Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Chinese

Chinese Kali Temple: কলকাতার চিনা কালীবাড়িতে দেবীর ভোগ হিসেবে পাতে পড়ে চাউমিন

১৯৬২ সালের ইন্দো-চিন যুদ্ধের পরে কর্মসংস্থানের খোঁজে এ দেশে চলে আসেন বেশ কয়েক হাজার চিনা মানুষ। সেই সময় থেকে আজও কলকাতায় রয়ে গিয়েছেন তাঁরা।

শান্তনু চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৩৮
Share: Save:
০১ ১১
১৯৬২ সালের ইন্দো-চিন যুদ্ধের পরে কর্মসংস্থানের খোঁজে এ দেশে চলে আসেন বেশ কয়েক হাজার চিনা মানুষ। সেই সময় থেকে আজও কলকাতায় রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কলকাতার ভিতরে তৈরি হয়েছে এক টুকরো চিন! এখনও শহরের বেশ কিছু এলাকা এমন ভাবে সাজানো, দেখলে বোঝা যায় না কোন দেশ।

১৯৬২ সালের ইন্দো-চিন যুদ্ধের পরে কর্মসংস্থানের খোঁজে এ দেশে চলে আসেন বেশ কয়েক হাজার চিনা মানুষ। সেই সময় থেকে আজও কলকাতায় রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কলকাতার ভিতরে তৈরি হয়েছে এক টুকরো চিন! এখনও শহরের বেশ কিছু এলাকা এমন ভাবে সাজানো, দেখলে বোঝা যায় না কোন দেশ।

০২ ১১
অছিপুর। বজবজের উপকণ্ঠের এই এলাকার নাম এক চিনা ব্যবসায়ীর নামে। টং আছু। ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে তাঁকে বজবজের ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে বার্ষিক ৪৫ টাকা চুক্তিতে প্রায় সাড়ে ছ’শো বিঘা জমি ভাড়া দেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।টং আছুর জহুরির চোখ। গঙ্গার ধারের ঊর্বর জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। গড়ে তোলেন চিনির কারখানা। এরপর ১১০ জন চিনা শ্রমিকও আসেন। গড়ে ওঠে চিনা কলোনি। সেই ব্যবসায়ীর নাম থেকেই অছিপুরের নামকরণ।

অছিপুর। বজবজের উপকণ্ঠের এই এলাকার নাম এক চিনা ব্যবসায়ীর নামে। টং আছু। ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে তাঁকে বজবজের ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে বার্ষিক ৪৫ টাকা চুক্তিতে প্রায় সাড়ে ছ’শো বিঘা জমি ভাড়া দেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।টং আছুর জহুরির চোখ। গঙ্গার ধারের ঊর্বর জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। গড়ে তোলেন চিনির কারখানা। এরপর ১১০ জন চিনা শ্রমিকও আসেন। গড়ে ওঠে চিনা কলোনি। সেই ব্যবসায়ীর নাম থেকেই অছিপুরের নামকরণ।

০৩ ১১
বলা হয় টং আছু প্রথম চিনা নাগরিক যিনি বাংলায় বসতি স্থাপন করেছেন। আজও অছিপুরে রয়েছে তাঁর সমাধিস্থল। কলকাতার চিনাদের কাছে সেই স্থান তাঁদের তীর্থক্ষেত্রের সমান। তাঁরা সেখানে গিয়ে পুজো দেন আর আছুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।টং আছুর মৃত্যুর পর তাঁর শ্রমিকরা অধিকাংশই চলে আসেন কলকাতায়।

বলা হয় টং আছু প্রথম চিনা নাগরিক যিনি বাংলায় বসতি স্থাপন করেছেন। আজও অছিপুরে রয়েছে তাঁর সমাধিস্থল। কলকাতার চিনাদের কাছে সেই স্থান তাঁদের তীর্থক্ষেত্রের সমান। তাঁরা সেখানে গিয়ে পুজো দেন আর আছুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।টং আছুর মৃত্যুর পর তাঁর শ্রমিকরা অধিকাংশই চলে আসেন কলকাতায়।

০৪ ১১
১৭৭৮-এ ওয়াং চাউ আসেন কলকাতায়। তিনিই ছিলেন কলকাতায় আসা প্রথম চাইনিজ। পরবর্তীকালে কলকাতার ট্যাংরায় তাদের ঘাঁটি জমিয়ে বসে বেশ কিছু চিনা পরিবার। তারা মূলত চিনের ‘হাক্কা’ প্রদেশের প্রজাতি। চামড়ার ব্যবসা আর রেস্তরাঁর উপরেই নির্ভর ছিল তাদের জীবিকা। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ট্যাংরা এলাকায় চামড়ার কারখানা চালানো বেআইনি ঘোষণা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাগুলি। আবার আর্থিক সঙ্কটে পরে চিনা পরিবারগুলি। আবার দেশ ছাড়েন চিনারা। আজ কলকাতায় চিনাদের সংখ্যা প্রায় দু’হাজারে এসে ঠেকেছে।

১৭৭৮-এ ওয়াং চাউ আসেন কলকাতায়। তিনিই ছিলেন কলকাতায় আসা প্রথম চাইনিজ। পরবর্তীকালে কলকাতার ট্যাংরায় তাদের ঘাঁটি জমিয়ে বসে বেশ কিছু চিনা পরিবার। তারা মূলত চিনের ‘হাক্কা’ প্রদেশের প্রজাতি। চামড়ার ব্যবসা আর রেস্তরাঁর উপরেই নির্ভর ছিল তাদের জীবিকা। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ট্যাংরা এলাকায় চামড়ার কারখানা চালানো বেআইনি ঘোষণা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাগুলি। আবার আর্থিক সঙ্কটে পরে চিনা পরিবারগুলি। আবার দেশ ছাড়েন চিনারা। আজ কলকাতায় চিনাদের সংখ্যা প্রায় দু’হাজারে এসে ঠেকেছে।

০৫ ১১
কিছু চিনা পরিবার আবার তাদের বসতি গড়ে তুলেছে পোদ্দার কোর্টের কাছে টেরিটি বাজার এলাকায়। এই এলাকার চিনারা আদতে ছিলেন চিনের ‘ক্যানটন’ প্রদেশের বাসিন্দা। চিনা শাকসব্জি, সস, এ ছাড়া অন্যান্য চিনা খাবারের স্টল খুলে বিক্রি করতে শুরু করেন তাঁরা।

কিছু চিনা পরিবার আবার তাদের বসতি গড়ে তুলেছে পোদ্দার কোর্টের কাছে টেরিটি বাজার এলাকায়। এই এলাকার চিনারা আদতে ছিলেন চিনের ‘ক্যানটন’ প্রদেশের বাসিন্দা। চিনা শাকসব্জি, সস, এ ছাড়া অন্যান্য চিনা খাবারের স্টল খুলে বিক্রি করতে শুরু করেন তাঁরা।

০৬ ১১
কলকাতার খাস চিনা মহল্লায় টেরিটি বাজার এলাকায় এক্কেবারে সাত সকালে পাওয়া যায় চিনা খাবারের নানান পসরা। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মেলে জিভে জল আনা নানান লোভনীয় খাবার। বাও, মোমো, ওয়ান্টন, খোয়াই চই প্যান, নুডল স্যুপ, চিকেন ও পর্ক সসেজ। কলকাতাবাসীর কাছে এই ‘চিনা ব্রেকফাস্ট’ কিন্তু বেশ প্রিয়।

কলকাতার খাস চিনা মহল্লায় টেরিটি বাজার এলাকায় এক্কেবারে সাত সকালে পাওয়া যায় চিনা খাবারের নানান পসরা। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মেলে জিভে জল আনা নানান লোভনীয় খাবার। বাও, মোমো, ওয়ান্টন, খোয়াই চই প্যান, নুডল স্যুপ, চিকেন ও পর্ক সসেজ। কলকাতাবাসীর কাছে এই ‘চিনা ব্রেকফাস্ট’ কিন্তু বেশ প্রিয়।

০৭ ১১
আমরা যেমনভাবে নববর্ষ পালন করে থাকি ঠিক সে ভাবেই চিনারাও তাঁদের নববর্ষ পালন করে থাকেন। নতুন জামাকাপড় পরে চার্চে যান, মোমবাতি জ্বালান।ঘরে তৈরি চিনা খাবার এবং বাঁশপাতায় জড়ানো চং, স্ট্রিট আর্ট, গান, ক্যালিগ্রাফি, হস্তশিল্প দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। নববর্ষের ঠিক আগের রাত থেকেই প্রস্তুতি চলে। টেরেটি বাজারে মঞ্চ করে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আমরা যেমনভাবে নববর্ষ পালন করে থাকি ঠিক সে ভাবেই চিনারাও তাঁদের নববর্ষ পালন করে থাকেন। নতুন জামাকাপড় পরে চার্চে যান, মোমবাতি জ্বালান।ঘরে তৈরি চিনা খাবার এবং বাঁশপাতায় জড়ানো চং, স্ট্রিট আর্ট, গান, ক্যালিগ্রাফি, হস্তশিল্প দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। নববর্ষের ঠিক আগের রাত থেকেই প্রস্তুতি চলে। টেরেটি বাজারে মঞ্চ করে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

০৮ ১১
মুলত, ড্রাগন ডান্স, লায়ন ডান্স আর মার্শাল আর্টের নানা কসরত প্রদর্শন করা হয়।টেরিটি বাজার সংলগ্ন ছাতাওয়ালা গলিখুঁজিতে বেশকিছু চিনা ক্লাবে চলে মজোং খেলার আসর বসে। রয়েছে মন্দির। মন্দিরে রয়েছে নানান আরাধ্য দেবতা। সি ইপ, টুং নাম, চং হে ডং, কোয়ান টি ও দেবী কোয়ানের মূর্তি।

মুলত, ড্রাগন ডান্স, লায়ন ডান্স আর মার্শাল আর্টের নানা কসরত প্রদর্শন করা হয়।টেরিটি বাজার সংলগ্ন ছাতাওয়ালা গলিখুঁজিতে বেশকিছু চিনা ক্লাবে চলে মজোং খেলার আসর বসে। রয়েছে মন্দির। মন্দিরে রয়েছে নানান আরাধ্য দেবতা। সি ইপ, টুং নাম, চং হে ডং, কোয়ান টি ও দেবী কোয়ানের মূর্তি।

০৯ ১১
ট্যাংরা এলাকাতেও একই ছবি ধরা পড়বে। চিনেপাড়ার পানশালা, কারখানা, রেস্তরাঁগুলি সেজে ওঠে ফানুসের আকারের আলোদানিতে।এখানকার চিনা কালীবাড়িতে চলে নানান উপাচার। দেবীর ভোগ হিসেবে চাউমিন দেওয়া হয়।

ট্যাংরা এলাকাতেও একই ছবি ধরা পড়বে। চিনেপাড়ার পানশালা, কারখানা, রেস্তরাঁগুলি সেজে ওঠে ফানুসের আকারের আলোদানিতে।এখানকার চিনা কালীবাড়িতে চলে নানান উপাচার। দেবীর ভোগ হিসেবে চাউমিন দেওয়া হয়।

১০ ১১
বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ ঐতিহ্যবাহী নাচ ও বর্ণিল মিছিল। বাদ্যের তালে, নাচেগানে মুখরিত থাকে চারপাশ।ঐতিহ্যবাহী নাচে ড্রাগন ও সিংহ বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। ড্রাম আর বিশাল খঞ্জনি হাতে বাদ্যযন্ত্রীদের তালে তালে নেচে ওঠে বর্ণাঢ্য ড্রাগন অথবা সিংহ। বিশালাকৃতির ড্রাগনকে নিয়ে অনেক মানুষকে একসঙ্গে নাচতে দেখা যায়। যার ড্রাগন যত বড় তাদের তত কদর। তাদের পরনে থাকে বিশেষ পোশাক।সিংহ নাচে সাধারণত থাকে দু’জন। বিশেষ পোশাক পরে তারা শারীরিক কসরত করতে থাকে।শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই নাচে অংশ নেন ও আনন্দে মেতে ওঠেন। এভাবেই কলকাতার চিনেপাড়ার বাসিন্দারা তাঁদের নববর্ষের আনন্দকে ভাগ করে নেন কলকাতার সঙ্গে।

বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ ঐতিহ্যবাহী নাচ ও বর্ণিল মিছিল। বাদ্যের তালে, নাচেগানে মুখরিত থাকে চারপাশ।ঐতিহ্যবাহী নাচে ড্রাগন ও সিংহ বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। ড্রাম আর বিশাল খঞ্জনি হাতে বাদ্যযন্ত্রীদের তালে তালে নেচে ওঠে বর্ণাঢ্য ড্রাগন অথবা সিংহ। বিশালাকৃতির ড্রাগনকে নিয়ে অনেক মানুষকে একসঙ্গে নাচতে দেখা যায়। যার ড্রাগন যত বড় তাদের তত কদর। তাদের পরনে থাকে বিশেষ পোশাক।সিংহ নাচে সাধারণত থাকে দু’জন। বিশেষ পোশাক পরে তারা শারীরিক কসরত করতে থাকে।শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই নাচে অংশ নেন ও আনন্দে মেতে ওঠেন। এভাবেই কলকাতার চিনেপাড়ার বাসিন্দারা তাঁদের নববর্ষের আনন্দকে ভাগ করে নেন কলকাতার সঙ্গে।

১১ ১১
কলকাতার ট্যাংরা এলাকায় রয়েছে চিনা রেস্তরাঁগুলির পুরনো ঠেক। ভারতীয়রা চাইনিজ খাবার বলতে ভারতীয় মশলা মেশানো ইন্দো-চাইনিজকেই বোঝে। আদতে চিনারা কিন্তু মশলাদার খাবার একেবারেই খান না। অথেন্টিক চিনা খাবারে সেদ্ধ চিকেন, স্যুপ, নুডলসকেই গণ্য করা হয়। ট্যাংরার বেশ কিছু রেস্তরাঁ আজও পরিবেশন করে অথেন্টিক চিনা খাবার। (ছবি: লেখক ও শাটারস্টক)

কলকাতার ট্যাংরা এলাকায় রয়েছে চিনা রেস্তরাঁগুলির পুরনো ঠেক। ভারতীয়রা চাইনিজ খাবার বলতে ভারতীয় মশলা মেশানো ইন্দো-চাইনিজকেই বোঝে। আদতে চিনারা কিন্তু মশলাদার খাবার একেবারেই খান না। অথেন্টিক চিনা খাবারে সেদ্ধ চিকেন, স্যুপ, নুডলসকেই গণ্য করা হয়। ট্যাংরার বেশ কিছু রেস্তরাঁ আজও পরিবেশন করে অথেন্টিক চিনা খাবার। (ছবি: লেখক ও শাটারস্টক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy