প্রতীকী ছবি
করোনা পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সোশ্যালমিডিয়া ব্যবহার করার প্রবণতাও। যার ফলে ব্যক্তিগত তথ্যের সঙ্গে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে টাকা-পয়সাসংক্রান্ত তথ্যও। বৃদ্ধি পাচ্ছে আর্থিক জালিয়াতির মতো ঘটনা। সাইবার অপরাধীরা বিভিন্নউপায়ে কোনও ব্যক্তির অর্থ, মূল্যবান তথ্য এবং পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য চুরি করতে পারে। আর এইধরনের সাইবার অপরাধ রুখতে সব থেকে বেশি সহায়ক সাইবার বিমা। বলে রাখা ভাল, এই বিমা শুধু সাইবারজনিত কারণে তৈরি হওয়া আর্থিক ক্ষতিই পূরণ করে না, বরং ডেটা পুনরুদ্ধার, নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ বামামলা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচও বহন করে।
সাইবার বিমা আসলে কী? কী ভাবে কাজ করে এই বিমা? সাইবার অপরাধে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি কীভাবে সহায়তা পেতে পারেন তার থেকে? এই বিমা করার সময়ে কোন কোন বিষয়ের দিকে নজর দেওয়াউচিত? এমনই বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির বিশিষ্ট বিমা উপদেষ্টা সঞ্জয় দত্ত।
সাইবার বিমা আসলে কী?
খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে, পরিচয় চুরি থেকে অনুমোদনহীন লেনদেন ইত্যাদির কভারেজ দিয়ে থাকে সাইবারবিমা। মোট দুই ধরনের বিমা রয়েছে। প্রথমত, কর্পোরেটদের জন্য ‘কর্পোরেট সাইবার লায়াবিলিটি পলিসি’এবং খুচরো ক্রেতাদের জন্য ‘রিটেল সাইবার লায়াবিলিটি পলিসি’। এ ছাড়াও ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির জন্যরয়েছে আর একটি পলিসি। যেটি সংস্থাগুলি কেনে তাদের উপভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য।
অতিমারির আগে এবং অতিমারির সময়ে কী ধরনের সাইবার আক্রমণের ধারা দেখেছেন?
অতিমারির আগে সাইবার আক্রমণের দাবির সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। এবং তা নির্দিষ্ট কয়েকটিসেক্টরে সীমাবদ্ধ ছিল। যেমন, আর্থিক সংস্থাগুলি এবং বড় ব্যবসাগুলি। কোভিড পরবর্তী সময়ে আকারআয়তন নির্বিশেষে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে এই সংক্রান্ত দাবির সংখ্যা এক নিমেষে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এবংএই ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করেছি ইমেলের মাধ্যমে এবং ‘র্যানসমওয়ার’ ব্যবহার করে চুরির চেষ্টা।
আপনার কি মনে হয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সাইবার আক্রমণের দাবির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে?
অবশ্যই। সাম্প্রতিক সময়ে আমি নিজেই বহু সাইবার বিজ্ঞাপন দেখতে পেয়েছি। এই আক্রমণগুলিরমধ্যে র্যানসমওয়ার, ব্যবসায়িক ইমেল ইত্যাদি রয়েছে। অত্যাধুনিক আক্রমণের কারণে ব্যবসার ক্ষতিরজেরে খুব বড় আকারের ক্ষতিপূরণের দাবিও তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি বেশ বাড়ছে তথ্য চুরির ঘটনাও।
সাইবার বিমা বিক্রির আগে কী কী শর্ত পূরণ করতে হয় ক্রেতাদের?
অন্য সব পলিসির মতোই ক্রেতার ঝুঁকি তো খতিয়ে দেখাই হয়। আর এটা করতে তিনটি প্রধান বিষয় খতিয়েদেখি আমরা — গ্রাহক, প্রক্রিয়া এবং প্রযুক্তি। যেমন, সেই গ্রাহকের ‘ফায়ারওয়াল’ কতটা শক্তিশালী,কম্পিউটার এবং নিট নির্ভর কাজ কী ভাবে পরিচালনা করে সংস্থাটি এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে নিরাপত্তানিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কতটা পোক্ত, ইত্যাদি। আর এগুলি পর্যালোচনা করা হয় তথ্য নিরাপত্তা নীতি,ব্যবসার ধারাবাহিকতার পরিকল্পনা, তথ্য পরিচালনার প্রকৃতি, শিল্পের ধরন, তাদের ব্যবসার ভৌগোলিকবিস্তার ইত্যাদির ভিত্তিতে।
আপনি আপনার গ্রাহকদের থেকে কী ধরনের সাইবার নিরাপত্তার অনুরোধ পেয়ে থাকেন? গত কয়েক বছরেক্রমবর্ধমান সাইবার আক্রমণের ফলে এতে কোনও পরিবর্তন এসেছে কি?
প্রযুক্তির দুনিয়া এক জায়গায় থেমে নেই। রোজই কিছু না কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনেরঅবস্থানও বদলাতে থাকছে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পা মিলিয়ে।
তাই এখন জোর দেওয়া হয় যে বিষয়গুলিরউপরে, তা হল:
১। সচেতনতা এবং কাজের প্রশিক্ষণ
২। তথ্য নিরাপত্তা সার্টিফিকেশন যেমন আইএসও ২৭০০১
৩। তথ্য সংগ্রহ এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ নীতি (জিডিপিআর, ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা বিলএবং তথ্যপ্রযুক্তি আইন মেনে হচ্ছে কিনা)
৪। সংস্থার বাইরের কোনও সংস্থাকে দিয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থার নিয়মিত নিরীক্ষণ এবং সুরক্ষার ফাঁকভরতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার উপর নজর।
কোনও অনুরোধ বিবেচনা করার সময় আপনি কী ভাবে পদক্ষেপ করেন?
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি মাথায় রেখে, আমরা প্রথমেই যা খতিয়ে দেখি, তা হল সংস্থা বা ব্যক্তি যিনিই এইপলিসি কিনতে আগ্রহী তাঁরা সংশ্লিষ্ট সব আইন মানছেন কি না।
মাথায় রাখতে হবে, যে ভাবে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে বদলাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে না হাঁটতে পারলেঝুঁকি বাড়বে। বাড়বে সাইবার আক্রমণে ক্ষতির আশঙ্কা। এতে অবশ্যই বিমা সংস্থাগুলির ব্যবসারসম্ভাবনা বাড়বে। এবং বাড়ছেও। কিন্তু ক্রেতাদেরও মাথায় রাখতে হবে, কী ভাবে ঝুঁকি বাড়ছে প্রযুক্তিরদ্রুত বিবর্তনের কারণে।
আর এই সব কারণেই সাইবার বিমা শুধুমাত্র সাইবার আক্রমণের কারণে আর্থিক ক্ষতিই পূরণ করে নাসঙ্গে তথ্য পুনরুদ্ধার, আইন বদলানোর কারণেও যে প্রযুক্তি পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে, সেইখরচের ঝুঁকি সহ বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলার যাবতীয় খরচও শর্ত সাপেক্ষে বহন করে।
প্রতিবেদক চিফ-আন্ডাররাইটিং, রিইনস্যুরেন্স এন্ড এএমপি; ক্লেইমস, অ্যাকচুয়ারিয়াল, আইসিআইসিআই লম্বার্ড জিআইসি। বক্তব্য নিজস্ব।
বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.in এই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতে ভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy