গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সরকার পক্ষ ও বিরোধীদের বাদানুবাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার লোকসভায় পেশ হল সংশোধিত তিন তালাক বিল। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এ দিন বিলটি আনেন লোকসভায়। বিরোধীরা বিলটিকে জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবিতে সরব হন। কংগ্রেসের বক্তব্য, এই বিলটি এনে ধর্মীয় ব্যাপারে নাক গলিয়েছে সরকার, যা উচিত নয়। সরকারের তরফে জানানো হয়, গত বছরই সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছিল।
বিলটি আইনে পরিণত হলে, জামিন-অযোগ্য ফৌজদারি অপরাধের তকমা পাবে তিন তালাক প্রথা। অভিযুক্ত স্বামীর শাস্তি হবে তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা। আর স্ত্রী পাবেন ভরনপোষণ।
বিলটি লোকসভায় এনে এ দিন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট গত বছরই তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক বলেছিল। বলেছিল সংসদে সংশ্লিষ্ট বিলটি পাস করাতে।’’ আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব। তিনি বলেন, ‘‘সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপব্যাখ্যা করছে। রায়ে কোথাও বলা হয়নি ওই প্রথা দণ্ডনীয় অপরাধ। অন্য কোনও ধর্মে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য শাস্তি পেতে হয় না। এই বিল মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়নের সহায়ক না হয়ে মুসলিম পুরুষদের শাস্তির হাতিয়ার হয়ে উঠল।’’
যাতে অপব্যবহার না হয়, সেই লক্ষ্যে লোকসভায় পেশ করার জন্য বিলটিতে তিনটি সংশোধন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমত, স্বামীর বিরুদ্ধে একমাত্র স্ত্রী বা তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, মামলা শুরু পর স্বামী, স্ত্রীর মধ্যে ফের সমঝোতা হয়ে গেলে স্ত্রী সেই মামলা তুলেও নিতে পারবেন। তৃতীয়ত, একমাত্র স্ত্রীর বক্তব্য শুনেই অভিযুক্ত স্বামীকে জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন ম্যাজিস্ট্রেট।
তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়ে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করতে এর আগে অধ্যাদেশ এনেছিল মোদী সরকার। এ বিষয়ে সংসদে বিল আসার পরে অভিযোগ উঠেছিল, মোদী সরকার পরিবার ভাঙার রাস্তা তৈরি করছে। তাই একে মানবিক মুখ দিতে, তিন তালাকের অপরাধে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেও অধ্যাদেশে আদালত থেকে জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্বামী ভুল স্বীকার করলে, স্ত্রী রফার জন্য আদালতে আর্জিও জানাতে পারবেন।
এই অধ্যাদেশে ভর করে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে উতরে যাওয়া যাবে, এই বিশ্বাসেই তড়িঘড়ি ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। তার আগে সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উত্তরপ্রদেশে মুসলিম মহিলাদের ভোট কিছুটা পেয়েছিল বিজেপি।
গত বছর অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট ‘তিন তালাক’ উচ্চারণের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রথা বা ‘তালাক-এ-বিদ্দত’কে অবৈধ রায় দেয়। এর পর ডিসেম্বরে তিন তালাককে জামিন-অযোগ্য ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়ে তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা করতে বিল আনে সরকার। লোকসভায় বিলটি পাশ হলেও, রাজ্যসভায় তা আটকে যায়। তাই ওই সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অধ্যাদেশ আনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছিলেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘ভোটব্যাঙ্ক রাখতে কংগ্রেস ওই বিল সমর্থন করছে না।’’ তিনি বলেছিলেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়েই গুরুতর অভিযোগ করছি, সনিয়া গাঁধী মহিলা নেত্রী হয়েও মুসলিম মহিলাদের অধিকারের প্রশ্নে চুপ থেকেছেন। এ বার সনিয়াজির সঙ্গে মায়াবতী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অনুরোধ— আপনারা সমর্থন করুন।’’
আরও পড়ুন- আমরাই আসছি, মানুষ আমাদের চাইছেন: একান্ত সাক্ষাৎকারে হাসিনা
আরও পড়ুন- তালাক ও মেয়েদের অধিকার
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার পাল্টা অভিযোগ ছিল, ‘‘তিন তালাকের বিষয়টিকে বিজেপি রাজনৈতিক ফুটবলের মতো কাজে লাগাচ্ছে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘তিন তালাক অসাংবিধানিক বলেই সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করেছে। কিন্তু মোদী সরকার বিলে জামিনের ব্যবস্থা রাখেনি। আবার স্ত্রী-সন্তানের খোরপোশের দায়িত্ব স্বামীর উপরেই চাপিয়েছে। স্বামী জেলে থাকলে খোরপোশ দেবে কে? স্ত্রী-সন্তানের খোরপোশের খরচ জোগাড়ে স্বামীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ব্যবস্থাই বা হয়নি কেন?’’
বস্তুত, অগস্টে বাদল অধিবেশনে সরকারই সংশোধনীগুলি এনেছিল। তাই ওই সময় প্রশ্ন ওঠে, নভেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাশের অপেক্ষা করা হল না কেন? বিধানসভা ভোটের জন্যই কি তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ?
এখন প্রশ্ন উঠেছে, সোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই কি তড়িঘড়ি তিন তালাক বিল লোকসভায় আনল কেন্দ্র?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy