Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সঙ্গিত সমালোচনা...

সুধাপরশে

নব্বই পেরোনো সুচিত্রা মিত্রকে শ্রদ্ধার্ঘ্য আই সি সি আর-এ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪। সুচিত্রা মিত্রের ৯০ বছর পূর্ণ হল। এই উপলক্ষে সম্প্রতি আইসিসিআর-এ রবি ভৈরবীর শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘তব সুধাপরশে’ অনুষ্ঠিত হল। প্রথম পর্বে ছিল অতিথি বরণ। তাঁরা হলেন শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য ও অধ্যাপিকা ড: মীনাক্ষী সিংহ। সংযোজক দেবাশিস বসুর সুকথনে ও সুন্দর উপস্থাপনায় প্রথম পর্বটি অত্যন্ত মনোজ্ঞ হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বে মনীষা বসুর একক রবীন্দ্রগানে সুচিত্রা মিত্র-র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ‘তব সুধাপরশে’।

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪। সুচিত্রা মিত্রের ৯০ বছর পূর্ণ হল। এই উপলক্ষে সম্প্রতি আইসিসিআর-এ রবি ভৈরবীর শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘তব সুধাপরশে’ অনুষ্ঠিত হল। প্রথম পর্বে ছিল অতিথি বরণ। তাঁরা হলেন শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য ও অধ্যাপিকা ড: মীনাক্ষী সিংহ। সংযোজক দেবাশিস বসুর সুকথনে ও সুন্দর উপস্থাপনায় প্রথম পর্বটি অত্যন্ত মনোজ্ঞ হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বে মনীষা বসুর একক রবীন্দ্রগানে সুচিত্রা মিত্র-র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ‘তব সুধাপরশে’। নিবেদন করলেন বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪টি গান শুনিয়ে। রবীন্দ্রনাথের সকালের বিভিন্ন সময়ের জন্য রচিত গানগুলির মধ্যে অনুভব করা যায় ঈশ্বরের সঙ্গে মানবাত্মার নিবিড় যোগ। ‘রজনীর শেষ তারা’, ‘প্রাণের প্রাণ জাগিছে’, ‘এখনও ঘোর ভাঙে না তোর’, ‘তুমি আপনি জাগাও মোরে’, ‘নূতন প্রাণ দাও’— সকালের মুহূর্তগুলি একে একে উন্মোচিত হয়। শরৎকালে জন্ম সুচিত্রা মিত্রের। তাই শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল ‘আমার রাত পোহালো’, ‘আমার নয়ন ভুলানো এলে’।

নাতনি নন্দিনীর জন্য লেখা ‘তুমি ঊষার সোনার বিন্দু’ ‘বিচিত্র’ পর্যায়ের হয়েও শরৎকে ছুঁয়ে যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যায় পৌঁছে শোনা গেল ‘সন্ধ্যা হল গো ও মা’ যেখানে মাতৃরূপ মিলে গেছে সন্ধ্যা আর জীবনসায়াহ্নের রশ্মিরেখায়। ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘তব প্রেমসুধারসে’, ‘আমার নিশীথরাতের বাদলধারা’, ‘হৃদয়ের এ কূল ও কূল’ পর পর পরিবেশিত হল। সব শেষের গান ‘সকল জনম ভরে’।

কিছু কথা — পরিবেশিত গানগুলির মধ্যে অনেকগুলি গান ছিল যেগুলির জন্য যথেষ্ট অনুশীলন প্রয়োজন। অনেক শ্রোতা থাকেন যাঁদের কাছে শব্দ প্রক্ষেপণ যন্ত্রের মাধ্যমে গায়ক-গায়িকার কণ্ঠস্বরটি সুখশ্রাব্য হলেই প্রশংসা করেন। আবার কিছু শ্রোতা থাকেন যাঁদের কাছে সঙ্গীতের আনুষঙ্গিক অনেক দিকই পরিচিত। এর মধ্যে কোনওটার অভাব ঘটলেই সেই শ্রোতাদের কাছে কিছু অস্বস্তির উদ্রেক হয়। সুর এবং তালের সঠিক ব্যবহার সম্বন্ধে সে দিন গীত কয়েকটি গানের উল্লেখ খুবই প্রয়োজন বলে মনে হয়—‘রজনীর শেষ তারা’, ‘প্রাণের প্রাণ জাগিছে’, ‘তুমি আপনি জাগাও মোরে’, ‘তুমি ঊষার সোনার বিন্দু’, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘তব প্রেমসুধারসে’।

‘আমার রাত পোহালো’ এই গানটির সঞ্চারী অংশে ‘গানে গানে নিয়ে তারে চুরি করে’ এই ভাবে আমাদের জানা নেই। জানা আছে ‘নিয়েছিলে’। যদি পাঠান্তর থাকে তবে উল্লেখ করলে ভাল হত। ‘সকল জনম ভরে’ গানটিতে ‘ও মোর’ এই অংশটি দু’বার দু’রকম সুরে গাওয়া হয়েছে। প্রচলিত বাণী থেকে ব্যতিক্রম হলে উল্লেখ করে গাইলে আমরা উপকৃত হতে পারি। শিল্পী সম্পর্কে আর একটি শেষ কথা বলব, তিনি যেন অনুসরণ করেন অনুকরণ নয়, তাতে নিজস্ব সত্তা বিলুপ্ত হয়।

এই পর্বে ভাষ্যপাঠে ছিলেন সুবীর মিত্র। এক সময় সুচিত্রা মিত্র ও সুবীর মিত্র জুটির শ্রুতিনাটক শ্রোতাদের মনে সাড়া জাগিয়েছিল। আজও তা অমলিন। তাঁর পাঠ ছিল সংযত ও সংবেদনশীল। উচ্ছ্বাস ও অতিনাটকীয়তা বর্জিত, মার্জিত উচ্চারণে এবং কণ্ঠমাধুর্যে সুবীরের ভাষ্যপাঠ অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছিল। মনীষার ভাষ্যরচনা গানগুলির সুন্দর ভূমিকা তৈরি করেছিল। সকালের সূর্য ও জলের উপর তার প্রতিফলন ছিল নির্বাচিত গানের সঙ্গে মানানসই প্রেক্ষাপট। অনুষঙ্গ যন্ত্রীরা ছিলেন বিপ্লব মণ্ডল, প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত, অজয় দাস, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অম্লান হালদার ও সঞ্জীবন আচার্য।

তৃতীয় এবং শেষ পর্বে ছিল শাঁওলী মিত্রের একক কণ্ঠে ‘ডাকঘর’ নাটকের অংশবিশেষের পাঠ ও অভিনয়।

এই নাট্যব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘ডাকঘর’-এর অমল চরিত্র তাঁর নিবেদনে অনবদ্য। অন্যান্য চরিত্রগুলি যেমন মাধব দত্ত, ঠাকুরদা/ ফকির, মোড়ল, কবিরাজ, দইওয়ালা, সুধা— শাঁওলী প্রত্যেক চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম ও অবিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন চরিত্রের উপযোগী বাচনভঙ্গি এবং সেইসঙ্গে কণ্ঠস্বরের নিয়ন্ত্রণ বা প্রক্ষেপণে এই পর্বটিতে অন্য মাত্রা সংযোজিত হয়েছিল। অনুভবের সূক্ষ্ম জায়গাগুলি শাঁওলীর অভিনয় নৈপুণ্যে শ্রোতাদের নাটকের মর্মলোকে পৌঁছে দিতে পেরেছিল।

সেলুলয়েডে রবি

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল ‘সেলুলয়েডে রবি’। একক গানে সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্র। চলচ্চিত্রের ভাব প্রকাশ করতে রবীন্দ্রকাহিনির পাশাপাশি অন্য কাহিনিতেও ব্যবহৃত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান। ১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথ পরিচালিত প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘নটীর পূজা’ থেকে শুরু করে একেবারে এ প্রজন্মে তৈরি হওয়া ‘চতুরঙ্গ’ ‘এলার চার অধ্যায়’ বা ‘নৌকাডুবি’-র মতো বহু চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রগানের সার্থক ব্যবহার আজও ছবির দৃশ্যকে কী ভাবে বাঙ্ময় করে তুলেছে— এটাই ছিল এই সন্ধ্যার উপস্থাপনার মূল বিষয়। শিল্পীর কণ্ঠে ‘হার মানালে গো’, ‘বিধির বাঁধন’, ‘গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে’— বেশ মনোরম। মঞ্চসজ্জায় সৌগত চট্টোপাধ্যায়। উত্তীয় জানার আলোকসম্পাত অনবদ্য।

গান ও নৃত্যনাট্যে

সম্প্রতি রূপমঞ্জরীর অনুষ্ঠানে শুরুতেই গাইলেন অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’। পরে ছিল নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’। মুক্তা ঘোষের পরিচালনায় অভিনয়ে নজর কাড়লেন দেববর্ণিনী মুখোপাধ্যায়, জয়িতা দে প্রমুখ। শেষ পর্বে সুস্মিতা গোস্বামী শোনালেন নজরুলগীতি ‘দোলা লাগিল’। দীপশ্রী সিংহের ‘গগনে কৃষ্ণ মেঘ’ বেশ ভাল। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন রমাপ্রসাদ দেব, রাজা রায়, প্রমুখ। কবিতায় তাপস নাগ, প্রসূন গুহ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন রাজর্ষি রায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE