Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

চৌকিদার রাখেন বিত্তশালীরা, গরিব মানুষের সে সাধ্য নেই, এ বার মোদীকে কটাক্ষ প্রিয়ঙ্কার

সোমবার প্রয়াগরাজের মানাইয়া ঘাট থেকে প্রচার যাত্রা শুরু করেন প্রিয়ঙ্কা।

সোমবারের জনসভায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

সোমবারের জনসভায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
প্রয়াগরাজ শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ১৮:৩৪
Share: Save:

দায়িত্ব পেয়েই ঘুরে গিয়েছিলেন একবার। তবে দাদা রাহুল গাঁধীর সঙ্গে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এ বার একাই উত্তরপ্রদেশে প্রচারে নামলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। সোমবার প্রয়াগরাজ থেকে গঙ্গাবক্ষে প্রচার যাত্রা শুরু করেন তিনি। আর শুরুতেই তোপ দাগলেন স্বঘোষিত চৌকিদার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে চৌকিদার রাখেন বিত্তশালীরা। গরিব মানুষের সেই বিলাসিতার সাধ্য নেই। তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পাহারা দেন।’’

সোমবার প্রয়াগরাজের মানাইয়া ঘাট থেকে প্রচার যাত্রা শুরু করেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁকে দেখতে নদীর পাড়ে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। নৌকো থেকেই তাঁদের উদ্দেশ হাত নাড়েন প্রিয়ঙ্কা। নৌকো থেকে চেঁচিয়ে তাঁদের হাল হাকিকত জানতে চান। সেখানে সংবাদমাধ্যমেরও মুখোমুখি হন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতৃত্বের টুইটারে নামের আগে চৌকিদার বসানো নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘নামের আগে কী বসাবেন তা একান্তই ওঁর ইচ্ছা। তবে এক কৃষক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হল আমার। উনি বললেন, বিত্তশালীদের বাড়িতেই চৌকিদার থাকে। আমাদের মতো গরিব মানুষের সে সাধ্য কোথায়? আমরা নিজেরাই নিজেদের চৌকিদার।’’

তবে প্রয়াগরাজে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেও, জনসভার জন্য দুমদুমা ঘাটকে বেছে নেন প্রিয়ঙ্কা। সেখানে স্থানীয় মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘গত ৫ বছরে দেশে বেকারত্ব যে হারে বেড়েছে, আগের ৪৫ বছরেও তা হয়নি। কৃষকদের সমস্যা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। কেবল ধনী ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা পাইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিই না। ক্ষমতায় এলে কৃষিঋণ মকুব করে দেব বলেছিলাম। গতবছর রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে তা করে দেখিয়েছি। ক্ষমতায় আসার ১০ দিনের মধ্যে কৃষকদের ঋণ মকুব করে দিয়েছি।’’

প্রয়াগরাজে এক স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

আরও পড়ুন: অভিযোগে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, ভোটের কাজে ৬০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী!​

আসন্ন নির্বাচনে যদিও কংগ্রেস এবং রাহুল গাঁধীকে ভোট দিতে আর্জি জানান প্রিয়ঙ্কা। তবে কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, বিচার বিবেচনা করেই ভোট দিতে বলেন তিনি। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কংগ্রেস এবং রাহুল গাঁধীকে ভোট দিলে ঠকবেন না। কিন্তু এই দেশ আপনাদের। তাই একে রক্ষা করার দায়িত্বও আপনাদের। আপনারা আছেন বলেই আজ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে পারছি আমরা। তাই কাকে ক্ষমতায় আনবেন, সেই সিদ্ধান্তও আপনাদের হওয়া উচিত। আশা করি কাউকে নিজেদের মধ্যে বিভাজন ঘটানোর সুযোগ করে দেবেন না আপনারা। কারণ এতে আপনাদের কোনও উপকার হবে না। লাভবান হবে অন্য কেউ।’’

এর আগে দাদা রাহুলের হয়ে অমেঠিতে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে। মা সনিয়া গাঁধীর রায়বরেলিতেও একাধিকবার দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন সবে মাত্র। দেশের পরিস্থিতি সঙ্কট হওয়াতেই শেষমেশ এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেও জানান প্রিয়ঙ্কা। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের কিছু লোক সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। ওদের ধারণা, সাধারণ মানুষ কিছু বোঝে না। সহজে বোকা বানানো যাবে। তাদের জন্যই আজ দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। সঙ্কটে সংবিধানের অস্তিত্ব। তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি আমি।’’

বারাণসীর পথে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ছবি: এপি।

প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর প্রচার যাত্রা নিয়ে গতকালই ধুন্ধুমার বেধেছিল রায়বরেলিতে। সেখানে প্রিয়ঙ্কাকে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। সেখানে কংগ্রেস সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হিন্দু যুব বাহিনীর সদস্যদে। পরিস্থিতিত নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ নামাতে হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ দিন প্রিয়ঙ্কার সভা নিয়ে কটাক্ষ করেন উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দীনেশ শর্মা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের প্রচার কংগ্রেসের কাছে এক ধরনের পিকনিক। দলের নেতারা আসেন, ঘোরেন, রিসর্টে থাকেন এবং মুখস্ত করা বুলি আওড়ে চলে যান। ভোট শেষ হয়ে গেলে সুইত্জারল্যান্ড বা ইতালি বেড়াতে যাওয়ার তোড়জোড় করেন।’’তবে দীনেশ শর্মার মন্তব্য নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন: চাকরি দিন, নয় পদত্যাগ করুন, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের অনশনে যোগ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি শঙ্কুর​

গত ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে, যার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীও। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুরও পূর্ব উত্তরপ্রদেশের মধ্যেই পড়ে। দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে লখনউতে পথসভা করেন তিনি। যার পর সম্প্রতি প্রয়াগরাজ থেকে বারাণসী পর্যন্ত গঙ্গাবক্ষে তাঁর তিনদিন প্রচারযাত্রার ঘোষণা হয়। সেই উপলক্ষে রিববারই লখনউ পৌঁছে যান প্রিয়ঙ্কা। সোমবার সকালে প্রয়াগরাজের বড়ে হনুমান মন্দিরে পুজো সেরে মানাইয়া ঘাট থেকে বারাণসী অভিমুখে তিনদিনব্যাপী যাত্রা শুরু করেন। ভাদোহি, মির্জাপুর হয়ে বুধবার বারাণসী পৌঁছবেন প্রিয়ঙ্কা। সেখানে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর পৈতৃক বাড়িও ঘুরে দেখবেন।

(কী বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে সংসদ- দেশের রাজধানীর খবর, রাজনীতির খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE