Ancient Roman ruins at Pompeii have been fitted with 'invisible' solar panels dgtl
Invisible Solar Panels
লাভায় ঢাকা প্রাচীন শহরের ধ্বংসস্তূপে ‘অদৃশ্য’ সৌরপ্যানেল! বিশ্বকে পথ দেখাবে রহস্যময় শহর?
পম্পেইয়ের নানা জায়গায় বসানো হচ্ছে অদৃশ্য সৌরপ্যানেল। যাতে পরিবেশ বাঁচানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের খরচেও অনেকটা রাশ টানা যায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
রোমান সভ্যতার চিহ্ন বহনকারী প্রাচীন শহর পম্পেইয়ের নানা জায়গায় বসানো হচ্ছে অদৃশ্য সৌরপ্যানেল। যাতে পরিবেশ বাঁচানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের খরচেও রাশ টানা যায়। ইতিমধ্যেই পম্পেই শহরের ২টি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে এ কাজ শেষ হয়েছে।
০২২০
ইটালির নেপলসের দক্ষিণ-পূর্বে কাম্পানিয়া অঞ্চলে পম্পেইয়ের নানা নির্দশন ছড়িয়ে রয়েছে। তার কোনওটির ধ্বংসাবশেষে আবার গত কুড়ি বছর ধরে সংস্কারকাজ চলছে। এমনই একটি হল হাউস অফ ভেট্টি।
০৩২০
প্রাচীন রোমে পম্পেইয়ের অভিজাতদের বাস ছিল এই হাউস অফ ভেট্টিতে। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৭৯-তে মাউন্ট ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দু’দশক ধরে এর ধ্বংসাবশেষে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে।
০৪২০
অভিজাতদের ওই শহর ছাড়াও সংস্কার করা হয়েছে হাউস অফ সিরিয়ার নামে একটি জায়গায়। প্রাচীন রোমে তা স্ন্যাক্স বার হিসাবে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি এই দু’জায়গাই পর্যটকদের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়েছে।
০৫২০
পম্পেইয়ের প্রত্নতত্ত্বিক পার্কের এই দু’জায়গায় অদৃশ্য সৌরপ্যানেল লাগানো হয়েছে। সম্প্রতি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন পার্কের ডিরেক্টর গ্যাব্রিয়েল জ়াকট্রিয়েজেল। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে আধুনিক প্যানেলগুলি যাতে মানানসই হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে।
০৬২০
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, ‘‘ওই প্যানেলগুলি দেখতে একেবারে টেরাকোটা টাইল্সের মতো, ঠিক যেমনটা রোমানরা ব্যবহার করতেন। তবে এগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।’’ ধ্বংসাবশেষের বহিরঙ্গ আলোকোজ্জ্বল করার জন্য এগুলি কাজে লাগানো হয়েছে।
০৭২০
গ্যাব্রিয়েলের দাবি, সৌরপ্যানেলগুলি বসানো হলেও পম্পেইয়ের মতো প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে সেগুলির সাযুজ্য নষ্ট করা হয়নি। বরং পটভূমির সঙ্গে মিলিয়ে এর নকশা বাছাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এমন ভাবে এর নকশা করা হয়েছে যাতে দর্শকের কাছে তা অদৃশ্য থাকে।
০৮২০
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পম্পেইয়ের ধ্বংসাবশেষ দেখতে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লক্ষ পর্যটক ভিড় করেন। এককালে যা আগ্নেয়গিরির লাভায় চাপা পড়ে গিয়েছিল।
০৯২০
প্রাচীন এই শহরটি আলোয় ভরিয়ে দিতে বিদ্যুতের খরচ কম হত না। ফলে অপ্রচলিত পদ্ধতিতে এখানে আলো জ্বালানোর পথ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রচলিত উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গেলে আরও এক প্রস্ত খোঁড়াখুঁড়িও প্রয়োজন হত, যাতে প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলগুলির অমূল্য সম্পদ নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।
১০২০
গ্যাব্রিয়েল বলেন, ‘‘পম্পেইয়ের কয়েকটি জায়গায় সংস্কারের কাজের পর পুরোপুরি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এ সব জায়গায় সর্বত্র বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু খুঁটি পুঁতে, তার জড়িয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে গিয়ে এই জায়গাগুলির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেত। তা ছাড়া, আমরা লক্ষ লক্ষ ইউরো বাঁচাতে চেয়েছি।’’
১১২০
গ্যাব্রিয়েলের মতে, নয়া প্রযুক্তিতে প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলিতে প্রভূত পরিমাণ বিদ্যুতের বিল বাঁচানো যাবে। সেই সঙ্গে এর আলোর সাহায্যে সাইটগুলিকে নয়া রূপে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা হবে।
১২২০
সৌরপ্যানেলগুলির নকশা তৈরি করেছে ‘ডায়কুয়া’ নামে ইটালির এক সংস্থা। এগুলিকে ‘অদৃশ্য’ রাখার জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাকে চিরাচরিত ‘পিভি টাইল্স’ বলা হচ্ছে।
১৩২০
‘ডায়কুয়া’র মালিকানা রয়েছে এলিসাবেতা কোয়াকলিয়াতোর পরিবারের কাছে। তিনি জানিয়েছেন, সৌরপ্যানেলগুলি এমন ভাবে নকশা করা যাতে সেগুলি ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ইটকাঠ বা কংক্রিটের তৈরি বলে মনে হয়।
১৪২০
সৌরপ্যানেলগুলি অদৃশ্য কেন? আসলে এগুলিকে প্রয়োজনে দেওয়ালে, মেঝে অথবা ছাদে ‘লুকিয়ে’ রাখা যায়। অর্থাৎ সকলের নজরের সামনে থাকলেও তা দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
১৫২০
সংবাদমাধ্যমে এলিসাবেতা বলেন, ‘‘আমাদের এই উদ্যোগ প্রতীকী নয়। বরং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই আমরা।’’
১৬২০
কী সেই বার্তা? এলিসাবেতা বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অন্য ভাবেও রক্ষা করা যায়। এবং তা করা যায় পরিবেশের ক্ষতি না করেই।’’
১৭২০
প্রাচীন রোমের পম্পেই শহর ছাড়াও ইটালির অন্যত্র এই পদ্ধতিতে বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
১৮২০
ভিকোফোর্তে কমিউন নামে পঞ্চদশ শতকের একটি গির্জায় ইতিমধ্যেই এ ধরনের সৌরপ্যানেল বসানো হয়েছে। রোমের শিল্প সংগ্রহশালা ম্যাক্সিতেও তা রয়েছে।
১৯২০
ইটালির মতো বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও এ ধরনের প্যানেল বসানো হবে। পর্তুগালের ইভোরায় বিভিন্ন সরকারি ভবনে অথবা ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর স্প্লিটে এই প্যানেল বসবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
২০২০
পম্পেইয়ে এ ধরনের প্যানেল বসানোয় একটি নতুন দিক খুলে গিয়েছে। এলিসাবেতা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সমস্ত ধরনের সংস্কারের কাজে এই সৌরপ্যানেল যাতে কাজে লাগানো যায়, সে চেষ্টাই করবেন তাঁরা।