Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
মুখোমুখি...

মেনোপজ মানেই বুড়িয়ে যাওয়া নয়

শারীরিক সম্পর্কেরও ‘ইতি’ নয়। ডা. রত্নাবলী চক্রবর্তী-র সঙ্গে কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়শারীরিক সম্পর্কেরও ‘ইতি’ নয়। ডা. রত্নাবলী চক্রবর্তী-র সঙ্গে কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০০:১৬
Share: Save:

প্র: আধুনিক চিকিৎসায় জীবনকাল বেড়ে গেছে, কিন্তু মেনোপজ সেই একই জায়গায়?
উ: এটা ঠিক, মহিলাদের এখন মেনোপজ-পরবর্তী জীবনটা অনেক বেশি দিন কাটাতে হয়। তবে মেনোপজ নিয়ে অত ভয়ের কী আছে? এ তো স্বাভাবিক ব্যাপার।

প্র: মেনোপজ হলে তো এক ধাক্কায় বুড়িয়ে যাওয়া। প্রায় সব শেষ?
উ: না না, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়।

প্র: শারীরিক সম্পর্কে তো ইতি টানতে হবে?
উ: তা কেন? কিছু কিছু সমস্যা হয় ঠিকই। ড্রাইনেস চলে আসে, চুলকানি আর ব্যথা হতে পারে। তা ছাড়া ইনফেকশন হতে পারে। তবে এ সবের জন্য ওষুধ আছে।

প্র: এমনিতেই এখন বিয়ের বয়স বেড়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তো মেনোপজ একটা বড় সমস্যা?
উ: মেনোপজ হতে হতে ৪৮ থেকে ৫০। শারীরিক সম্পর্কে বা লিবিডোতে সমস্যা হলে তার চিকিৎসা আছে।

প্র: শুনেছি মেনোপজের পর হট ফ্লাশ, অনিদ্রা, বুক ধড়ফড় এ সব সমস্যা নাকি অনেকের হয়। অনেকে আবার প্রায়ই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন?
উ: হ্যাঁ হয়। তবে ঠিকমতো চিকিৎসা করালে ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

প্র: মেনোপজ পেছনো যায়?
উ: না।

প্র: আগে থেকে বোঝা যায় কবে হতে পারে মেনোপজ?
উ: হরমোন টেস্ট করালে একটা আন্দাজ পাওয়া যায়।

প্র: শুনেছি মেনোপজ হয়ে গেলেও কৃত্রিম উপায়ে পিরিয়ড চালু রাখা যায়?
উ: হ্যাঁ। হরমোন দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে পিরিয়ড চালু রাখা যায়।

প্র: তবে তো তাই করলেই হয়?
উ: কী দরকার? আগে মেনোপজের পরের নানা সমস্যার জন্য এমনটা করা হত। এখন ওষুধ দিয়েই সে সব মিটিয়ে দেওয়া যায়। সেখানে খামকা পিরিয়ডের ঝক্কি নেবেন কেন?

প্র: কিন্তু পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়াটাও তো একটা ধাক্কা?
উ: পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। অনেকের ধারণা পিরিয়ড চালু রাখতে পারলে বুঝি সব ঠিক। নইলে নাকি বুড়ো হয়ে যাবে। কাউন্সেলিং করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললে সমস্যা মিটে যায়। বেশি হতাশায় ভুগলে কাউন্সেলারের কাছে পাঠানো হয়।

প্র: অনেকের তো কম বয়সেও মেনোপজ হয়। মানে অপারেশন করে ইউটেরাস বাদ দেওয়া হল, তখন?
উ: ইউটেরাসের সঙ্গে ওভারি দুটো বাদ গেলে সার্জিকাল মেনোপজ হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু দিন হরমোন দিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে হয়। নইলে খুব তাড়াতাড়ি হাড় ক্ষয়ে যায়, হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনিতে স্বাভাবিক ভাবে মেনোপজ হলেও এক বার অন্তত ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া দরকার।

প্র: মেনোপজের জন্যও ডাক্তার দেখাতে হবে?
উ: ঠিক মেনোপজের জন্য নয়। পরবর্তী সময়ে যাতে সুস্থ থাকেন, তার জন্য।

প্র: ঠিক বুঝলাম না...
উ: মেনোপজের পর থেকে শরীরে কিছু পরিবর্তন হয়। বয়সের কারণেও নানা রোগ বাসা বাঁধে। পঞ্চাশের পর থেকে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে অনেক অসুখকে এড়ানো যায়। মেনোপজকে সে ক্ষেত্রে অ্যালার্ম হিসেবে ধরা হয়। মানে মেনোপজ আপনাকে মনে করিয়ে দেবে, এ বার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নইলে কিন্তু নানা অসুবিধেয় জেরবার হতে পারেন।

প্র: কী ধরনের অসুবিধে?
উ: মেনোপজের পর অনেকের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স হয়। এতে প্রস্রাব আটকে রাখতে পারে না। তার জন্য কিছু এক্সারসাইজ শিখিয়ে দেওয়া হয়। প্রেসার, সুগার, বা হার্টের নানা সমস্যা এড়াতে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে বলা হয়। তা ছাড়া পঞ্চান্নর পরে মেয়েদের ইউটেরাস, ওভারি, ব্রেস্ট, সার্ভিক্সের ক্যানসার বেশি হয়ে থাকে। তাই মেনোপজের সময় এক বার আসতে বলা হয়। তখন কী ভাবে এই ধরনের অসুখকে প্রথম পর্যায়ে ধরা যাবে তা শিখিয়ে দেওয়া হয়। যেমন বাড়িতেই শিখিয়ে দেওয়া হয় নিয়মিত ব্রেস্ট পরীক্ষা করার কায়দা।

প্র: তার মানে মেনোপজের সঙ্গে ডাক্তার দেখানোর সরাসরি সম্পর্ক নেই?
উ: নেই, আবার আছেও। বাস্তবে মেনোপজ কোনও সমস্যা নয়। কিন্তু এর জন্য পরে অনেকগুলো অসুবিধে হতে পারে। ধরুন মেনোপজের পরে কেউ ভীষণ হতাশায় ভুগছেন। তার থেকে খাওয়া বেড়ে গেল। দীর্ঘদিন এ রকম হতে হতে শেষমেশ সুগার হয়ে অন্য নানা সমস্যা তৈরি হয়ে গেল। এই জন্য মেনোপজের পর এলে কী ধরনের সমস্যা হবে, কী ভাবে তার মোকাবিলা করবেন, সেটা জানিয়ে দেওয়া যায়। তা ছাড়া শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যাওয়ায় এ সময় হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। ঠিক মতো যত্ন নিলে অস্টিয়োপোরোসিস হয়ে হাড় ভাঙা আটকানো সম্ভব।

প্র: কী রকম যত্ন?
উ: আয়েশি জীবনযাপন অস্টিয়োপোরোসিস বাড়ায়। একটানা বসে বসে টিভি দেখতে অভ্যস্ত হলে হাড় ক্যালসিয়াম খোয়াতে থাকবে। স্টেরয়েড, রক্ত তরল রাখার ওষুধ বা থাইরয়েডের ওষুধ অস্টিয়োপোরোসিসের সম্ভাবনা বাড়ায়। হয়তো থাইরয়েড না মেপেই অনেক দিন ধরে আন্দাজে ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। দরকার মতো ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি-৩ দেওয়া হয়। কিছু এক্সারসাইজও শিখিয়ে দেওয়া হয়।

প্র: আচ্ছা, অনেককে বলতে শুনেছি, মেনোপজ কখন হল, সেটা বুঝতেই পারেননি? তা হলে ঠিক সে সময় আসবেন কী করে?
উ: মেনোপজের আগে পিরিয়ড একটু অনিয়মিত হতে থাকে। এক বছর টানা বন্ধ থাকলে ধরে নিতে হবে মেনোপজ হয়ে গেছে।

প্র: মানে আর কখনও পিরিয়ড হবে না?
উ: না। হলে কিন্তু সেটা অস্বাভাবিক।

প্র: কেন?
উ: ইউটেরাসের ক্যানসার হলে এমনটা হতে পারে। মেনোপজের বহু বছর পর দেখলেন একটু ব্লিডিং হল। ব্যাপরটা এড়িয়ে যাবেন না। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখাতে হবে। মেনোপজের পর প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করানো দরকার।

প্র: মেনোপজের পর কী ভাবে নিজেকে ভাল রাখব?
উ: ক্যালোরি যুক্ত খাবার আর তৈলাক্ত খাবার কম খাবেন। ভাত, রুটি, দুধ, মাছ, ফল, শাকসব্জি রোজকার খাবারে দরকার। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। স্ট্রেস যেন আপনাকে ঘায়েল করতে না পারে। দরকারে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে। একাকীত্বে ভুগলে তার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।

প্র: একাকীত্ব দূর মানে কাউন্সেলিং করাতে হবে?
উ: বাড়িতে আগে নিজেই চেষ্টা করুন না। পুরনো হবিগুলোকে ফিরিয়ে আনুন। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। কোনও সামাজিক কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। টিভি দেখায় নিজেকে আটকে রাখবেন না। ব্রেনকে অ্যাকটিভ রাখুন।

প্র: কী ভাবে ব্রেনকে অ্যাকটিভ রাখব?
উ: গেম খেলুন, মুদি দোকানের হিসেব রাখুন, অঙ্ক করুন, শব্দজব্দ করুন। কিছু না হলে ডায়রি লিখুন।

মেনোপজের পরে

• মেনোপজের পর চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

• বাড়িতে নিয়মিত ব্রেস্ট পরীক্ষা জরুরি

• প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করানো দরকার

• আয়েসি জীবনে আটকে পড়বেন না

• ব্রেনকে সচল রাখতে নানা কাজ করুন

• ভাত, রুটি, দুধ, মাছ, ফল, শাকসব্জি বেশি করে খেতে হবে

যোগাযোগ-২৩৩৭-৪৯০১

অন্য বিষয়গুলি:

menopause rumi ganguli rumi gangopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE