ১০ হাজার কোটি ডলারের কোনও হিসাব জানা নেই তাদের। তাঁর ওই প্রতিক্রিয়ার পর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন ট্রাম্প।
১৪২০
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কিভের প্রতি মনোভাব নিয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন ইউক্রেনীয় আমেরিকান শিল্পপতি লেভ পার্নাস। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রাম্প ইউক্রেনকে ঘৃণা করেন। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা মনে করেন কিভের জন্যেই যুক্তরাষ্ট্রের যাবতীয় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই তাঁর থেকে জ়েলেনস্কির কিছু আশা না করাই ভাল।’’
১৫২০
ট্রাম্পের শরীরী ভাষায় ইউক্রেন-বিদ্বেষের বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময়ে জ়েলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচারী’ এবং ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। ২০২৪ সালে ইউক্রেনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও যুদ্ধের কারণে সেটা হয়নি। ফলে প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে রয়ে গিয়েছেন জ়েলেনস্কি। এটা মানতে নারাজ ট্রাম্প।
১৬২০
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, জ়েলেনস্কিকে দ্রুত ইউক্রেনের কুর্সি থেকে সরাতে চাইছেন ট্রাম্প। পূর্ব ইউরোপে শান্তির জন্য এটা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা ‘সিআইএ’কে ট্রাম্প যাবতীয় ছাড়পত্র দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
১৭২০
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ চালাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্ষমতায় এসেই তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগী হন ট্রাম্প। এর জন্য শান্তি সমঝোতায় রাজি হতে জ়েলেনস্কিকে ওয়াশিংটনে ডাকেন তিনি। পাশাপাশি ইউক্রেনের সঙ্গে খনি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল তাঁর।
১৮২০
কিন্তু বৈঠককে শান্তি সমঝোতার ব্যাপারে অনড় মনোভাব দেখান জ়েলেনস্কি। আর তখনই ক্ষিপ্ত ট্রাম্প বলে ওঠেন, ‘‘আপনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলতে বসেছেন। আর তাই সমঝোতার পথে হাঁটতে চাইছেন না।’’
১৯২০
ওই সময়ে চুপ করে বসে না থেকে পাল্টা গলা চড়ান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও। তিনি বলেন, ‘‘আপনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিথ্যারই পুনরাবৃত্তি করছেন। রাশিয়াকে সুযোগ করে দিচ্ছেন। মস্কো আমাদের জায়গা চুরি করছে, সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করছে, শিশুদের অপহরণ পর্যন্ত করছে।’’ এর পরই বৈঠক ভেস্তে যায়।
২০২০
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ট্রাম্পের সঙ্গে মুখে মুখে তর্ক করে ভুলই করেছেন জ়েলেনস্কি। কারণ মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট কোনও কিছু ভুলে যান না এবং কাউকে সহজে ক্ষমাও করেন না। ইতিমধ্যেই কিভকে পাঠানো সাহায্য বন্ধ করেছেন তিনি। ফলে ভবিষ্যতে মস্কোর সঙ্গে লড়াইয়ে এঁটে ওঠা জ়েলেনস্কির পক্ষে যে কঠিন হবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়।।