Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
JEE

মমতার মত মেনে সুপ্রিম কোর্টে নিট এবং জেইই আর্জি

আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নিট এবং জেইই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে বলেছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি।

সাত বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। নবান্ন থেকে সেই বৈঠকে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: পিটিআই

সাত বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। নবান্ন থেকে সেই বৈঠকে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০৩:৩৬
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নিট এবং জেইই পরীক্ষার আয়োজন পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে বুধবার আলোচনা করে আইনি পথে যাওয়ার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়েছে।

অতিমারির মধ্যে এই পরীক্ষা লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের বিপদে ফেলবে বলেই তা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে আর্জি জানানের পাশাপাশি এ দিন বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। বৈঠকে তাঁর প্রস্তাব মেনেই পঞ্জাব অন্য রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মত পুনর্বিবেচনার জন্য যৌথ আইনি আবেদনের বিষয়টি সমন্বয় করার ভার নিয়েছে।

বৈঠকের পরে এ দিন মমতা বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আমাদের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকার আবেদন করুক পরীক্ষা পিছনোর। দরকারে রাজ্যগুলো একসঙ্গে পরীক্ষা পিছনোর আর্জি জানাতে পারে। আমরা সর্বোচ্চ আদালতের কাছে এই আবেদন করব।’’ সর্বোচ্চ আদালতে আজ, বৃহস্পতিবারই আবেদন দাখিল করার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন: সনিয়া-মমতার সখ্য স্পষ্ট বৈঠক জুড়েই

আরও পড়ুন: ভুয়ো ছবি? তেনজিং সম্মানপ্রাপককে ঘিরে বিতর্ক

আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নিট এবং জেইই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে বলেছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। কেন্দ্রীয় পরীক্ষা হলেও তার আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যগুলিকে। করোনা পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে যাতে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া না হয়, তার জন্য পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে নানা রাজ্যই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অভিমতের কথা বলে কেন্দ্র এখনও সেই দাবি মানেনি।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আগামী ১ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর যে পরীক্ষা নিতে চাওয়া হচ্ছে, তাতে প্রায় সাড়ে ২৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দেবেন। এ রাজ্যেও বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে পরীক্ষার্থীদের আসতে হবে। কী ভাবে যানবাহন বা হোটেলের ব্যবস্থা হবে, পরীক্ষা-কেন্দ্রে তাঁরা বসবেনই বা কী করে? মমতার কথায়, ‘‘কেন্দ্রকে এবং প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, এই পরীক্ষাটা পিছিয়ে দেওয়া হোক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, কথা বলে করা হোক। ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে কেরিয়ার গড়বে, জীবন দিয়ে তো নয়! জীবন বাঁচানো লক্ষ হলে আমরা আর একটা অতিমারির দিকে কেন যাচ্ছি? যে অতিমারি চলছে, সেটা আগে আটকাতে হবে।’’

সনিয়া ও মমতার ডাকা বৈঠকে এ দিন যোগ দিয়েছিলেন পঞ্জাবের অমরেন্দ্র সিংহ, ছত্তীশগঢ়ের ভূপেশ বাঘেল, রাজস্থানের অশোক গহলৌত, পুদুচেরির ভি নারায়ণস্বামী, মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে এবং ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সরেন। তাঁরা সকলেই পরীক্ষা পিছনোর প্রশ্নে মমতার সঙ্গে একমত। মমতা বৈঠকে বলেন, তিনি দু’বার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার যাতে সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়, সেই আবেদন করেছেন। কিন্তু কেন্দ্র এখনও নড়েচড়ে বসছে না। কেন্দ্র না করলে রাজ্যগুলিই সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে সনিয়াও বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা ও পরীক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত অযত্নে দেখা হচ্ছে।

এখন পরীক্ষা হলে তাঁর রাজ্যেও যে বিস্তর সমস্যা হবে, তা জানিয়েই হেমন্ত বলেন, দিল্লিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করুন। কিন্তু মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী চিঠির উত্তরই দেন না। তাঁর কাছে দরবার করে কিছু হওয়ার আশা এখন ক্ষীণ। তাঁকে সমর্থন করেন অন্যেরা। মহারাষ্ট্রের উদ্ধব জানান, তাঁদের রাজ্যে সব রকম পরীক্ষা বন্ধ। উদ্ধব-পুত্র আদিত্য ঠাকরে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে নিট-জেইই পিছনোর আর্জি জানিয়েছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। বৈঠকেই মমতা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করেন, আদালতে যাওয়ার বিষয়টি তাঁরা তত্ত্বাবধান করতে রাজি কি না। অমরিন্দর জানান, তাঁরা তৈরি। পরে পঞ্জাবের অ্যাডভোকেট জেনারেল অতুল নন্দকে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন অন্য রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলদের সঙ্গে যোগাযোগ করার।

মমতা অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের বলেছেন, ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের সঙ্গেও কথা বলা যেতে পারে। কারণ, তিনিও বিরোধিতা করছেন। বৈঠকে না থাকলেও দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিশোদিয়া বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র যে আয়োজনের সময়ের কথা বলছে, তার মধ্যেই অমিত শাহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লির শিক্ষামন্ত্রীও সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে ছেলেমেয়েরা কী ভাবে পরীক্ষা দেবে?’’ বৈঠকে না থাকলে পরীক্ষা পিছনোর পক্ষে সিপিএম-শাসিত কেরলও।

এই গোটা তৎপরতার বিরোধিতা একমাত্র শোনা যাচ্ছে বিজেপি শিবির থেকেই। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় টুইটে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘মমতা অতিমারি সামাল দিতে পারেননি। গরিবের জন্য রেশন তাঁর দলের লোকজন চুরি করেছে, আমপানের ত্রাণ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছয়নি। এখন তিনি বলছেন, পরীক্ষা-কেন্দ্র সামলাতে পারবেন না! বাংলা কি এমন অযোগ্য মুখ্যমন্ত্রীর যোগ্য?’’ তাঁর দাবি, শারীরিক দূরত্ব রাখতে প্রতি ঘরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ থেকে কমিয়ে ১২ করা হয়েছে এবং শিফ্‌ট পিছু ১ লক্ষ ৩২ হাজারের বদলে ৮৫ হাজার জন পরীক্ষায় বসবেন।

দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত নেয়, তারই বিরোধিতা করেন। আমি ছাত্র-ছাত্রীদের, অভিভাবকদের বলব, আপনারাই ভেবে দেখুন!’’ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা মত, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে ওঁরা কর্ণপাত করেননি। এই অতিমারির মধ্যে নিট এবং জেইই করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপির সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অন্যায় করছে শুধু নয়। একটা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

JEE NEET Mamata Banerjee Sonia Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE