Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Justice

ন্যায়ের শর্ত

অপরাধীর দ্রুত বিচার ও শাস্তিদান অপরাধ প্রতিরোধেরই অঙ্গ। ধর্ষণ, গার্হস্থ হিংসা, প্রভৃতি অপরাধের ক্ষেত্রে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ, এবং সেগুলির যথাযথ সংরক্ষণের গুরুত্ব কতখানি, তা আর জি কর ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:৩৯
Share: Save:

নারীহিংসার নানা অপরাধের দ্রুত ও নিশ্চিত বিচার পাওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো পশ্চিমবঙ্গে এখনও গড়ে ওঠেনি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, কেন্দ্র বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিশুদের প্রতি যৌনহিংসা, বা নারী-ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচারের জন্য যথেষ্ট ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য দাবি করেছে যে রাজ্য তার নিজের অর্থে অনেকগুলি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত চালাচ্ছে। তবে জাতীয় স্তরের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয় যে ধর্ষণের প্রচুর মামলা পশ্চিমবঙ্গের আদালতগুলিতে দীর্ঘ দিন বিচারাধীন রয়েছে, নিষ্পত্তির হার অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় কম। অতএব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দের সুযোগ গ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরও বেশি সংখ্যায় আদালত খুলতে পারল না কেন, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। উপরন্তু, আপৎকালীন সহায়তার জন্য মহিলা হেল্পলাইনও (১৮১) চালু করেনি রাজ্য। কেন অত্যাবশ্যক এই পরিষেবা চালু হচ্ছে না, তার সদুত্তর মেলেনি। ঘাটতি আরও আছে। একটি অসরকারি সংস্থার সমীক্ষা দেখিয়েছে যে হিংসা-আক্রান্ত মহিলাদের জন্য সরকারি হাসপাতালে ‘এক ছাদের তলায় সুরাহা কেন্দ্র’ (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) পশ্চিমবঙ্গে বস্তুত কার্যকর হয়নি। খাতায়-কলমে বাইশটি কেন্দ্র চালু রয়েছে বটে, তবে সেগুলির মধ্যে দশটিতে সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বা কর্মী, কিছুই খুঁজে পাননি সমীক্ষকরা। অথচ, এই কেন্দ্রগুলি কাজ করলে মেডিক্যাল পরীক্ষা, আইনি পরামর্শ থেকে মানসিক সহায়তা, এ সবই মেলে একই ছাদের তলায়। অন্য অনেক রাজ্যে মেয়েরা যে সুবিধা পাচ্ছে, এ রাজ্যের মেয়েরা তা পাবে না কেন?

অপরাধীর দ্রুত বিচার ও শাস্তিদান অপরাধ প্রতিরোধেরই অঙ্গ। ধর্ষণ, গার্হস্থ হিংসা, প্রভৃতি অপরাধের ক্ষেত্রে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ, এবং সেগুলির যথাযথ সংরক্ষণের গুরুত্ব কতখানি, তা আর জি কর ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে। তাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থাকে তৎপর, দক্ষ ও উন্নত করতে হবে। তার জন্য চাই জেলা স্তরে ফরেন্সিক পরীক্ষার ল্যাব ও কর্মী, যথেষ্ট আদালত নির্মাণ, আদালত ভবনে ডিজিটাল পরিকাঠামোর ব্যবস্থা। এর প্রতিটির জন্য সরকারি প্রকল্প রয়েছে, বরাদ্দও রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন সেগুলির রূপায়ণে এতখানি ঘাটতি রয়েছে, সে প্রশ্ন করতেই হবে। ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’-এ আক্রান্ত মেয়েদের উপর হিংসার সব সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। এর ফলে আদালতে অপরাধ প্রমাণের পথ সহজ হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু উন্নয়ন দফতর ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ নির্মাণের প্রকল্প ঘোষণা করে ২০১৩-১৪ সালে। তার এক দশক পরেও পশ্চিমবঙ্গে সেগুলি কার্যকর হয়নি। যা বিচারের দুর্বল পরিকাঠামোর একটা দৃষ্টান্তমাত্র। দুষ্কৃতী ছাড়া পেয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় আক্রান্তের পরিবার-পরিজন আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। নিগৃহীতাকে ন্যায় দান প্রশাসনিক কর্তব্য থেকে রাজনৈতিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে। এই অরাজকতা, অব্যবস্থা থেকে মুক্তির প্রথম ও প্রধান শর্ত তদন্ত ও বিচারের পরিকাঠামো গঠন। কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি রাজ্যে কার্যকর করুক তৃণমূল সরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Justice Women Harassment West Bengal government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy