এম জে আকবর
চাপের মুখে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা থেকে সরতেই হল এম জে আকবরকে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন আজ ‘নমো-অ্যাপ’-এর মাধ্যমে দলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন, শবরীমালা নিয়েও উত্তাল কেরল, সেই সময়ে সন্তর্পণে একটি বিবৃতি জারি করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কথা জানালেন প্রাক্তন সাংবাদিক আকবর। গত রবিবারও বিদেশ থেকে ফিরে তিনি ইস্তফার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৯৭ জন উকিল নিয়ে বরং তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মানহানির ফৌজদারি মামলা করেন। তবে কাল দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে সেই মামলা শুরুর আগেই ইস্তফা দিতে হল আকবরকে। ইস্তফা মঞ্জুরও হয়েছে।
মাত্র তিন দিনে অবস্থান বদলে ইস্তফার কারণ বলছেন আকবর?
বিবৃতিতে তিনি জানান, ‘‘যে হেতু বিচার চাইতে ব্যক্তিগত ক্ষমতায় আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি, তাই আমার বিরুদ্ধে ওঠা ভুয়ো অভিযোগের ব্যক্তিগত স্তরেই মোকাবিলার জন্য পদত্যাগ করা সঠিক বলে মনে করছি। তাই বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। দেশসেবা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আমাকে যে সুযোগ দিয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ।’’ আকবরের ইস্তফার পরই তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগকারী সাংবাদিক প্রিয়া রামানি টুইট করেন, ‘‘মহিলা হিসেবে আমাদের অবস্থানই সত্য হল আকবরের ইস্তফায়। সে দিনের অপেক্ষায় আছি, যে দিন আদালত থেকেও বিচার পাব।’’
কিন্তু তিন দিনে এমন কী হল যে আকবরকে সরে যেতে হল?
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, এর পিছনে মূলত চারটি কারণ। এক, রাহুল গাঁধী গত কাল প্রথম আকবরের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সরিয়েও দিয়েছেন। আজ টুইটে প্রিয়া রামানিকে ‘ফলো’ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বার আকবর নিয়েও মোদীকে নিশানার ঘুঁটি সাজাচ্ছেন।
এম জে আকবরের সেই ইস্তফাপত্র
দুই, আকবরকে নিয়ে মোদী মন্ত্রিসভাও দ্বিধাবিভক্ত। মানেকা গাঁধী ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করে একতরফা তদন্ত শুরুর ঘোষণা করেছেন। মহিলা মন্ত্রীরা মনে করেন, ২০ জন মহিলা সাংবাদিক আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। প্রিয়ার বিরুদ্ধে মানহানি মামলার পরেও আরও মহিলা সামনে আসছেন। কাল আকবরের বিরুদ্ধে ‘অন্তর্বাস’ পরে হোটেলে দেখা করার অভিযোগ জানিয়ে আরও এক জন মুখ খুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে আকবরের পাশে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।
তিন, ৭২ জন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে আকবরকে সরানোর দাবি তুলেছেন। যাঁর মধ্যে অনিতা অগ্নিহোত্রী থেকে জহর সরকার, অর্ধেন্দু সেন, হীরক ঘোষ থেকে টুকটুক ঘোষও রয়েছেন। সাংবাদিক সংগঠনগুলিও একজোট হয়ে আকবরের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, গত কাল এক আকবরের স্মৃতি মুছে ইলাহাবাদের নাম প্রয়াগরাজ করেছে বিজেপি। ২০ জন মহিলা অভিযোগ করার পরেও আর এক আকবরের প্রতি এত সমীহ কেন প্রধানমন্ত্রীর? রামদাস আটওয়ালের মতো শরিক নেতারাও আকবরের পদত্যাগ চেয়ে সরব হয়েছিলেন।
চার, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে মহিলাদের মধ্যে মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়াতে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা আইনের ফাঁকফোকর খতিয়ে দেখতে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠনের পরামর্শও দেন শীর্ষ মন্ত্রীরা। তাঁদের মতে, আকবর জননেতা নন। তাঁকে খোয়ালে ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়বে না। কিন্তু রাখলে মহিলাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ২০ জন মহিলার বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছেন, দল বা সরকারের পক্ষে এটি সুখকর নয়। এই অবস্থায় গত কাল আকবরের বাড়ি যান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তিনিই আকবরকে ইস্তফার পরামর্শ দেন বলে সূত্রের দাবি। তবে কংগ্রেসের বক্তব্য, বিজেপি কিন্তু দলীয় পদ ও সংসদ থেকে আকবরকে সরায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy