Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

মন খারাপ মানেই ডিপ্রেশন নয়

তখন পছন্দের বই পড়ুন বা গান শুনুন। মন ভাল রাখার টিপস দিলেন ডা. অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। শুনলেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।তখন পছন্দের বই পড়ুন বা গান শুনুন। মন ভাল রাখার টিপস দিলেন ডা. অমিতাভ মুখোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৪
Share: Save:

প্র: হঠাৎ হঠাৎ মন বেজায় খারাপ হয়ে যায়। ডিপ্রেশনে চলে যাই। কী করি বলুন তো?

উ: মন খারাপ তো হতেই পারে। কিন্তু সেটা মানেই ডিপ্রেশন নয়।

প্র: আরে খুব হতাশ লাগে যে। কিচ্ছু ভাল লাগে না তখন...

উ: কাজকর্ম করতে পারেন?

প্র: সে তো করতেই হবে। কিন্তু মন বিষণ্ণ হয়েই থাকে।

উ: অফিসে বা পরিবারে কোনও সমস্যার জন্য এক-আধ দিন মন বিক্ষিপ্ত বা বিষণ্ণ হতেই পারে। সঙ্গী বিচ্ছেদ হলে বা প্রিয়জনকে হারালে যেমন বেশ কিছু দিন মন খারাপ থাকে। নিজে নিজে ভাল হয়ে যায়। এ রকম মন খারাপ ডিপ্রেশন নয়।

প্র: তবে ডিপ্রেশন কখন?

উ: মন খারাপ যদি একটানা বহু দিন চলতে থাকে, সঙ্গে কাজের ইচ্ছে, ঘুম বা খিদের ইচ্ছে চলে যায় বা কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না করে, তবে সেটা ডিপ্রেশন। নিজেকে গুটিয়ে নেন অনেকে। কারও কারও এর সঙ্গে মাথা-গা-হাত-পা ব্যথা হতে পারে। সব সময় নিজেকে ছোট করে দেখা বা আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। নেগেটিভ চিন্তা গ্রাস করতে করতে অনেকের মৃত্যু চিন্তাও আসে।

প্র: এ তো সাংঘাতিক ব্যাপার।

উ: এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। কাউন্সেলিং দরকার। প্রয়োজনে ওষুধ।

প্র: আর এই যে যখন তখন মন খারাপ, তার থেকে রেহাই মিলবে কী করে?

উ: আপনাআপনিই কমে যাবে। কোনও ওষুধ লাগবে না। শুধু মন খারাপকে প্রশ্রয় দেবেন না।

প্র: মন তো কেউ এমনি এমনি খারাপ করে না...

উ: দেখুন একটা প্রবাদ চালু আছে। প্রথমবার ডিপ্রেশন হয় প্রিয়জনের মৃত্যুর পর। তার পর ডিপ্রেশন হয় পোষ্য মারা গেলে। তার পর ডিপ্রেশন হয় রুমাল হারালে! আর তার পর থেকে মন খারাপ হতে থাকে এমনি এমনি। এর আর কোনও কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই যে কারণেই মন খারাপ হোক না কেন, প্রশ্রয় দেবেন না। বরং কাজের মধ্যে ডুবে থাকবেন। দেখবেন মন খারাপ হচ্ছে না।

প্র: কিন্তু কাজ মিটলে তো আবার যে কে সেই?

উ: তখন যেটা ভাল লাগে, সেটা করুন। গান শুনুন। বই পড়ুন। বাগানে সময় কাটান। কাউকে ফোন করুন, চ্যাট করুন। অন্য কিছুতে মনকে ব্যস্ত করে ফেলতে হবে।

প্র: মেঘলা দিনেও তো মন খারাপ হয়ে যায়।

উ: আসলে সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি ব্রেনের ফিল গুড কেমিক্যালগুলোকে উজ্জীবিত করে। তাই রোদ না উঠলে মন খারাপ হয়। সে ক্ষেত্রেও একই টোটকা। মনকে ব্যস্ত রাখুন।

প্র: ধরুন অফিসে ব্যাপক ঝামেলা চলছে। তখন?

উ: ঝামেলা যা-ই হোক না কেন, ব্যাপারটা আপনি কী ভাবে নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করবে। ধরুন একটা লোক আপনাকে দেখে হাসল, আপনি ভাবতে পারেন আপনাকে টিটকিরি মারল। আবার কেউ ভাবতে পারে লোকটা হয়তো তাঁর পরিচিত...। আপনি কী ভাবে ব্যাপারটাকে দেখছেন, তার ওপর নির্ভর করবে। আর অফিসের যে কোনও ঝামেলার মূলে থাকে উচ্চাশা। কোনও ব্যাপারে সাফল্য না মিললেই মনে হয় সব শেষ। উচ্চাশা নিয়ন্ত্রণে রাখলে মন খারাপ কম হবে।

প্র: তাই বলে উচ্চাশা থাকবে না?

উ: অবশ্যই থাকবে। কিন্তু সেটা না পেলেই সব শেষ তেমনটা যেন না হয়। প্রথমেই ধরতে হবে ব্যাপারটা সাময়িক। এক বার সাফল্য না পেলে যে বার বার তেমনটাই হতে থাকবে তা নয়। নিজেকে বোঝাবেন, আমি এই ব্যাপারটাকে এত সিরিয়াসলি নেব না। আজ হয়নি কাল হবে। যেটুকু পাচ্ছি, সেটাতেই বরং পুরোপুরি মন দিই। ব্যাপারটাকে স্পোর্টিংলি নিতে হবে। এই ভাবে নিজেকে মোটিভেট করতে হবে।

প্র: এগুলো বলতেই সোজা। সমস্যা যখন আসে, তখন.....

উ: এক জন কী ভাবে বেড়ে উঠেছে, তার ওপর ব্যাপারটা নির্ভর করে।

প্র: বুঝলাম না...

উ: দেখবেন কিছু বাচ্চা অশান্তির পরিবেশে বড় হয়। সারা দিন হয়তো বাবা-মা ঝগড়া করছে। তাতে বাচ্চাটি ইনসিকিয়োরিটিতে ভোগে। সেটা বড় হয়েও থেকে যায়। আবার অনেক মা’কে বলতে শুনবেন, আমার ছেলে কিচ্ছু লুকোয় না, আমায় সব কথা বলে। ১৭ বছরের ছেলে মায়ের সঙ্গে ঘুমোচ্ছে। বা কলেজে মেয়ে পড়তে যাচ্ছে, মা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে বড় হলে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, এদের স্ট্রেস বেশি হয়। চাপ নেওয়ার ক্ষমতা কম হয় আর ডিপ্রেশন হয়।

প্র: ধরুন কেউ এ ভাবে বড় হয়েছে। সে চাপ সামলাবে কী করে?

উ: স্ট্রেস নেওয়ার ক্ষমতা অল্প অল্প করে বাড়াতে হবে। ধরুন কেউ অফিস নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। বাড়িতে কোনও কাজ করেন না। সে ক্ষেত্রে বাড়ির কাজ একটু করতে হবে। প্রয়োজনে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে। দরকার মতো ‘না’ বলতে শিখতে হবে। নিয়মিত প্রাণায়াম করলেও স্ট্রেস নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। ডায়রি লিখুন। তাতে মনের গ্লানিগুলো পাতায় লিখে ফেললে স্ট্রেস কমে। লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন করলেও স্ট্রেস নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে।

প্র: তাহলে মন খারাপও মিটবে?

উ: অনেকটা। আসলে মনের মধ্যে সন্তুষ্টি ব্যাপারটা থাকলে কখনই অসুখী হবেন না। কিন্তু যেটুকু হ্যাপিনেস আছে, সেটাকেই যদি দেখতে না পান, তবে কিন্তু সন্তুষ্টি কিছুতেই আসবে না।

প্র: বয়স্করাও ডিপ্রেশনে ভোগেন

উ: বয়স কালে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানা সমস্যা হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্ব। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো দরকার।

প্র: অবসর নেওয়ার পর তো অনেককেই ডিপ্রেশনে ভোগেন...

উ: হ্যা।ঁ আসলে ইনকাম কমে গেল, প্রতিপত্তি কমে গেল। তাই মনে করেন ফালতু হয়ে গেলাম। দেখবেন ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেলেও মাঝবয়সি মহিলাদের একই সমস্যা হয়। এটা মিডল এজ ক্রাইসিস। সে ক্ষেত্রে আগে ভাগেই রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান তৈরি করতে হবে। নিজস্ব ভাল লাগা তৈরি করতে হবে। পুরনো ভাল লাগাগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ভাবে ভাবতে হবে যে, এত দিন বন্ধন ছিল, তাই কিছু করতে পারিনি। এ বার পেনডিং কাজ করব।

যোগাযোগ-৯৮৩০০৪৯৮৪০

অন্য বিষয়গুলি:

dr. amitabha mukhopadhyay patrika rumi gangopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE