Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Presents

কুবের উবাচ

শৈবাল বিশ্বাসচাকরির পরে নিশ্চিন্ত অবসর কে না চায়? আর্থিক ভাবে সন্তানের উপর নির্ভরশীল না-থেকে যদি সুখে অবসর জীবন কাটানো যায়, তবে মন্দ কি? কিন্তু অনেক সময়েই চাকরি জীবনে যা যথেষ্ট সঞ্চয় বলে মনে করি, অবসর নেওয়ার পরে সেখান থেকে আয় খরচের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না।

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

মৃগাঙ্ক (৬৩) • স্ত্রী (৫৮) • মেয়ে (৩২) • ছেলে (৩৫)

বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী • থাকেন ভিন্‌ রাজ্যে • নিজেদের বাড়ি
• ছেলে-মেয়ে দু’জনেই বিদেশে • ভাল থাকতে ঢেলে সাজতে তৈরি সঞ্চয়ের কৌশল

চাকরির পরে নিশ্চিন্ত অবসর কে না চায়? আর্থিক ভাবে সন্তানের উপর নির্ভরশীল না-থেকে যদি সুখে অবসর জীবন কাটানো যায়, তবে মন্দ কি? কিন্তু অনেক সময়েই চাকরি জীবনে যা যথেষ্ট সঞ্চয় বলে মনে করি, অবসর নেওয়ার পরে সেখান থেকে আয় খরচের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। তখন খরচের টাকা জোগানো বা লগ্নি চালিয়ে যেতে ভাঙতে হয় তহবিল। এর প্রধান কারণ, আমরা সঞ্চয়ের সময়ে মূল্যবৃদ্ধিকে মাথায় রাখি না। ফলে আজ যা বেশি মনে হয়, কাল তা-ই কম পড়ে যায়। মৃগাঙ্কবাবুরও সমস্যা এটাই।

তিন বছর আগে অবসর নেওয়ার পর থেকে মোটামুটি সচ্ছল ভাবে দিন কাটাচ্ছেন মৃগাঙ্কবাবু। বিভিন্ন খাতে লগ্নি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। যা থেকে সম্পদ নেহাত মন্দ গড়ে ওঠেনি। ছেলে-মেয়ে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। স্ত্রীর সঙ্গে দিন কাটে নিজের তৈরি করা বাড়িতেই। অথচ এর মধ্যেই তাঁর প্রধান চিন্তা, আয়ের তুলনায় খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা বেশি। নেই স্বাস্থ্যবিমাও। ছেলে-মেয়ে বিয়ের খরচ নিজেরা দিতে চাইলেও, বাবা হিসেবে কিছু খরচ করতে চান তিনিও। ফলে এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য সম্পদ বাড়ানো। কারণ, বিয়ের জন্য খরচ করেও যাতে স্বামী-স্ত্রীর বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটে।

তবে এখানে একটা কথা না-বলে পারছি না। দেখে ভাল লাগল মৃগাঙ্কবাবু এই বয়সেও নতুন করে লগ্নি পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছেন। কী ভাবে তহবিল আরও বাড়ানো যায়, তার উপায় ভাবছেন। ফলে আজ আমরা শুরু করব, তহবিল বাড়ানোর পদ্ধতি আলোচনা করেই।

পিপিএফে লগ্নি

চাকরি করার সময়ে লগ্নি হিসেবে পি পি এফ খুবই ভাল। কারণ, এতে প্রতি বছর জমা টাকার উপর তো করছাড় মেলেই, মেয়াদ শেষে যে-টাকা পাওয়া যায়, তা-ও থাকে করমুক্ত। কিন্তু অবসর জীবনে এই প্রকল্পই হয়তো ততটা আকর্ষণীয় নয়। মৃগাঙ্কবাবুই প্রতি বছর এই খাতে এক লক্ষ টাকা করে জমাচ্ছেন। কিন্তু তার রিটার্ন বা সুদ কোনওটাই তিনি নিয়মিত হাতে পাচ্ছেন না। ফলে সংসার চালানোর জন্যও সেই টাকা তিনি খরচ করতে পারছেন না। যে-কারণে, তাঁর উচিত পিপিএফের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেই টাকা প্রবীণ নাগরিকদের বিশেষ ডাকঘর প্রকল্পে রাখা। বাকি টাকা ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে লগ্নি করা। অর্থাত্‌ এই প্রকল্পগুলি থেকে তিনি নিয়মিত টাকা পেতে পারবেন। দুই ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়েকে নমিনি রাখতে পারেন।

জীবনবিমার প্রিমিয়াম

ছেলে-মেয়ের নামে দু’টি জীবনবিমা প্রকল্প কিনেছেন তিনি। সে জন্য বছরে ১ লক্ষ টাকা প্রিমিয়াম দিতে হয়। তাঁর সন্তানরা বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। ফলে প্রিমিয়ামও তাঁদেরই দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এ জন্য আপনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন ও দেখুন তাঁরা কোনও ছাড় পাবেন কি না। যদি কিছু দিতেও চান, সে জন্য গিফ্টের মাধ্যমে টাকা দিন। যাতে কোনও কর দিতে হয় না।

এসআইপিতে লগ্নি

মৃগাঙ্কবাবুু ঝুঁকি নিতে পিছপা নন। তাঁর হাতে শেয়ার তো আছেই, তার উপর মাসে ১০ হাজার টাকা ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি করেন তিনি। আমার মতে, এই ফান্ডগুলির ডিভিডেন্ড প্রকল্প বেছে নিন। এতে ডিভিডেন্ড থাকবে করমুক্ত। প্রয়োজনে শেয়ার ও ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে তহবিল বদলানোর কথাও ভাবুন। অবশ্যই দীর্ঘ মেয়াদের জন্য।

মৃগাঙ্কবাবু জানিয়েছেন, লগ্নি বা সংসার খরচের টাকায় টান পড়লে এসআইপি বা শেয়ার ভাঙিয়ে খরচ চালান তিনি। সেটা কখনওই হওয়া উচিত নয়। বরং পিপিএফ বন্ধ করে ও জীবনবিমায় লগ্নির টাকা কমিয়ে নগদের জোগান বাড়ান। আর এসআইপিগুলি চলুক। কারণ, এগুলি থেকেই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াইয়ের রসদ পাবেন তিনি।

স্থায়ী আমানত না অন্য কিছু?

মৃগাঙ্কবাবুর সবচেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে স্থায়ী আমানতের পাঁচটি প্রকল্পে। কিন্তু তিনি এমন ব্যবস্থা করেছেন, যাতে সবক’টি থেকে নিয়মিত টাকা হাতে পান না। এই প্রকল্প অবশ্যই সুরক্ষিত। কিন্তু সুদ করযুক্ত। আমার পরামর্শ, স্থায়ী আমানতের কিছু টাকা ৩ বছর বা তার বেশি মেয়াদের ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে রাখুন। নতুন নিয়মে, প্রকল্পগুলিতে ২০% মূলধনী লাভকর ধার্য করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার হিসাব হবে মূল্যবৃদ্ধির হার বাদ দিয়ে। দেখা যাবে আমানতের তুলনায় এতে কর সাশ্রয় বেশি।

অন্যান্য খাতে সঞ্চয়

সোনার দাম এখন খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। ফলে হাতে থাকা গোল্ড ইটিএফগুলি ধরে রাখুন। দাম বাড়লে তা বিক্রির কথা ভাবতে পারেন।

গত এক-দু’বছর ধরেই এফএমপি (ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান) প্রকল্পগুলি ততটা আকর্ষণীয় নয়। ফলে সেই টাকা স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি করছাড়যুক্ত বন্ডে বিনিয়োগ করার কথা ভাবুন।

এনএসসি, কেভিপি এবং কোম্পানি আমানতগুলি মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত চালান। তার পর সেই টাকা দিয়ে কিছু ভাল শেয়ার কিনে রাখতে পারেন।

উপরের পরিবর্তনগুলি করার পরে হাতে যে-টাকা আসবে, তা দিয়ে রেকারিং চালু করুন। সেই টাকাই বিদেশে ছেলে-মেয়ের কাছে যাওয়া এবং তাঁদের বিয়ের খরচ কিছুটা মেটাতে পারবে।

তহবিল কত হলে ভাল?

উত্তরটা সোজা। চাকরির সময়ে যতটা তহবিল বাড়াতে পারবেন, ততই ভাল। মৃগাঙ্কবাবুর মোট তহবিল এখন ১.৪৬ কোটি টাকা। এর থেকে সোনার গয়নার অঙ্ক বাদ যাবে। কারণ তা ছেলে-মেয়ের বিয়েতে খরচ হবে। ফলে সম্পদ কমে দাঁড়াবে ১.১৬ কোটিতে। পরিবর্তনগুলি করলে অনেকটা টাকা হাতে আসবে। ফলে আগামী দিনে নিয়মিত টাকার জোগান নিয়ে খুব একটা চিন্তা তাঁকে করতে হবে না বলেই আমার ধারণা।

চিঠিতে মৃগাঙ্কবাবু জানিয়েছেন, আগামী দিনে পৈতৃক সম্পত্তির অংশ হিসেবে মোট ২,৮০০ বর্গফুটের তিনটি ফ্ল্যাট হাতে আসবে। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চান। তাঁর মতে, এর থেকে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা (প্রতি বর্গফুট ৩,৫০০ টাকা ধরে) আসবে। সেই টাকা কমপক্ষে তিন বছরের জন্য ৫৪-ইসি বন্ডে রাখতে পারেন। বিভিন্ন সংস্থা এই বন্ড বাজারে ছাড়ে। এতে রিটার্ন তেমন বেশি নয়, কিন্তু মূলধনী লাভকরের পুরোটাই ছাড় পাওয়া যায়। ফলে তা লাভজনক। তিন বছর পরে ওই তহবিল ফের অন্য খাতে লগ্নি করতে পারবেন।

স্বাস্থ্যবিমা

প্রবীণ নাগরিকদের খরচের অনেকটাই বেরিয়ে যায় চিকিত্‌সা খাতে। মৃগাঙ্কবাবুর অফিস থেকেই তাঁর ও স্ত্রীয়ের চিকিত্‌সা খরচ মেলে। কিন্তু বড় অপারেশনের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা নেই। ফলে অবশ্যই একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা করুন। বয়স বেশি হওয়ায় প্রিমিয়াম বেশি হবে। তবে, বিমার অঙ্ক যেন কম না-হয়।

আশা করব এই ভাবে পরিকল্পনা কিছুটা বদল করে, আগামী অবসর জীবন সুখে কাটাতে পারবেন তিনি।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

মৃগাঙ্কর মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে পারেন আপনিও। নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানিয়ে চিঠি লিখুন

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১.
ই-মেল: bishoy@abp.in

ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করতে চাই। আমার প্রশ্ন ১) প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকার এসআইপি। ১৬ বছরের জন্য। রিটার্নের লক্ষ্য ২৯.০৬ লক্ষ টাকা। কিংবা ২) প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকার এসআইপি। ২৪ বছরের জন্য। রিটার্নের লক্ষ্য ৫০ লক্ষ টাকা। এই দু’টির কোনটি ভাল হবে?

প্রবীর ঘোষ, শিলিগুড়ি

আপনি নিজের সম্পর্কে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাননি। যেমন, আপনার বয়স, কী কী দায়িত্ব বা দায়বদ্ধতা রয়েছে, বর্তমান বা আগামী দিনের সম্ভাব্য আয় ইত্যাদি। লগ্নির ক্ষেত্রে ঠিক কতটা ঝুঁকি আপনার পক্ষে বওয়া সম্ভব, তার ইঙ্গিত দিতে পারে ওই তথ্যগুলি। তাই যতটুকু তথ্য আপনি দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এখানে দু’টি মেয়াদের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৬ ও ২৪ বছর। ২৪ বছরের ক্ষেত্রে আবার এসআইপির টাকার অঙ্ক কমিয়ে দিয়েছেন। সন্দেহ নেই যে, ১৬-র তুলনায় ২৪ বছরের এসআইপিতে রিটার্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই যদি অত দিন ধরে টাকা আটকে রাখতে অসুবিধা না-থাকে, তা হলে ২৪ বছরের এসআইপি-ই বেশি আকর্ষণীয়।

আপনি এখন ধারণাই করতে পারবেন না যে, ১৬ বা ২৪ বছর পরে লগ্নি কোনও ঝুঁকির মুখে পড়বে কি না। আমরা জানি না, অতগুলো বছর পার করে মূল্যবৃদ্ধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কেমন অবস্থা থাকবে শেয়ার বাজারের, ফান্ড ম্যানেজাররা কতটা ভাল ভাবে ফান্ডটি পরিচালনা করতে পারবেন। যে ইকুইটি ফান্ডেই টাকা ঢালুন না-কেন, এই বিষয়গুলির একটা বড় ভূমিকা বা প্রভাব থাকবেই লগ্নির উপর। এমনকী যদি এটাও ধরে নিই যে, মূল্যবৃদ্ধি বর্তমান হারেই বাড়বে এবং অর্থনীতির অন্যান্য ঝুঁকিও এখনকার মতোই রয়ে যাবে, তা হলেও রিটার্নের উপর তার যে-প্রভাব পড়বে তা খুব কম হবে না। এ নিয়ে মানসিক প্রস্তুতি রাখা ভাল।

কোন শর্ত কী ভাবে বাজারের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে, তা বোঝা কঠিন। সুতরাং যেটা ঠিক করেছেন সেই রিটার্নই পেতে হবে, এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে না-এগোনোই ভাল।

পরামর্শদাতা নীলাঞ্জন দে।

ভ্রম সংশোধন

গত ১১ সেপ্টেম্বর বিষয়-আশয়ে আইন-আদালত বিভাগে ‘দানপত্র কী ভাবে করা যায়?’ প্রশ্নের উত্তরে একই পরিবারের সদস্যের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি অবশ্য অনেক কম, মাত্র ৫% লেখা হয়েছে। সেটি ০.৫% পড়তে হবে। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE