রাজ্যসভায় অধিবেশনের মহড়া। ছবি: রাজ্যসভার সৌজন্যে
করোনা সংক্রমণের কারণে কোপ পড়ল সর্বদলীয় বৈঠকেও। প্রতিবার সংসদ শুরুর ঠিক আগে সর্বদলীয় বৈঠক হলেও এ বার করোনা সংক্রমণের কারণে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা তা বাতিল করায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা সরকারের মনোভাব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। প্রায় ছ’মাস পরে কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া ১৮ দিনের এই সংসদীয় অধিবেশনে কৃষি-বিপণন সংক্রান্ত তিনটি বিল (যেগুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই অধ্যাদেশ জারি করেছে কেন্দ্র)-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর মধ্যে কৃষি-বিপণন সংক্রান্ত বিলগুলি নিয়ে উত্তপ্ত হতে পারে সংসদের অধিবেশন। চলতি অধিবেশনেই সেগুলি পাশ করাতে মরিয়া মোদী সরকারকে রাজ্যসভায় ঠেকাতে পাল্টা সক্রিয় হয়েছে বিরোধীরা।
আজ লোকসভার বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে এক দিন ছুটি ঘোষণার দাবি করে কংগ্রেস ও তৃণমূল। শাসক শিবির জানায়, সময় কম থাকায় এক দিন সাংসদ বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রণববাবু ও অন্য যে সাংসদরা গত ছ’মাসের মধ্যে মারা গিয়েছেন, তাঁদের স্মৃতিতে আগামিকাল এক ঘণ্টার জন্য সংসদ বন্ধ থাকবে।
তার মধ্যে কালই রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচন হওয়ার কথা। আজ বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে বিরোধীরা করোনা পরিস্থিতি, লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা ও অর্থনীতির দুর্দশা, চাকরি হারানোর মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বিরোধীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “সরকার যে কোনও বিষয়েই আলোচনা করতে রাজি। আগামী মঙ্গলবার ফের বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানেই কোন দিন কী আলোচনা হবে, তা ঠিক করে নেওয়া হবে।”
বাদল অধিবেশন শুরুর আগে করোনা-বিধি মেনে সংসদের পাহারায় নিরাপত্তা বাহিনী। রবিবার। পিটিআই
এ বারের অধিবেশনে আসতে চলা বিলগুলির মধ্যে ১১টি বিলে ইতিমধ্যেই অধ্যাদেশ জারি করেছে মোদী সরকার। তাই সেগুলি এ বারে পাশ করাতে মরিয়া তারা। অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল হোমিয়োপ্যাথি সেন্ট্রাল কাউন্সিল (সংশোধনী) বিল, ২০২০ ও ‘দ্য ইন্ডিয়ান মেডিসিন সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (সংশোধনী), ২০২০। আগামিকাল তা লোকসভায় পাশ করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ আজ সাংবাদিক সম্মেলেন বলেন, “১১টির মধ্যে তিনটি অধ্যাদেশ রয়েছে কৃষি-বিপণন নিয়ে। সরকারের নীতি মানলে খাদ্য সুরক্ষার শৃঙ্খল একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষতি হবে কৃষকদের।” যে কারণে ইতিমধ্যেই হরিয়ানায় পথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন কৃষকেরা।
অতিমারির সময়ে অধিবেশন • শুরু ১৪ সেপ্টেম্বর • চলবে ১ অক্টোবর পর্যন্ত • প্রথমার্ধে রাজ্যসভার অধিবেশন ৯টা থেকে ১টা • দ্বিতীয়ার্ধে লোকসভার অধিবেশন ৩টে থেকে ৭টা • প্রথম দিন ব্যতিক্রম। লোকসভা সকাল থেকে, রাজ্যসভা দুপুর থেকে • সাংসদরা লোকসভার কক্ষে, গ্যালারিতে, রাজ্যসভার কক্ষে, রাজ্যসভার গ্যালারিতে বসবেন • অধিবেশন শুরুর আগে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান, লোকসভার স্পিকার, সাংসদ, কর্মী, সাংবাদিকদের কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। সাংসদদের আপ্তসহায়ক, চালকদের জন্যও র্যাপিড টেস্ট • সব সাংসদদের জন্য কোভিড কিট— ৪০টি থ্রি-প্লাই মাস্ক, ৫টি এন-৯৫ মাস্ক, ৫০ মিলিলিটারের ২০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, ৫টি ফেসশিল্ড, ৪০টি গ্লাভস, বিশেষ হার্বাল টি-ব্যাগ, হার্বাল স্যানিটেশন ওয়াইপস্, দরজায় টাচ-ফ্রি হুক • আসনের মাঝখানে পলিকার্বনেট শিট • রাজ্যসভার অধিবেশনে ৫৭ জন সাংসদ রাজ্যসভা কক্ষে, ৫১ জন গ্যালারিতে, ১৩৬ জন লোকসভায় • লোকসভার অধিবেশনের সময় ২৫৭ জন লোকসভা কক্ষে, ১২৭ জন গ্যালারিতে, ৬০ জন রাজ্যসভা কক্ষে, ৫১ জন রাজ্যসভার গ্যালারিতে
সিপিএম পলিটব্যুরো একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “কৃষি সংক্রান্ত অধ্যাদেশগুলি কৃষক ও দেশীয় কৃষি ক্ষেত্রের জন্য ধ্বংসাত্মক। তাই সিপিএমের পক্ষ থেকে ওই অধ্যাদেশগুলি সংসদের উভয় কক্ষ থেকেই প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।” আজ জয়রাম বলেন, “লোকসভায় সংখ্যাধিক্যের জোরে ওই বিলগুলি পাশ করাতে সমস্যা হবে না শাসক শিবিরের। কিন্তু রাজ্যসভায় যাতে বিরোধীরা ওই বিলগুলি আটকে দিতে পারেন, তার জন্য সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে কংগ্রেস।” চতুর্থ যে অধ্যাদেশটি নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি রয়েছে, সেটি ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন সংক্রান্ত। কংগ্রেসের অভিযোগ, ওই বিল পাশ হলে সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।
অধ্যাদেশ*
• ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন (সংশোধনী), ২০২০
• নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য (সংশোধনী), ২০২০
• কৃষিজ পণ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্য (প্রসার ও সুবিধে) সংশোধনী, ২০২০
• মূল্য নিশ্চয়তা সংক্রান্ত কৃষক সমঝোতা (ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) এবং কৃষি পরিষেবা সংশোধনী ২০২০
• অতিমারি রোগ আইন (সংশোধনী), ২০২০
• হোমিয়োপ্যাথি সেন্ট্রাল কাউন্সিল (সংশোধনী), ২০২০
বিল*
• জম্মু-কাশ্মীর সরকারি ভাষা বিল,
• জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার ও প্রটেকশন) বিল, ২০২০
• পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি সংশোধিত বিল, ২০২০
• কীটনাশক ব্যবস্থাপনা বিল
• সারোগেসি রেগুলেশন বিল (লোকসভায় পাশ হয়েছে)
• জাতীয় ফরেনসিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় বিল
আরও পড়ুন: উমর খালিদ গ্রেফতার, দিল্লি হিংসা মামলায়, দেওয়া হল ইউএপিএ
আরও পড়ুন: কো-মর্বিডিটিকে গুরুত্ব দিয়েই নয়া প্রোটোকল কেন্দ্রের
অধিবেশনের মেয়াদ কাটছাঁটের সঙ্গেই প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল, জিরো আওয়ারের সময় কমিয়ে দেওয়ার পরে সর্বদলীয় বৈঠক তুলে দেওয়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভাবে সংসদ চালানোর প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সর্বদলীয় বৈঠক। অধিবেশনে কী ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন, তার একটি রূপরেখা প্রস্তুত হয়ে যায় ওই সর্বদলীয় বৈঠকে। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, “এই সরকারের কাছে সংসদের কোনও গুরুত্বই নেই। প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল, জিরো আওয়ারের সময় কমিয়ে দেওয়া, ১৮ দিনে একগুচ্ছ বিল নিয়ে আসা, দরকারে-অদরকারে অধ্যাদেশ জারি করা— ৭০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা দেখা যায়নি। এই ঘটনা গণতন্ত্রের জন্য খুব খারাপ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy