রেনবো জ়াইলোফোন
প্রসঙ্গ এক। গরমের ছুটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চাদের দাপট বেড়েছে। বাবা-মা বাইরে কিংবা ঘরে কাজকর্মে ব্যস্ত থাকলেও, পাশাপাশি চলতে থাকে খুদেদের হাজারো বায়নাক্কা। এ দিকে যতই গল্পের বই, খেলনা কিংবা রং-তুলির পশরা সাজিয়ে দেওয়া হোক না কেন, তাদের মন কিছুতেই ভরছে না। অগত্যা এ বার সময় এসেছে নতুন কিছু খুঁজে দেখার।
প্রসঙ্গ দুই। ছোটবেলা থেকেই অভিভাবকেরা সন্তানদের শুধুমাত্র পড়়াশোনার মধ্যে রাখতে চান না। তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তোলার জন্যই হোক কিংবা সন্তানদের বহুমুখী প্রতিভা আবিষ্কারের প্রচেষ্টায়— বাবা-মায়েরা সন্তানদের আঁকা, নাচ, গান, খেলাধুলো, নানা মিউজ়িক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতে শেখানোয় ভর্তি করে দেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে বাচ্চা গিটার শিখতে চায়, সে হয়তো ক্যানভাসে এলোমেলো আঁচড় কাটছে। আবার যে ব্যাডমিন্টন পেলে খুব খুশি, তাকে হয়তো রোজ নাচের ক্লাসে যেতে হয়। ফলে নিজের বাচ্চার সহজাত প্রতিভা কোন দিকে, সেটা বুঝে নেওয়াও খুব জরুরি।
এই দুই প্রসঙ্গকেই একসঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারে এক সহজ সমাধান। এমন অনেক বাদ্যযন্ত্র রয়েছে, বাবা-মায়ের সামান্য তদারকিতে যা সহজে বাচ্চারা নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারে। তেমনই ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরি করতে কাজে লাগান এই গরমের ছুটিটা। আপনার বাচ্চা নতুন কাজে মেতেও থাকবে, আবার আপনিও জানতে পারবেন সন্তানের সুপ্ত ইচ্ছের কথা।
শুরু হোক খুব সহজে বানানো যায়, এমন কিছু বাদ্যযন্ত্র দিয়ে।
রেনবো জ়াইলোফোন: দেখতে যেমন রঙিন, সুরও তেমন মিষ্টি। এটি তৈরি করতে লাগবে নানা মাপের কাঠের টুকরো, ভাল মানের আঠা, রং ইত্যাদি। প্রতিটা কাঠের টুকরো অন্তত দু’ইঞ্চি মাপের হলে ভাল। আট ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি মাপের মোটামুটি আটটা কিংবা ১০টা কাঠের টুকরো কেটে রাখুন। প্রতিটার গা মসৃণ করে চেঁছে নানা রং করুন। লম্বা দুটো কাঠের উপরে রঙিন কাঠের টুকরোগুলো সমান মাপের ফাঁক রেখে আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিন। প্রয়োজন হলে পালিশ করতে পারেন। এ বার বাচ্চার হাতে কাঠ বা মেটালের টুকরো কিংবা চপস্টিক ধরিয়ে দিন। মনের আনন্দে সে বাজাতে পারবে। আর কাঠ রং করার সময়ে বাচ্চার সাহায্য নিতে ভুলবেন না যেন!
পপসিকল স্টিক হারমোনিকা: বেশ লম্বা মাপের আইসক্রিম বা পপসিকল স্টিক, রাবার ব্যান্ড, কাগজের টুকরো, টুথপিক দিয়ে তৈরি হয়ে যাবে পপসিকল স্টিক হারমোনিকা। স্টিকগুলোতে পছন্দের রং করে নিন। দুটো স্টিকের মাঝে সমান মাপের কাগজের টুকরো ও দু’দিকে টুথপিকের টুকরো ঢুকিয়ে দিন। স্টিকের দু’পাশে ব্যান্ড লাগিয়ে দিন শক্ত করে। এ বার দুটো স্টিকের মাঝের ফাঁকা অংশে ঠোঁট রেখে বাজালেই হল! পপসিকল স্টিক হারমোনিকা আপনার খুদের মনে ধরলে ছুটি পেরোলেই তার হাতে ধরিয়ে দিন কেনা বাদ্যযন্ত্র।
পিভিসি পাইপ ফ্লুট: বাড়িতে বাড়তি পরে থাকা পিভিসি পাইপ তো থাকেই। সেটা মাপ মতো কেটে নিয়ে তার গায়ে ছোট ছোট গর্ত করে নিন। গর্ত তৈরির জায়গা দেখার জন্য কোনও ফ্লুট বা বাঁশির সাহায্য নিতে পারেন। এ বার আপনার খুদের বাঁশি বাজানো আটকায় কার সাধ্যি?
ইস্টার এগ ম্যারাকাস: খুব সহজে এই জিনিসটি বানানো যায় চাল, প্লাস্টিকের চামচ, ফাঁপা প্লাস্টিকের ইস্টার এগ, রঙিন ওয়াশি টেপ অথবা সেলোটেপ দিয়ে। প্লাস্টিকের ডিমগুলো খুলে ভিতরে অর্ধেক করে চাল ভরে দিন। এ বার প্লাস্টিকের দুটো চামচের মাঝে চালভর্তি ডিম রেখে ওয়াশি টেপ দিয়ে আটকে দিন। এ বার ইচ্ছে মতো ছন্দে ম্যারাকাস বাজালেই হল!
ঠিক এ ভাবেই জুতোর বাক্স দিয়ে গিটার, সেলাই করার ফ্রেম দিয়ে মিনি ম্যান্ডোলিন, টিনের ক্যান দিয়ে ড্রাম কিংবা চা খাওয়ার কাপ দিয়ে চিকেন ইন আ কাপ-এর মতো সহজ বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে ফেলতে পারেন বাড়িতে। এই তালিকায় রয়েছে স্ট্রামার, শেকার, মেলোডি পোল, ডিস্ক সিম্বলের মতো যন্ত্রও।
বাড়ির পুরনো জিনিস বাচ্চার হাতে ধরিয়ে দিলে সে যেমন নতুন কিছু সৃষ্টির আমেজে মেতে উঠবে, তেমনই নতুন বাদ্যযন্ত্রের প্রতিও তার আগ্রহ বাড়বে। আর নিজের হাতে তৈরি সুরের দুনিয়ায় কী ভাবে যে ছুটি ফাঁকি দিয়ে পালাবে, খেয়াল থাকবে না অভিভাবক-সন্তান কারওই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy