মা-বাবার পরেই সবচেয়ে কাছের সম্পর্ক দাদা-দিদি বা ভাই-বোনের সঙ্গে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে কিছু লুকোনোর প্রয়োজন হলেও সহায় সেই ভাই-বোনই। কিন্তু কোনও সম্পর্কই সরলরেখায় চলে না। তাই সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে প্রিয় মানুষের প্রতিও তৈরি হতে পারে ঈর্ষা। তা থেকেই সূত্রপাত সিবলিং রাইভালরি-র। মনে মনে এই অনুভূতি তৈরি হলেও ছোট বয়সে তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয় না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে জমতে থাকা নানা প্রশ্ন, কৌতূহল, ক্ষোভের ঢেউয়ে ক্রমশ রং হারাতে থাকে সম্পর্কের স্বাভাবিকতা। হয়তো নিজেদের অজান্তেই দুই ভাই বা দুই বোন হয়ে ওঠে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। পরিণত বয়সে এই মনোভাব যেন সুস্থ সম্পর্কের পথে অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়, তার প্রস্তুতি ছোট বয়স থেকেই নেওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে যে, দ্বিতীয় সন্তান যে সময়েই আসুক, প্রথম সন্তানকে তার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান বেশি হলেই যে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ বয়স, পারফরম্যান্সের মতো বাহ্যিক নির্ণায়কগুলি এই মনোভাবের জন্য দায়ী নয়। বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেক শিশুর শৈশব তার নিজের। বড় সন্তান দায়িত্বশীল হবে এবং ছোট সন্তানের আবদার রাখা হবে, এ ধরনের টিপিক্যাল প্রত্যাশা না করাই ভাল। এ ধরনের আচরণের নিরিখে অনেক প্রাপ্তবয়স্কের পরবর্তী কালে ক্ষোভ হয় এই ভেবে যে, ভাই-বোন আসার পর না চাইতেও অসময়েই তাকে বড় হয়ে উঠতে হয়েছে।
পাশাপাশি ছোট সন্তানের ক্ষেত্রেও বারবার বড় জনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা ঠিক কাজ নয়। বড় জন কিছু করেনি বলে ছোট জন সেই কাজ করতে পারবে না— এমনটা না বলে সার্বিক ভাবে তার কাজের নৈতিক মূল্য বিচার করা সমীচীন।
একটি মাত্র সন্তান হলে যে তার সিবলিং রাইভালরি-র মনোভাব হবে না, এমনটাও হলফ করে বলা যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তুতো ভাই-বোনদের সঙ্গেও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। তার জন্য অনেকাংশে দায়ী তুলনামূলক মূল্যায়ন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেক সময়ে দুই ভাই বা দুই বোনের মধ্যে তুলনামূলক পর্যালোচনা করেন। রোজ রোজ একই কথা শুনতে শুনতেও মনে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই বাবা-মায়ের উচিত, দু’জনের প্রতিভার মান নিয়ে তুলনা না করে প্রত্যেক সন্তানের বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া।
ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে তার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বাবা-মাও যদি দুই সন্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে যান, সেটা কাম্য নয়। ছোটখাটো ঝগড়া তাদের নিজেদের মতো করে মিটিয়ে নিতে দিন। বড় সমস্যা হলে দু’পক্ষের কথা মন দিয়ে শুনুন। আবেগতাড়িত না হয়ে যুক্তি দিয়ে পরিস্থিতির বিচার করুন। তাতে অন্তত কোনও সন্তানেরই এটা মনে হবে না যে, তার কথার গুরুত্ব দেওয়া হল না।
দু’টি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার ফর্মুলা নেই। কাছের মানুষ বলে তার প্রতি ভালবাসা যতটা গভীর, আবার নেতিবাচক মানসিকতা হলে সেই মনোভাবও হয় তীব্র। জটিলতা তৈরি হলে বড়দের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। তবে আত্মসমীক্ষণও জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy