কথায় আছে ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’। এ যেন অরণ্যের সেই প্রাচীন প্রবাদ বাক্যের মতো কানের পাশে বাজে। নাম, যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি যতই বাড়ুক না কেন, স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত না রাখলে গোড়াতেই গলদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ করেই নানা কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন হঠাৎ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা, কিংবা কোনও রোগ ব্যাধির চোখরাঙানি ইত্যাদি। তাই নানা খাতে বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিমা করে রাখা আবশ্যিক। এতে জরুরি অবস্থায় আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দুই-ই সুরক্ষিত থাকবে।
মনে রাখবেন সময়ের সঙ্গে কিন্তু সব কিছুর খরচ বাড়ছে। বিগত কয়েক বছরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চিকিৎসা পরিষেবার খরচও। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মধ্যবিত্ত বা সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা খরচ বহন করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ব্যাপার। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এতটাই ব্যয়বহুল যে এই খরচ আপনার কষ্টার্জিত সম্পত্তিকে নিঃশেষ করে। আপনাকে ঋণগ্রস্ত করে তুলতে পারে। তাই সর্বদাই নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী একটি পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের স্বাস্থ্য বিমা থাকাটা বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয়।
কিন্তু বাজার চলতি সব স্বাস্থ্য বিমাই কি ভাল? এই ধরনের বিমা কেনার আগে কোন কোন বিষয়গুলি খুঁটিয়ে দেখা উচিত? জরুরি অবস্থায় আপনার সহায় হতে পারে কী ধরনের স্বাস্থ্য বিমা? স্বাস্থ্য বিমা কেনার আগে এই ধরনের প্রচুর প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মাথার মধ্যে। চলুন জেনে নিই সেই উত্তরগুলি।
স্বাস্থ্য বিমা কেনার আগে সেই বিমা সংস্থার সঙ্গে হওয়া চুক্তিপত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখতেই হবে:
১) ভাল পলিসির শর্ত:
চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার আগে আপনার লক্ষ্য করা দরকার নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সংশ্লিষ্ট চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা আছে কি না। মনে রাখবেন এই বিষয়গুলিই কোনও পলিসির মান নির্ধারণ করে দেয়।
• বিমার মেয়াদ অন্তত পাঁচ বছর
• চুক্তিতে উল্লিক্ষিত চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলি একটি বিস্তৃত পরিধির অন্তর্ভুক্ত
• বাজারে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা
• একটি বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ছাড়া পুনর্নবীকরণযোগ্য
• দাবি করার জন্য ন্যূনতম দিনের সীমাবদ্ধতা
• ক্যাশলেস অর্থাৎ চিকিৎসার পরে সরাসরি ওই অর্থ প্রদানের সুবিধা
২) বিমার প্রিমিয়াম:
অন্যান্য বিমার মতো স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রেও প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় জরুরি অবস্থায় বিমা কর্তৃক মোট আর্থিক সহায়তার উপরে ভিত্তি করে। প্রিমিয়ামটি অবশ্যই এমন একটি পরিমাণ হতে হবে যা শুধুমাত্র কোনও একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তের জন্য নয়। বিমার সম্পূর্ণ মেয়াদের জন্য কার্যকর হবে।
তাই এমন একটি বিমা পরিকল্পনার সন্ধান করুন যা আপনাকে পলিসির সর্বোচ্চ মেয়াদ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যে কোনও পরিমাণ অর্থ দাবি করার সুযোগ দেয়।
মনে রাখবেন, দাবি করা অর্থের পরিমাণ প্রতি মাসে প্রিমিয়াম হিসেবে দেওয়া মোট পরিমাণের বেশি হওয়া উচিত নয়। ভাল করে হিসেব করে দেখে নিন যেন এমন কোনও শর্ত না থাকে।
৩) বিমার আর্থিক পরিধি নির্ধারণ:
ঠিক কতটা আর্থিক পরিধির বিমা আপনার এবং আপনার পরিবারের পক্ষে উপযুক্ত হবে তা বোঝার জন্য চারটি বিষয় মূলত মাথায় রাখতে হবে।
প্রথমত যদি আপনি কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু কিংবা চেন্নাইয়ের মতো প্রথম শ্রেণির শহরে বসবাস করেন, তা হলে আপনার অন্তত পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার অস্থায়ী (ফ্লোটাল) পরিধির বিমা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ এই সমস্ত শহরে চিকিৎসার খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। কোনও সাধারণ রোগের জন্য ২-৩ দিনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হলে তার জন্য আপনার খরচ হতে পারে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আর অন্য কোনও জটিল রোগের জন্য আপনার খরচ লক্ষাধিক হতে পারে। অন্য দিকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির শহরে বসবাসের ক্ষেত্রে আপনার নূন্যতম পাঁচ লক্ষের বিমা নেওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, বিমার আর্থিক পরিধি নির্ধারণ করার অন্যতম মূল মাপকাঠি আপনার আয়। কারণ অপেক্ষাকৃত বড় পরিধির বিমা নিতে আপনাকে দিতে হবে অধিক অঙ্কের কিস্তি (প্রিমিয়াম)।
তৃতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিমার চুক্তিপত্রে সই করার আগে আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। সিনিয়র সিটিজেন অর্থাৎ ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা আবশ্যিক। শারীরিক সক্ষমতার উপরেও ভিত্তি করে আপনার বিমার কিস্তি।
চতুর্থত, তামাক ও সুরা সেবন করে থাকলে তার জন্যও বৃদ্ধি পায় কিস্তি। মনে রাখবেন জীবনে চলার পথে বিপদ আসে না জানিয়েই। তাই প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই খুব ছোট বয়স থেকে স্বাস্থ্য বিমা করে রাখা উচিত। এতে যেমন কিস্তির অঙ্ক কম পড়ে, ঠিক তেমনই জরুরি অবস্থায় পরিস্থিতির সঙ্গে নিশ্চিন্তে লড়াই করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy