বাবলু দাস
পুলওয়ামা হামলার খবরটা শোনার পরে একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন সুপর্ণাদেবী। সে কী উৎকণ্ঠা! টিভিতে খবরটা দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই। সুপর্ণাদেবী, সঙ্গে সাত বছরের মেয়ে বর্ষা, আড়াই বছরের ছেলে দেবব্রতও। ছিলেন পাড়া-প্রতিবেশীরাও। বার বার খবর নিতে আসছিলেন তাঁরা। সুপর্ণাদেবী মোবাইল ফোনের বোতাম টিপেই চলেছিলেন। কিছুতেই পাননি লাইন।
শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে বেজে ওঠে মোবাইল ফোনটি। ওপার থেকে ভেসে আসে তাঁর স্বামী, সিআরপিএফ জওয়ান বাবলু দাসের গলা, ‘‘আমি ঠিক আছি। চিন্তা কোরো না।’’ হাতে স্বর্গ পান সুপর্ণাদেবী। প্রতিবেশীরা সন্ধ্যা থেকে কতবার যে খোঁজ নিয়েছেন! বাবলুর ফোনের কথাটা চিৎকার করে বলতে চাইছিলেন সুপর্ণাদেবী। কিন্তু স্বামীর সহকর্মীদের মৃত্যু মিছিল সেই উচ্ছ্বাসকে যেন গলা টিপে থামিয়ে দিল। শুধু ছেলে-মেয়েদের মাথায় হাত বোলান তিনি, ‘‘আর কাঁদিসনে। ঠাকুর আমাদের প্রার্থনা শুনেছেন।’’ পড়শিদের অবশ্য জানাতে বাকি রাখেননি। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, বাবলু বেঁচে গিয়েছেন।
কিন্তু এত মৃত্যুর ফলে গুমোট ভাবটা যেন কিছুতেই কাটছিল না। পাঁচ দিন পরে, আজ শোকসভার আয়োজন করেন কাছাড় জেলার বুধুরাইল গ্রামের বাসিন্দারা। সুপর্ণা দাসও যান ছেলেমেয়েদের নিয়ে। সঙ্গে নিজের হাতে গাঁথা ফুলের মালা। সেখানেই তিনি জানান, ১৪ বছর ধরে সিআরপিএফে রয়েছেন স্বামী। এমন পরিস্থিতির মুখে কখনও পড়তে হয়নি তাঁদের পরিবারকে।
গত বছরের অক্টোবরে অসমের নলবাড়ি থেকে তাঁদের পুরো ব্যাটেলিয়নকে নিয়ে যাওয়া হয় জম্মুতে। ফের নির্দেশ আসে, সবাইকে শ্রীনগর যেতে হবে। শুধু বাবলুদের ব্যাটেলিয়নই নয়, আরও বেশ কয়েকটি ব্যাটেলিয়নকে একত্র করে তৈরি হয় কনভয়। যে গাড়িগুলি বিস্ফোরণে উড়ে যায়, তার একটিতেই উঠে বসেছিলেন বাবলু দাস। হঠাৎ মনে পড়ে, জলের বোতলটা নীচে রেখে এসেছেন। নেমে গিয়ে জল নিয়ে বাসে উঠে দেখেন তাঁর সিটে আর এক জওয়ান বসে গিয়েছেন। কথা না বাড়িয়ে বাবলু নেমে গিয়ে আরও পিছনের দিকের অন্য একটি বাসে ওঠেন।
সুপর্ণাদেবীর মুখে বাবলু দাসের এই ইতিবৃত্ত শুনে আজ বুধুরাইলে সবাই একযোগে বলে ওঠেন, বড় ভাগ্যবান তোমরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy