Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
cultural programme around Kolkata

ঐতিহ্যের ছায়ায়

সাবর্ণ সঙ্গীত সম্মেলন। তিন দিনের অনুষ্ঠান শুনলেন বারীন মজুমদারসাবর্ণ সঙ্গীত সম্মেলন।নবকলেবরে এই সম্মেলনের মূল উদ্যোক্তা হলেন তন্ময় রায়চৌধুরী ও তবলাবাদক কুমার বসু।তিন দিনের অনুষ্ঠান শুনলেন বারীন মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

শুধুমাত্র আরও একটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করা নয়, ঐতিহ্যের কাছে মাথা নত করে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টাই হচ্ছে সাবর্ণ সঙ্গীত সম্মেলনের মূল সুর। প্রায় তিরিশ বছর পরে আবারও তা অনুষ্ঠিত হল বেহালার বড়বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে। নবকলেবরে এই সম্মেলনের মূল উদ্যোক্তা হলেন তন্ময় রায়চৌধুরী ও তবলাবাদক কুমার বসু। অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বক্তব্য রাখলেন শ্রীকুমার রায়চৌধুরী।

প্রথম সন্ধ্যার সঙ্গীতাসর শুরু হল কুশল দাসের সেতার বাদনে পটদীপ রাগের মাধ্যমে। নিখুঁত রাগরূপায়ণ ও মনোগ্রাহী পদবিস্তার বিশিষ্ট আলাপ ও জোড় বাজিয়ে অসাধারণ লয়কারি, বোলকারি তানকারি ও ঝালা সমৃদ্ধ গৎকারি পরিবেশন করেন বিলম্বিত ও দ্রুত তিনতালে। গভীরতা, স্পষ্টতা ও চমৎকার রাগের মেজাজ চেয়েছিল তাঁর পরবর্তী বাজনা মিশ্র শিবরঞ্জনী রাগের ধুনটিতে। তবলাবাদক পরিমল চক্রবর্তী আসর আরও জমিয়ে দিলেন।

দ্বিতীয় নিবেদনে কুমার বসু সঙ্গে নিলেন তাঁরই ভাইপো রেহান বসুকে যার এদিনই মঞ্চাভিষেক হল তবলা লহড়ার মাধ্যমে। কুমারের বাজনায় প্রাণের ছোঁয়া আছে। বিলম্বিত তিনতাল শুরু হল কয়েকটি অতি সঙ্গীতবোধ সম্পন্ন রচনার মাধ্যমে। তাঁর শিল্পবোধ ও পরিমিতি বোধের পরিচয় পাওয়া গেল। হারমোনিয়ামে ছিলেন সনাতন গোস্বামী।

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় রাজ্যসঙ্গীত অ্যাকাডেমির দুই সদস্য অনির্বাণ দাস ও দীপ্তম সিংহ বিশ্বাসের কণ্ঠসঙ্গীতের মাধ্যমে। মালবিকা মিত্রের ছাত্রী তবস্মি পাল মজুমদারের কত্থক নাচ ছিল পরবর্তী নিবেদন। জয়পুর ও লখনউ ঘরানার শিল্পীর নিবেদনে ছিল প্রথাগত নৃত্যপদ। সঙ্গে ছিল অভিনয় আশ্রিত কিছু নিবেদন। শিল্পীর পদবিস্তার সুচারু ও উপস্থাপনাও উজ্জ্বল। মন্দিরা লাহিড়ী বিলম্বিত তিন ও দ্রুত একতালে মারু বেহাগ রাগে খেয়াল গাইলেন। তাঁর কণ্ঠে জোয়ারি আবেগ, গলা সুরসমৃদ্ধও। তবে মন্দ্র সপ্তকে স্বরসঞ্চার খুব স্পষ্ট নয়। ফলে বিলম্বিত খেয়ালের রাগবিস্তারে একটা সীমাবদ্ধতা থেকেই যায়। খুব একটা বৈচিত্র না থাকলেও সরগম প্রয়োগে নৈপুণ্য ছিল। তবে ভজন ও দাদরা-তে তিনি একটা আবেদন রাখতে পেরেছিলেন। সুর ও ছন্দে হিল্লোল তুললেন সন্ধ্যার শেষ শিল্পী হারমোনিয়াম বাদক সনাতন গোস্বামী। তিনি নির্বাচন করেছিলেন রাগ গোরখকল্যাণ। তবলায় তাঁকে সহযোগিতা করেন শুভজিৎ গুহ। দু’দিনের অনুষ্ঠানে সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশিক সেনগুপ্ত ও দীপান্বিতা রায় চৌধুরী।

অনেক দিন পরে

সুলগ্না বসু

সম্প্রতি ‘স্বরক্ষেপণ’ নিবেদিত সান্ধ্য আসরটি হয়ে উঠল কবিতা ও গানের এক সুন্দর মেলবন্ধন। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আধুনিক সময়ের কবিদের ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন বৈচিত্র্যের কবিতায় সমৃদ্ধ ছিল সেই সন্ধ্যা। মালা দে’র ‘উত্তরাধিকার’ এবং ‘পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে’ – মামুলি নিবেদন। উর্জস্বী মজুমদারের ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ অকারণে নাটুকে এবং চিৎকৃত। শুনতে ভাল লাগে রঞ্জনা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে দুটি কবিতা, সেরা-র কণ্ঠে ‘যমুনাবতী’, সায়ন ও পিয়ালীর যৌথ নিবেদনে ‘রংবদল’, ‘ডেকেছ আজি’, ‘চিল্কায় সকাল’। কবি তাঁর নিজের বই থেকে দুটি কবিতা পাঠ করলেন যা বর্তমান সময়ের পক্ষে প্রাসঙ্গিক, সময়োপযোগী। অনুষ্ঠানের শেষ নিবেদন ছিল কবিতা ও গানের একটি কোলাজ। অংশগ্রহণ করলেন বাসবদত্তা বসু মজুমদার এবং সুছন্দা ঘোষ। বাসবদত্তার আবৃত্তি তাঁর কণ্ঠ-সম্পদ, স্বরক্ষেপণ দক্ষতা ও আবেগময়তায় সমৃদ্ধ। তবে আবেগের সংযত বহিঃপ্রকাশও বাঞ্ছনীয়। উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি হল ‘ভেঙেছ দুয়ার’, ‘সেদিন কি তুমি’, ‘কোন বাণিজ্যে’। কবিতার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই ছিল সুছন্দার কণ্ঠে গান – ‘ঐ মহামানব’, ‘তুমি কোন্ পথে’, ‘এই লভিনু’, ‘যাবই আমি, এমনি করেই’।

সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুনির্বাচিত, সুচর্চিতও

সম্প্রতি উত্তম মঞ্চে কাকলি ঘোষ শোনালেন বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। বিভিন্ন পর্যায়ের গানগুলির মধ্যে প্রেম পর্যায়ের গানই ছিল বেশি। তারাপদ চক্রবর্তীর কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিলেও প্রথম হাতে-খড়ি মা প্রতিমা বসুর কাছে। ‘মধুর, মধুর ধ্বনি’, ‘আমার হিয়ার মাঝে’, ‘বিপুল তরঙ্গরে’ দরদ দিয়েই গাইলেন শিল্পী। পরবর্তী পর্যায়ে গাইলেন ‘তোমায় গান শোনাবো’, ‘কাল রাতের বেলা গান এলো মোর মনে’, ‘বঁধু, কোন আলো লাগল চোখে’ শুধু সুনির্বাচিত নয়, সুচর্চিতও।

পঞ্চ কন্যার গান

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ বিধাননগর উপাসনা ও কলাকল্প আয়োজন করেছিল ‘রবি ধন্যা পঞ্চ কন্যা’। সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, গীতা ঘটক, ঋতু গুহ। এঁদের গানগুলিই শোনালেন এ প্রজন্মের কয়েকজন শিল্পী। তানিয়া দাশ গাইলেন ‘বরিষ ধরা মাঝে’, নন্দিনী ভট্টাচার্যের ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ বেশ মনোরম।

সবাই মিলে

শুধু গান শিখে যাওয়া নয়, পরিবেশনে তাতে আলাদা মাত্রা দিতে জানে রবিছন্দমের ছাত্রছাত্রীরা। ওদের প্রশিক্ষক অলক রায়চৌধুরী। তাই শান্তনু চট্টোপাধ্যায়, সর্বানী বন্দ্যোপাধ্যায়, রুক্মিণী দত্ত, মৌতান মিত্র, জয়শ্রী দে, অরূপ বল, দেবিকা দাস-রা চমৎকার গাইলেন। শেষে অলক শোনালেন ‘শুধু তোমার বাণী নয় গো।’ রাবীন্দ্রিক, সুরেলা নিবেদন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy