করোনাভাইরাসে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি নেতাদের। রবিবার নয়াদিল্লিতে ভার্চুয়াল ‘জন সংবাদ সভা’-য়। পিটিআই
গত মার্চে লকডাউন শুরু দিন থেকে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি বহু দিন। তা নিয়ে বিস্তর কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা, মিম ঘুরেছে নেট-দুনিয়ায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অবশ্য তাঁকে দেখা যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, সেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ দিন বিহারে সাড়ম্বরে ‘ভার্চুয়াল জনসভা’ করলেন। লকডাউন শুরুর পরে প্রথম এমন সভায় রামমন্দির, ৩৭০ রদ, তিন তালাক, সিএএ নিয়ে বিস্তর ঢাক পেটালেও এনআরসি-র নামও উচ্চারণ করলেন না। বদলে বছরশেষে বিহারের বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা করলেন অমিত।
অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারের বিধানসভা ভোট। উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা সবথেকে বেশি। প্রধানমন্ত্রী চার ঘণ্টার নোটিসে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরাই। রোজগার, বাসস্থান খুইয়ে মরিয়া হয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে মারাও গিয়েছেন অনেকে। নির্বাচনের আগে এই শ্রমিকদের ক্ষোভ নিয়ে যে বিজেপি চিন্তায়, তা আজ অমিতের কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, “মানুষের কষ্ট হয়েছে। কিছু বিহ্বল করার মতো দৃশ্য সামনে এসেছে। ধৈর্য্য হারিয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে
কোয়রান্টিন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ১ মে ট্রেনের বন্দোবস্ত করেছি।” আচমকা লকডাউনের ঘোষণায় সমস্যা বেড়েছে, এই যুক্তি উড়িয়ে অমিতের দাবি, “করোনা মহামারির পরে মোদীজি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্মানের সঙ্গে রাখা হোক। তার জন্য ১১ হাজার কোটি টাকা রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়েছিল।”
মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল ‘জন সংবাদ সভা’-কে অরাজনৈতিক সভা বলে দাবি করে আজ শাহের যুক্তি, এটি বিহার ভোটের প্রচার নয়। কিন্তু দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতর থেকে বক্তৃতায় দাবি করেছেন, বিহারে এনডিএ জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় ফিরবে। এ দিন অমিতের সভার জন্য বিপুল আয়োজন করেছিল রাজ্যে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক বিজেপি। সূত্রের দাবি, রাজ্যের ৭২ হাজার বুথে ৭২ হাজার এলইডি টিভি লাগানো হয়। বিরোধীদের প্রশ্ন, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য টাকা দেয়নি বিজেপি সরকার, কিন্তু তারাই অমিত শাহের কথা শোনানোর জন্য ৭২ হাজার টিভির ব্যবস্থা করেছে! ভোটে এর জবাব দেবে বিহার।
বস্তুত সেই সুরটাই চড়িয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষোভ উস্কে দিতে এ দিন শাহের সভার আগে আরজেডি-র লালু প্রসাদের স্ত্রী রাবড়ী দেবী, দুই পুত্র তেজস্বী ও তেজ প্রতাপ যাদব রাস্তায় বেরিয়ে থালা বাজিয়েছেন। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রবিবারের দিনটি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস হিসেবেও পালন করেছে আরজেডি। ভোটে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোগান্তি বিরোধীদের হাতিয়ার হবে বুঝে অমিত আগেই এ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলে প্রশ্ন করেছেন, আপনারা এত দিন কোথায় ছিলেন? দিল্লিতে বসে আরাম করছিলেন? রাহুল গাঁধীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, কেউ আমেরিকায়, সুইডেনে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।
বিরোধীরা থালা বাজানো, প্রদীপ জ্বালানো, যুদ্ধবিমান উড়িয়ে হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টিকে নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক প্রচার বলে কটাক্ষ করেছিলেন। অমিত বলেন, “বক্রদ্রষ্টারা জানেন না, এটা মোদীজির দেশকে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইতে এককাট্টা করার পদক্ষেপ।”
আরও পড়ুন: কথা চলবে চিনের সঙ্গে: বিদেশ মন্ত্রক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy