ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
পত্রিকা: শুরুতেই একটা রেজোলিউশন নেওয়া যাক।
লোপা: (হাসি হাসি মুখে) সেটা কী?
পত্রিকা: যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না।
জয়: (লোপার দিকে চেয়ে) এটা ওর জন্য খুব জরুরি। এত মিথ্যে বলে সারাদিন।
লোপা: (হা হা হা) মিথ্যে নয়। গুল মারি। মানে, মারতে হয় আরকী! ঠিক আছে, এখন সত্যিটাই বলব। (হাসি)
পত্রিকা: তা’হলে লোপাকে দিয়েই শুরু করি। সত্যি করে বলুন তো, জয় আপনার চেয়ে শ্রেয়াকে বেশি পছন্দ করেন, না?
জয়: (অপ্রস্তুত) এটা কী ধরনের প্রশ্ন হল?
লোপা: (জয়ের দিকে তাকিয়ে) আরে এত চমকালে হবে! নারীকণ্ঠ হিসেবে শ্রেয়াই তো তোমার প্রথম পছন্দ!
জয়: না, দেখুন, সে তো আকৃতি কক্করের সঙ্গেও কাজ করেছি...
পত্রিকা: শুধু কাজের কথা হচ্ছে না, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আপনি কিন্তু সত্যিটা বলতে বসে প্রথমেই ডিপ্লোমেসি শুরু করে দিলেন।
লোপা: ধুর্। জয় বলবে না। ও খুব সেয়ানা। আমি বরং বলি, শ্রেয়া হল ওর স্বপ্নের রানি। তবে সোমলতা, অন্বেষা, শুভমিতাকেও জয় ভালবাসে।
জয়: ভালবাসে না, গান গাওয়াতে ভালবাসে।
পত্রিকা: ওই হল! জয়ের পছন্দ নয় জানা গেল। লোপা আপনার? কোন মিউজিশিয়ানের সঙ্গে কাজ করে ভাল লাগছে?
লোপা: (অনেক ভেবে) অনুপমের (রায়) কাজ ভাল লাগছে। ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটার জন্য যে কণ্ঠটা ও বেছে নিয়েছে, সেটা খুব ইন্টারেস্টিং। ও জানে কাকে দিয়ে কোন গান হবে।
পত্রিকা: ব্যস? আর কেউ না? আপনি তো কবীর সুমন, শান্তনু মৈত্রর মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
লোপা: কবীর সুমনের সঙ্গে কাজ করে সত্যিই ভাল লেগেছিল। আমি শুনেছি উনি খুব খুঁতখুঁতে আর রাগী। আমার রেকর্ডিং-এর সময় কিন্তু তেমন কিছু লাগেনি। ‘বুনোহাঁস’-এ শান্তনু মৈত্রর কম্পোজিশনে কাজ করলাম। উনি আমার গলাটাকে ভেঙে একটা অন্য স্বর বের করে এনেছেন। গানটা এত ভাল, অথচ তেমন হিট করল না।
পত্রিকা: আপনাদের দু’জনের ক্ষেত্রেই বড় হাউস, ব্যানার এগুলো কাজ করে না। জয়ের অনেক ভাল কম্পোজিশন যেমন হারিয়ে গেছে, তেমন লোপামুদ্রাকেও লোকে এখনও ‘বেণীমাধব’-এ আটকে রেখেছে। খারাপ লাগে না?
জয়: আমি কিন্তু আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট।
পত্রিকা: আবার সেই ডিপ্লোমেসি!
জয়: দেখুন, আমি পি আর করতে পারি না। সেটা না করেও যে গান নিয়ে সারাক্ষণ থাকতে পারি, আমার কাছে এটাই অনেক।
পত্রিকা: তা হলে বড় ব্যানারে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সবাই পি আর করে কাজ পান বলছেন?
জয়: কিছুটা তো পি আর করতেই হয়।
লোপা: গান নিয়ে থাকলেই কিন্তু আমার চলে না। সোজা কথা, আমি রোজগারের জন্য গান গাই। তবে এটাও ঠিক, বড় হাউসের কাছে ভিক্ষা চাইতে পারি না বলে, আমাদের গান যতটা প্রচার পাওয়ার কথা, পায়নি।
পত্রিকা: কিন্তু লোকে তো বলে, লোপামুদ্রা মিত্রর জন্যই জয় সরকারের খ্যাতি।
লোপা: সে নিন্দুকেরা তো কত কথাই বলে। বলতেই থাকে।
পত্রিকা: আপনি কী বলেন?
লোপা: দর্শক-শ্রোতাকে বোকা বানানো অত সহজ নয়।
জয়: (হেসে) ব্যস্, লোপামুদ্রা মিত্রর লক্ষ্মী বাঈ ইমেজটা বেরিয়ে পড়ল এ বার।
পত্রিকা: তার মানে?
জয়: ও তো নিজেকে তাই-ই ভাবে। সব সময় একটা যুদ্ধং দেহি ভাব। প্রথমে আমিও ধোঁকা খেয়ে গেছিলাম।
পত্রিকা: প্রথম দেখেছিলেন কবে?
জয়: কোনও একটা অনুষ্ঠানে। মেলায় বোধহয়...
লোপা: আমার মনে আছে, সিঁথির মোড়ের মেলায়!
জয়: হ্যা।ঁ দেখেছিলাম একজন মহিলা অমন কবিতার গান গেয়ে দর্শককে নিজের মুঠোয় ধরে রাখছেন, আমি তো ওখানেই ফ্ল্যাট! আজ বুঝি আমাকেও ওই দর্শকদের মতো করেই জীবনের মুঠোয় লোপা ধরে রেখে দিয়েছে এখন (মুচকি হেসে)।
পত্রিকা: কেন আপনি কি মুঠো ছেড়ে বেরোতে চাইছেন?
লোপা: ও ছেড়ে যেতে পারলে আমি বাঁচি (গলা তুলে)।
জয়: আচ্ছা প্রশ্নটা তো আমাকে করা হয়েছে, তুমি উত্তর দিচ্ছ কেন?
লোপা: তুমি সত্যিটা বলবে না তো,তাই...
জয়: আমি আমার একটা ক্লোন তৈরি করে নিয়েছি। ক্লোনটা মুঠোয় থাকে।
পত্রিকা: জয় তো আপনার চেয়ে ছোট, না?
লোপা: (চোখ উঁচু করে) ইয়েসসস্! তবে সেজেগুজে থাকলে জয়ের চেয়ে আমি দশ বছরের ছোট, আসলে পাঁচ বছরের বড়।
জয়: ভুল! চার বছর এগারো মাস!
পত্রিকা: আরে, এগারো মাস-বারো মাসে কী তফাত?
জয়: তা না, ও অনেক সময় ছ’ বছরও বয়স বাড়িয়ে বলে, ভাবে কেমন দিলাম! আচ্ছা বলুন তো এটা নিয়ে কেউ জাহির করে?
লোপা: অবশ্যই! জাহির তো করবই। দেখুন, সত্যিটা বলে দিচ্ছি বলে কেমন আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে জয়...আমি যে ওর চেয়ে বয়সে বড় সেটা ও এনজয় করতে পারে না। আমি কিন্তু এনজয় করি। আসলে আমার তো বয়সই বাড়ে না। আর জয়কে দেখেই বাচ্চা লাগে, কিন্তু আসলে ও হদ্দ বুড়ো!
জয়: আমি বুড়ো? বিয়াল্লিশ বছর বয়সে টেনিস খেলা ধরেছি।
পত্রিকা: কবে বিয়ে করবেন ঠিক করলেন?
লোপা: দেখুন ওর বাজনা, মিউজিকাল সেন্স, এসবেরই প্রেমে পড়েছিলাম। তবে ভালবাসলেই যে বিয়ে করতে হবে, এটা কখনও মনে হয়নি। জয় খুব গোছানো, আমি এক্কেবারেই তা নই। ধরুন আমি খেতে আর খাওয়াতে খুব ভালবাসি। কিন্তু চা পর্যন্ত ভাল করে করতে পারি না। আমার মা তো বারণই করেছিলেন বিয়ে করতে। আমার কোনও ঠিক নেই। আজ ইচ্ছে হল কোথাও চলে যাব, তো ফস্ করে চলে যাব। আবার সারাদিন হয়তো বিছানায়ই শুয়ে রইলাম। ওটাই ইচ্ছে। আমি কোনও নিয়মে চলতে পারি না।
পত্রিকা: বিয়ে করলেই যে নিয়মে চলতে হবে কে বলেছে?
লোপা: তবু নিয়ম তো একটা আছেই।
জয়: বাজে কথা। ও নিজের তালেই থাকে। তখনও, এখনও। তবে ওর বিয়ের ষোলো আনা ইচ্ছে ছিল। আমার পরিষ্কার মনে আছে।
লোপা: না মোটেই না। এমন পরিস্থিতি ছিল বেরিয়ে আসতে পারিনি। লোকজন এত চাপ দিচ্ছিল...
জয়: আসলে লোপা সংসার না করতে চাইলেও অসম্ভব দায়িত্ব নিতে পারে। ও বাড়ির ছেলের মতো। ওর ডাকনামগুলোও ছেলেদের মতো, লালটু, পিকু। ছোটবেলায় শুনেছি শার্ট-প্যান্ট পরেই কাটিয়ে দিত। তবে অসম্ভব দায়িত্বজ্ঞান। কেউ অসুবিধায় পড়লে ও ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাঁকে পুরোপুরি সাহায্য করবে। তার কাছ থেকে লাথি খেয়ে তবে থামে। এটা পুরো একটা প্যাকেজের মতো।
পত্রিকা: লোপা কি খুব ইমোশনাল?
লোপা: পুরোটাই তাই। তবে আজকাল ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আমি ক্লান্ত। আর পারি না। কেঁদে ফেলি। আর জয় যে এই আমার ধাক্কা খাওয়া আর ফিরে আসাটাকে মেনে নিয়েছে, এর জন্য ওকে আমি শ্রদ্ধা করি।
পত্রিকা: ধাক্কাগুলো কেমন? গানের জগতে?
লোপা: নাহ, গানের জগতে আজকাল কিছুকে ধাক্কা মনে হয় না।
পত্রিকা: এটা সত্যি কথা!
লোপা: না দেখুন, আমি মুখোশ পরে থাকি না। আর সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি লোপা গান গাইতে জানে না। হাত পা নেড়ে চিৎকার করে গায়। এত দিন এ সব শুনতে শুনতে এগুলো আর পাত্তা দিই না।
পত্রিকা: কারা বলে এ সব?
লোপা: আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আমার গানের বন্ধুরা নয়। এ আমি আমার পরিচিত মহলে দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি। আর ধাক্কা খাওয়ার কথা বললে বলব, বন্ধুদের জন্য করতে করতে মনে হয় আমিও তো কিছু পাব...আসলে আমি জানি, আমি যাকে ধরি এমন গলা জড়িয়ে ধরি যে সে আর নিশ্বাস নিতে পারে না। আবার উল্টোটাও হয়। আমার আচরণে কেউ ভাবে আমি তার জন্য সব করে ফেলব, তাকে দারুণ কিছু একটা ভাবছি, সেটাও সমস্যা। আমি এরকমই। এর জন্য আমায় সাইকিয়াট্রিস্টও দেখাতে হয়েছে। তিনি অবশ্য বলেছেন তুমি এমনই থাকো আর গান গেয়ে যাও (হাসি)।
পত্রিকা: আপনি কেমন করে লোপার এই আবেগকে সামলান, জয়?
জয়: আমি চাই ও ভাল থাকুক। আর গান গেয়ে যাক। আর দাম্পত্যে স্পেস ব্যাপারটা তো খুব জরুরি, সে ভাবেই...
লোপা: এখানে আমার একটা কনফেশনের জায়গা আছে, আমি ওকে প্রথম-প্রথম একেবারেই স্পেস দিতাম না।
জয়: নাহ্! জায়গাটা উল্টো দিক থেকে না এলেও করে নিতে হয়। তবে স্ত্রী হিসেবে ও এখন অনেক বেটার।
পত্রিকা: কেন, আগে কী হত?
লোপা: কী আবার! (হাসি) আমি প্রচণ্ড রাগী। রেগে গেলে জিনিস ছুঁড়তে থাকি। কেমন একটা পশুর মতো হয়ে যাই। আসলে কারও ‘না’ শুনতে পারি না।
জয়: (একটু অস্বস্তি নিয়ে) নাহ, এখন আর জিনিস ছোড়ে না।
পত্রিকা: জয় রেগে যায় না?
লোপা: জয় রেগে গেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আসলে কাজের চাপটা জয় নিতে পারে না। ও মিউজিক ছাড়া কিছুই জানে না, পৃথিবী রসাতলে যাক! এটার জন্য আমার রাগও হয়, আবার শ্রদ্ধাও আসে।
পত্রিকা: দশ বছর লোপার সঙ্গে বাজাবার পর হঠাৎ কী হল জয় আর লোপাকে এক মঞ্চে দেখা যায় না? লোকে বলে, আপনারা আলাদা হয়ে যাচ্ছেন।
লোপা: সে আমাদের অনেক কিছুই শুনতে হয়। আমরা নাকি এক বাড়িতে থেকেও সেপারেটেড...ইত্যাদি, ইত্যাদি। তবে এখন যে আমরা আলাদা কাজ করছি এটাতে অনেক বেশি ভাল আছি।
পত্রিকা: সেটা কেন মনে হচ্ছে? এতে করে কি লোপার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জয়ের নিজস্ব আইডেনটিটি তৈরি হয়েছে?
জয়: নিজের কাজ করার একটা আনন্দ তো আছেই। আগে ওর সঙ্গে অনুষ্ঠানে বাজাতে গিয়ে আমার অনেক সময় চলে যেত। আর লোপা যে ভাল থাকার কথা বলছে, সেটাও ঠিক। আগে আমাদের মধ্যে কোনও গল্প তৈরি হত না। ধরুন, রাত তিনটেয় হাইওয়ে-তে গাড়িতে আটকে আমরা। সেখানে ও যা দেখছে, আমিও তাই দেখছি। ও যা খাচ্ছে, আমিও তাই খাচ্ছি...
লোপা: ও বিরক্ত, তো আমিও বিরক্ত। এখন দু’জনের জগৎ আলাদা, অভিজ্ঞতাও বিচিত্র। শেয়ার করার গল্পও অনেক।
পত্রিকা: বাড়িতে যখন গান তৈরি হচ্ছে, লোপা শুনছে, লোপার মুখস্থ হয়ে যাচ্ছে। অথচ সে গান অন্য কেউ গাইছে কেমন লাগে সেটা?
লোপা: খুব বাজে। ‘দেখেছ কী তাকে’ শুভমিতাকে আমি মোটেও দিতে চাইনি। কত ত্যাগ! (চোখ উল্টে)
জয়: উল্টোটাও হয়েছে। ‘যাও পাখি’ শ্রীকান্তদা (আচার্য) আমায় সুর দিতে বলেছিল। সেটা দিতে গিয়ে দেখলাম সুরটা লোপার গাওয়ার মতো হয়ে গেল।
লোপা: শ্রীকান্তর প্রচুর গানের প্রতি আমার লোভ ছিল। অর্ণার লেখা ‘পৃথিবীর চাবি’, সৈকতের লেখা ‘তোমার জন্য আকাশ ঢেলে দিলাম’, কিন্তু পরে যখন শুনেছি রেডিওয়, তখন ওই স্বর শুনে মনে হয়, আই লাভ ইউ শ্রীকান্ত আচার্য! ওর ক্ষেত্রেই হয় এমন, কারণ ওর গলাটা আমার খুব পছন্দের। ওকে যদি দেখতে আরও ভাল হত, তাহলে কিন্তু কেলেঙ্কারি হত!
জয়: শ্রীকান্তদাকে এখনও যথেষ্ট ভাল দেখতে! একটা কথা বলি, লোপা ‘আমাকে গান দাও, গান দাও’ ব্যাপারটা আজকাল আর আমায় বলে না। আর আগেও যে খুব ভিতর থেকে বলত, তা একেবারেই নয়।
পত্রিকা: এই যে একসঙ্গে তেমন কাজ করছেন না, কিছুই কি মিস্ করেন না?
লোপা: কিছু গান আছে, যা জয়ের গিটারের কথায় আমার গলায় সুর জাগাত। সেটা এখন আর হয় না। কিছু গান অন্য কারও সঙ্গে গাইতেই পারি না। জয় জানে কোথায় আমি নিশ্বাস নেব, কোথায় আমার সুরের খামতি। সেখানটা ও সুর দিয়ে ভরিয়ে দিত। মিস্ করা বললে, এটা তো আছেই।
পত্রিকা: লোপামুদ্রার ফিল্মের গানে তেমন বাজার নেই। কথাটা মানেন?
লোপা: এ কী, আপনিই তো শান্তনু মৈত্র, অনুপমের কথা বললেন।
পত্রিকা: সে তো কোনও ছবিতে একটা গান। ফিল্মে বাজার নেই বলেই কি গান ছাড়া অন্য কিছু করার প্ল্যান করছেন?
লোপা: তা হলে সত্যিটা শুনুন। লোপামুদ্রা পাবলিক শো-র জন্যই বেঁচে আছে। ফিল্মের গান নিয়ে যতই মাতামাতি করা হোক, আমার এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান থাকলেও সকলে আমার বেসিক গানই শুনতে চায়। তবে তার সঙ্গে এটাও ঠিক, বেসিক গানের জায়গাটা সত্যিই কমে আসছে। যে কোনও মিডিয়া ফিল্মের গানকে অনেক বেশি জায়গা দিচ্ছে।
পত্রিকা: গান ছাড়া অন্য কী কাজের কথা ভাবছেন?
লোপা: না, গান ছেড়ে নয়। বলতে পারেন, গান ছাড়াও আরও কিছু। একটু সময় দিন, পরে একদিন বলব।
পত্রিকা: আপনার ‘কমলাসুন্দরী’ তো সুপার হিট। কিন্তু মঞ্চে লুঙ্গি ডান্স গাইতে বললে গাইবেন?
লোপা: সেদিনই এমন হল। একটা সফিস্টিকেটেড শো। যেখানে কবিতার গান গাওয়ার জন্য আমায় ডাকা হয়েছে। অনুরোধ এল ‘লুঙ্গি ডান্স’ গাওয়ার। আমার তো মেজাজ চড়ে গেল, বললাম আমার একটা ‘লুঙ্গি ডান্স’ আছে। বলে ‘অবনী বাড়ি আছ’ গাইলাম। সবাই চুপ! আমি বাংলায় গান গাই বলেই এই ধাক্কাটা আমায় খেতে হয়েছে। যদি হিন্দিতে গাইতাম, হয়তো এমনটা হত না। একটা কথা বলুন তো, আমার আর শুভমিতার পরে বেসিক গান গেয়ে কেউ নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে পারছে? তবু আমাদের এ রকম বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। গানের জন্য সময়টা সত্যি খুব খারাপ।
পত্রিকা: ‘পাগলু’-র মতো কোনও গান জয় সরকারের হাত দিয়ে বেরোয় না কেন?
জয়: আসলে ওরকম গান কেউ লিখতে বলেনি। আর আমি সলিল চৌধুরীর ভক্ত। ওঁর সফিস্টিকেশনের ভক্ত। সলিল চৌধুরীকে কোনওদিন সফিস্টিকেশন ছাড়তে হয়নি। তবে আজকে ‘পাগলু’ করার মতো কোনও চ্যালেঞ্জ এলে সেটা নিশ্চয়ই নেব।
লোপা: সলিল চৌধুরী বলতেন শ্রোতারা মাছির মতো, নর্দমাতেও বসে। আবার বড়িতেও বসে। এটা আমি খুব মানি। তাই আমি ‘কমলাসুন্দরী’ যেমন গাই, ‘বেণীমাধব’ও গাই। আর সত্যি যদি রিদম বা বিটের গানই শুধু চলত, তাহলে অরিজিৎ সিংহ এত জনপ্রিয় হত না।
পত্রিকা: জয়ের জন্য আপনার কোনও ভয় কাজ করে?
লোপা: আগে করত। তখন ভাবতাম অন্য কোনও মেয়ের কাছে চলে যাবে জয়। আসলে ভয়ঙ্কর সেয়ানা (জয়ের অট্টহাসি)। একবার একটি মেয়ের সঙ্গে এসএমএস, ফেসবুক করে এমন প্রেম হল যে মেয়েটি অন্যরকম ভাবতে শুরু করল। যেই অমন হল, ব্যস, একদিন জয় মেয়েটির ফোন আমায় ধরিয়ে দিল, এত শয়তান! আমি অমন কিছু করলে কিন্তু বলেও দেব, কেঁদেও ফেলব।
পত্রিকা: লোপার জন্য কোনও ভয় আছে, জয়?
জয়: ওরে বাবা। অবশ্যই আছে। লোপা যেন আর কাউকে বিয়ে না করে। আমার যা হয়েছে হোক, আর কোনও ছেলের জীবন যেন নষ্ট না করে (প্রচণ্ড হেসে)। তবে হঠাৎ করে গান থেকে দূরে চলে গিয়ে লোপা যেন অন্য কিছু করে না বসে, এটা কিন্তু সিরিয়াসলি ভয় পাই।
পত্রিকা: আর স্বপ্ন?
জয়: লোপার অনেকগুলো জায়গা আজও ধরা যায়নি। আমরা একটা কি দুটো গানের সিডি করব। দেখি ওর গান নিয়ে কিছু করব।
লোপা: আর আমি কী ভাবি জানেন? জয় আরও বড় হবে। আমরা মলদ্বীপে বেড়াতে যাব।
পত্রিকা: ফ্যামিলি প্ল্যানিং?
জয়: নাহ্ এটা আমাদের দু’জনের সিদ্ধান্ত। গানকে কমপ্রোমাইজ করে নিয়মের জীবনে আমরা ফিরতে চাই না।
লোপা: এই যে (গিটার দেখিয়ে)। ওটাই আমাদের সন্তান।
খুনসুটি আর ঝগড়া মোড়া ভালবাসার ক্যানভাসে পরজন্মে বিশ্বাসী লোপা তাঁর আর জয়ের স্বপ্ন এঁকে চলেছে হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা...অন্য কোনওখানে...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy