স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে আবেদন করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের রায়ের ‘মডিফিকেশন’ চাইল পর্ষদ। তাদের আবেদন, যত দিন না নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে তত দিন, অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ পর্যন্ত ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের চাকরিতে বহাল রাখা হোক।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্য সরকার পোষিত এবং ভারপ্রাপ্ত স্কুলগুলির ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, রাজ্যের সরকার পোষিত এবং ভারপ্রাপ্ত স্কুলগুলি থেকে এত জনের চাকরি চলে যাওয়ায় পঠনপাঠন চলবে কী করে। এক একটি স্কুল থেকে একাধিক শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। কোনও কোনও স্কুলে সেই সংখ্যা অনেক বেশি। এ সব ক্ষেত্রে স্কুলে পঠনপাঠন কী ভাবে চালানো হবে, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও রাজ্যের শিক্ষা দফতর স্পষ্ট করে কোনও নির্দেশিকা প্রকাশ করেনি। যে ‘যোগ্য’-রা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা স্কুলে আর যাবেন কি না, সেই সংক্রান্তও কোনও স্পষ্ট তথ্য ছিল না স্কুলগুলির কাছে। এ বার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল। তাদের আবেদন, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বা চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ পর্যন্ত ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের কাজ চালাতে দেওয়া হোক। এই নিয়ে শীর্ষ আদালত প্রয়োজনমতো অন্য নির্দেশ দিক বলে আবেদনে জানিয়েছে তারা।
অভিযোগ উঠেছিল, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়েও অনেকে চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগ নিয়েই মামলা হয়েছিল হাই কোর্টে। হাই কোর্ট এসএসসির ২০১৬ সালের প্যানেলে থাকা প্রায় ২৬ হাজার জনেরই চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। শীর্ষ আদালতে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের বক্তব্য ছিল, এসএসসির নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তাই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের এই মামলায় হাই কোর্টের রায় বহাল থাকা উচিত। অন্য দিকে, রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে জানানো হয়, এত জন শিক্ষকের চাকরি একসঙ্গে বাতিল করা হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ প্রায় ২৬ হাজার জনেরই চাকরি বাতিল করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যাঁরা অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তাঁরা চাইলে পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন।
ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালে এসএসসি-র প্যানেলভুক্ত যাঁরা চাকরি করছিলেন, তাঁরা নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, এই মামলায় যোগ্য-অযোগ্যা বাছাই নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। কী ভাবে যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করা হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। যাঁরা চিহ্নিত ‘অযোগ্য’, তাঁদের বেতন ফেরত দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদন, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ পর্যন্ত এই ‘যোগ্য’-দের চাকরিতে বহাল রাখা হোক।