Advertisement
E-Paper

‘বিদেশি’ বাবার দেহ নিতে আপত্তি ছেলেদের

১৯৯৩ সালে ঢেকিয়াজুলির আলিসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় কুমোর দুলালবাবুর নামে ডি-ভোটারের নোটিস আসে।

রমেশ বহেল। —নিজস্ব চিত্র।

রমেশ বহেল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫০
Share
Save

বেঁচে থাকতে বিদেশির তকমা ঘাড়ে জেল খাটতে হচ্ছিল শোণিতপুর জেলার ঢেকিয়াজুলির বাসিন্দা দুলাল পালকে। সেখানেই মৃত্যু হল তাঁর। আর তার পরেই শুরু দ্বিতীয় দফার টানাপড়েন। জীবিত ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিয়ে পুলিশের সন্দেহ থাকলেও, মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তিকেই ভারতীয় বলে মেনে নিয়ে তাঁরা চাইলেন, অসমে তাঁর অন্ত্যেষ্টির ভার নিক পরিবারই। কিন্তু ছেলেদের বক্তব্য, পুলিশ-আদালত যখন বাবাকে বাংলাদেশি সাজিয়ে কারাবন্দি করে রাখল, তখন অন্ত্যেষ্টিও এ দেশে হবে না। ‘বাংলাদেশি’ বাবার মরদেহ বাংলাদেশেই পাঠানো হোক!
১৯৯৩ সালে ঢেকিয়াজুলির আলিসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় কুমোর দুলালবাবুর নামে ডি-ভোটারের নোটিস আসে। মামলা শুরু হয় ২০১৫ সালে। পরিবারের দাবি, ১৯৬৫ সালের মেয়াদি পাট্টা-সহ জমির দলিলের ‘সার্টিফায়েড কপি’ জমা দিলেও আসল দলিল দেখাতে না পারায় ২০১৭ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল দুলালবাবুকে বিদেশি ঘোষণা করে। তাঁর মানসিক সমস্যাও ছিল। তাঁকে তেজপুরের ডিটেনশন শিবিরে পাঠানো হয়। পরে, পরিবারকে না জানিয়েই তেজপুর মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। ছেলে আশিস, অশোক ও রোহিত পালদের দাবি, বাবাকে খুঁজতে ডিটেনশন শিবিরে গেলে বলা হত, বাবা
তেজপুর মানসিক হাসপাতালে আছেন। সেখানে গেলেও দেখা করতে দেওয়া হত না।
অনেক কষ্টে বাবার দেখা পান তাঁরা। পুজোর সময়ও বাবাকে নতুন পোশাক দিয়ে আসেন। তখনও জেল কর্তৃপক্ষ দুলালবাবুর শারীরিক অবস্থার কথা তাঁদের জানাননি। শনিবার সীমান্ত পুলিশ তাঁদের বাড়িতে গিয়ে জানায়, বাবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ডায়াবেটিস ও কিডনির রোগে আক্রান্ত দুলালবাবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২৮ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আত্মীয়রা গিয়ে দেখেন হাসপাতালের মাটিতে শোয়ানো। চেঁচামেচি করায় মেডিসিন বিভাগের বিছানায় ঠাঁই পান তিনি। কিন্তু গতকালই তাঁর মৃত্যু হয়।
পুলিশ পরিবারকে দেহ নিতে বললেও বেঁকে বসেন ছেলেরা। তাঁদের দাবি, বাবাকে বেঁচে থাকতে বাংলাদেশি সাজিয়ে অপমান করা হল, জেলে পাঠানো হল, ঠিক মতো চিকিৎসা না করিয়ে মেরেও ফেলা হল। তা হলে মৃতদেহ কেন বাড়িতে পাঠানো হবে?
ছেলেদের বক্তব্য, ‘‘বাংলাদেশে বাবার ‘আসল’ ঠিকানা খুঁজে বের করে সেখানে মরদেহ পাঠাক ওরা।’’
আজ পুলিশ প্রয়াত দুলালবাবুর বাড়িতেও আসে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তাদের পথ অবরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত জেলাশাসক মানবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ পাল পরিবারে এসে ঘটনার সঠিক তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। পরিবার ক্ষতিপূরণ দাবি করে। এরপরেই ভারতীয় ছেলেরা ‘বিদেশি’ বাবার দেহ নিতে রাজি হন।

NRC Assam Death

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}