Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

যখন ‘দাগ’ থাকে না নাভির পাশে

অপারেশনের পরেও? কী করে? বলছেন ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়অপারেশনের পরেও? কী করে? বলছেন ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৯:০৩
Share: Save:

অপারেশন হল কিন্তু পেটে কোনও দাগ নেই। এ রকমও হয় নাকি?

উ: হ্যাঁ এখন তো তাই হচ্ছে। বেশির ভাগ অপারেশনই ল্যাপারস্কোপিক। তাতে মাত্র কয়েকটা ছিদ্র করা হয়। সুতরাং দাগ নিয়ে তো চিন্তা থাকে না।

মেদহীন সুন্দর পেট। তাতে ছিদ্র। শর্ট লেন্থ ব্লাউজ বা নাভির নীচে শাড়ি পরতে ভীষণ অস্বস্তি হয়...

উ: কোনও অস্বস্তি হবে না। কোনও ছিদ্র-র দাগও থাকবে না। একেবারেই মিলিয়ে যাবে বলতে পারেন। এক রকমের আঠা লাগিয়ে ফুটো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শখ করে শাড়ি পড়ুন বা শর্ট লেন্থ ব্লাউজ।

কিন্তু অনেক সময় সেই ছিদ্র সেলাই করতে হয় শুনেছি?

উ: সেলাই করলেও দাগ মেলানোর জন্য ভাল ওষুধ আছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে দাগ একেবারে মিলিয়ে যাবে।

এই যে আঠা দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করা হয়, তাতে কোনও ক্ষতি হয় না?

উ: না না। এ ভাবেই আজকাল হচ্ছে।

অবিবাহিত বা কমবয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে দাগ লুকোনো কত জরুরি বুঝতে পারছেন তো?

উ: দাগ অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা। পেটে আগে অপারেশন হয়েছে শুনলে অনেকে সেটাকে সহজ ভাবে নিতে পারেন না। এখনও ধারণা, পেটে অপারেশন মানেই সেই মেয়ে ভবিষ্যতে মা হতে পারবেন না। গায়নোকলজিক্যাল অপারেশন হলে তো কথাই নেই। তাই অনেক মেয়েই ব্যাপারটা লুকিয়ে যেতে চান। তা ছাড়া সৌন্দর্যের ব্যাপারটাও তো আছে।

অবিবাহিত মেয়েদের ইউটেরাসের টিউমার ফাইব্রয়েড বড় সমস্যা। এদের ক্ষেত্রে কি ল্যাপারস্কোপি করা সম্ভব?

উ: হ্যা।ঁ ৫০-৬০% মহিলাদের ইউটেরাসে টিউমার বা ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে। ইউটেরাসের বাইরে হলে ল্যাপারস্কোপি করে টিউমার বের করা হয়। আর ইউটেরাসের মধ্যে টিউমার থাকলে এক রকমের যন্ত্র প্রসবের রাস্তা দিয়ে ঢুকিয়ে টিউমারকে ছোট ছোট করে কেটে ওই পথেই বের করে আনা হয়। তাতে দাগের কোনও বালাই নেই।

প্র: খুব বড় টিউমার হলেও ছোট ছিদ্র দিয়ে বেরোবে?

উ: হ্যা।ঁ এক রকমের যন্ত্র দিয়ে টিউমারকে টুকরো টুকরো করে ছোট করে ফেলা হয়। তার পর ফুটো দিয়েই বের করে আনা হয়। কোনও দাগের ঝামেলাও রইল না। বোঝাই যাবে না এত বড় টিউমার অপারেশন হয়েছে। পেট কাটার দরকার পড়ে না।

প্র: তাতে কোনও সমস্যা হয় না?

উ: না। বরং আরও সুবিধে। আগে হত কী এ রকম বড় টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে প্রচুর ব্লিডিং হত। ল্যাপারস্কোপির সময় পেটের ভেতর ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাতে ভেতরকার জিনিসগুলোকে পাঁচগুণ বড় দেখায়। তাতে ছোট ছোট শিরা সহজেই বন্ধ করা হয়। আর যে শিরা থেকে ব্লিডিং হওয়ার সম্ভাবনা, সেগুলোকে ক্লিপ দিয়ে সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়। তাই ব্লিডিং একেবারেই হয় না। তাতে করে অপারেশনের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হয়। আগে ব্লিডিং থেকেই তো যত্ত সব ঝামেলা তৈরি হত।

প্র: কী রকম ঝামেলা?

উ: ঝামেলা বলতে এত ব্লিডিং হত, যে কখনও কখনও রক্ত দেওয়ার দরকার পড়ত। ভেতরের সব কিছু জড়িয়ে গিয়ে পরবর্তীতে প্রেগন্যান্সি আসতে অসুবিধে হত। কখনও বা ইউটেরাসটাই বাদ দিয়ে দিতে হত। ক্লিপ দিয়ে শিরা আটকে দিলে অপারেশনটা খুব পরিষ্কার হয়। ব্লিডিং-এর বালাই নেই। ইনফেকশনের সম্ভাবনাও অনেক কম। এই ভাবে অপারেশন করার জন্য ব্যথা একেবারেই হয় না। রোগীও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।

প্র: তার মানে ফাইব্রয়েড অপারেশনের পর বাচ্চা আসতে অসুবিধে নেই?

উ: না। ল্যাপারস্কোপিতে ছিদ্রর মাধ্যমে অপারেশন করা হয় বলে পেটের ভেতরকার সব কিছু আগের মতো থাকে, জড়িয়ে যায় না। ইনফেকশনও হয় না। তাই পরে বাচ্চা আসতে কোনও অসুবিধে নেই।

প্র: এখন তো আকছার মেয়েদের ইউটেরাসে টিউমার হচ্ছে। না হওয়ার উপায় কি?

উ: সবুজ শাকসব্জি, মাছ আর ফল বেশি করে খান। এগুলো জরায়ুর টিউমারের প্রবণতা কমায়। বিফ, রেডমিট, হ্যাম, সিগারেট খেলে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

প্র: ইউটেরাসের টিউমার এত বড় হয় যে মনে হয় কয়েক মাসের প্রেগন্যান্ট। অথচ ঝটপট অপারেশন তো সব সময় করা যায় না?

উ: এমনিতে কোনও অসুবিধে না হওয়ায় অনেকেই প্রথমে কিছু টের পান না। ফলে ডাক্তারের কাছে আসেন না। এ দিকে টিউমারও তার মতো বড় হতে থাকে।

প্র: আগে থেকে বোঝা যায় না?

উ: অনেক সময়ই এর কোনও লক্ষণ থাকে না। যদি দেখেন খুব বেশি ব্লিডিং হচ্ছে, বা পেটে ব্যথা, মল-মূত্র নিঃসরণে অসুবিধে হচ্ছে, তখন অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।

প্র: শুনেছি মোটা মেয়েদের ল্যাপারস্কোপিতে সমস্যা হয়।

উ: একেবারেই নয়। বরং চেহারা ভারী হলে ল্যাপারস্কোপিতেই সুবিধে। পেট কেটে অপারেশন করতে গেলে চর্বির স্তরের জন্য অপারেশন করতে অসুবিধে হয়। জড়িয়ে যায়। ল্যাপারস্কোপিতে সহজেই অপারেশন করা যায়।

যোগাযোগ- ৯৮৩০৭৭৭৯৮৯

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE