অসীম (৩১) • বাবা (৬১) • মা (৫৫)
ছোট ব্যবসায়ী • বাবা-মায়ের সঙ্গে জেলা শহরে থাকেন নিজেদের বাড়িতে •
জানুয়ারিতেই বিয়ে • আগামী দিনে সংসার খরচ চালানো নিয়ে চিন্তিত •
পরে গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে • করে রাখতে চান ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও
একটা প্রবাদ আছে ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’। অর্থাত্ দেরিতে হলেও, যে- কোনও কাজ শুরু করে দেওয়া ভাল। সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে এই বাক্য।
অসীমের প্রোফাইল দেখে এই কথাটাই প্রথম মনে এল। বয়স ৩১ বছর। সামনে বিয়ে। কিন্তু সঞ্চয় নামমাত্র। তিনি নিজেও অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। যে-কারণে লগ্নির পরিকল্পনা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। আজ তাঁকে সেই লক্ষ্যপূরণের দিকেই কিছুটা এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।
অসীমের বিয়ের সব খরচ বাবা দেবেন। ফলে এ জন্য তাঁকে চিন্তা করতে হচ্ছে না। তিনি নিজে কিছু প্রকল্পে লগ্নির কথা ভেবেছেন। সেগুলি কতটা সঠিক এবং কোন প্রকল্পে লগ্নি করলে ভাল হয়, তা জানতে চেয়েছেন। চলুন দেখে নিই সেই ভাবনা কতটা সাহায্য করতে পারবে তাঁকে।
টার্ম পলিসি
• অসীম এখন থেকেই টার্ম পলিসি করার কথা ভাবছেন। তিনি ৩০ বছরের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার টার্ম পলিসি নিতে চান। সঙ্গে চাইছেন আরও ৫০ লক্ষের রাইডার। অর্থাত্ মোট এক কোটির বিমা। এতে হয়তো প্রাথমিক ভাবে প্রিমিয়াম সামান্য বেশি পড়বে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা সুবিধাজনক।
• অনেক সময়ই বিমাকারী মনে করেন কোনও সংস্থায় এত বেশি অঙ্কের পলিসি করা ঝুঁকির হবে। সে ক্ষেত্রে চাইলে দু’টি আলাদা সংস্থায় ২৫ লক্ষ টাকা করে পলিসি করার কথা ভাবতে পারেন। তবে প্রথমেই সংস্থার বিমার টাকা ফেরতের ইতিহাস দেখে নিন।
• বিমা কেনার সময় শারীরিক কোনও অসুস্থতা থাকলে, তা জানাতে ভুলবেন না। তা না হলে পরে পরিবারকে টাকা পেতে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে।
অন্যান্য জীবনবিমা
আপাতত বাকি দু’টি এলআইসি প্রকল্প চালিয়ে যান। এগুলি থেকে হয়তো মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় কম রিটার্ন মিলবে, কিন্তু এখন পলিসি দু’টি বন্ধ করতে গেলে বেশি ক্ষতি হবে।
রিলায়্যান্স লাইফের পলিসিটিও এনডাওমেন্ট প্রকল্প। এই ধরনের প্রকল্প শুনতে ভাল। কিন্তু শুধু এতে চলবে না। দেখতে হবে আর্থিক পরিকল্পনার সঙ্গে এই প্রকল্প আদৌ খাপ খায় কি না। আসুন দেখি কী ভাবে তা বিচার করবেন।
এনডাওমেন্ট প্রকল্পের বিমামূল্য
সাধারণ ভাবে এই প্রকল্পগুলিতে যে- বার্ষিক প্রিমিয়াম দেওয়া হয়, কভারেজ হয় তার ৫-২০ গুণ। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই সর্বাধিক কভারেজ মেলে না। অন্য দিকে, টার্ম পলিসি-র ক্ষেত্রে কভারেজ মেলে বার্ষিক প্রিমিয়ামের ৫০০ গুণ পর্যন্ত।
অসুবিধা কোথায়
এনডাওমেন্ট পলিসিগুলি যেহেতু মূলত ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে লগ্নি করে, সে জন্য এগুলির সুরক্ষা বেশি। কিন্তু একই সঙ্গে এই প্রকল্পের রিটার্নও তুলনায় কম। দেখা যায়, এই পলিসিগুলি থেকে ৬-৭% রিটার্ন মেলে। এজেন্টদের কমিশন এবং অন্যান্য খরচ বাদ দিলে আসলে বিমাকারীর হাতে আসে মাত্র ৫%। অর্থাত্ লগ্নি হিসেবে এই প্রকল্পগুলি তহবিল বাড়াতে খুব একটা সাহায্য তো করেই না, বরং রিটার্ন মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় অনেকটাই কম।
কী করণীয়?
বিমা এবং সঞ্চয়কে এক করে দেখা উচিত নয়। অসীম রিলায়্যান্সের প্রকল্পে একটি মাত্র প্রিমিয়াম দিয়েছেন। আরও চারটি বাকি। সাধারণত এই ধরনের প্রকল্প বন্ধ করে টাকা পেতে হলে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রিমিয়াম দিতেই হয়। যে- কারণে এখন প্রকল্পটি বন্ধ করলে সারেন্ডার ভ্যালু হয়তো আদৌ পাবেন না। কিন্তু তা-ও বলব এই প্রকল্পটি বন্ধ করুন। বরং সেই টাকা আপনি শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে লাগাতে পারেন।
পিপিএফ এবং রেকারিং
যে-কোনও আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রেই রেকারিং এবং পিপিএফের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
• পিপিএফ হল দীর্ঘমেয়াদি এবং করছাড় যুক্ত প্রকল্প। এবং ওই টাকা কাজে লাগে অবসরের সময়।
• আর রেকারিং স্বল্পমেয়াদে কাজে লাগে। যা এক দিকে হঠাত্ করে আসা প্রয়োজনের টাকা জোগায়। আবার অন্য দিকে এক বা দু’বছরের জন্য সঞ্চয়েরও অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তবে এতে কর দিতে হয়।
অসীম ইতিমধ্যেই একটি রেকারিং শুরু করেছেন। আর একটি পিপিএফ চালু করতে চান। অবশ্যই করুন।
মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি
অসীম মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি পদ্ধতিতে মাসে ২,০০০-৩,০০০ টাকা রাখার কথা ভাবছেন। এতে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে—
• এসআইপি করতে হবে দীর্ঘমেয়াদের জন্য। অনেক সময়েই সেই লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামলেও, হঠাত্ করে আসা প্রয়োজনে আমরা এসআইপি-র টাকা ভাঙিয়ে নিই। এটি ঠিক নয়।
• অসীমকে বলব ভাবনা-চিন্তা করে প্রকল্প বাছতে। ভাল হয় যদি দু’টি আলাদা শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে টাকা ছড়িয়ে দিতে পারেন। একটি লার্জ ক্যাপ, আর অন্যটি মিডক্যাপ।
স্বাস্থ্যবিমার পরিকল্পনা
আমার মতে, অসীমের উচিত এখনই কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকার একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা কেনা। যাতে তিনি তাঁর বাবা-মাকেও রাখুন। বিয়ের পরে কিন্তু স্ত্রীকেও এর আওতায় অবশ্যই আনতে হবে।
বাড়ি ও গাড়ি কেনার লক্ষ্যে
• অসীম বাবা-মায়ের সুবিধা ভেবে গাড়ি কিনতে আগ্রহী। তবে এখন তাঁর হাতে সেই টাকা নেই। তার উপর সামনেই বিয়ে। ফলে আপাতত গাড়ি কেনার কথা না-ভাবাই ভাল।
• বাড়ির জন্যও এখন ডাউনপেমেন্টের টাকা জোগাড় করা সম্ভব হবে না তাঁর পক্ষে। ফলে এই ইচ্ছাও আপাতত মুলতুবি থাক। তবে হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। আগামী দিনে আয় বাড়লে এই দুই লক্ষ্যেই সঞ্চয় শুরু করতে পারবেন তিনি। ফলে তখন সেই কাজে হাত দিন।
অসীমের মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে পারেন আপনিও। নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানিয়ে চিঠি লিখুন
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১.
ই-মেল: bishoy@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy