ফিরলেন এম জে আকবর। রবিবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ গত কালই একটি সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আজ বিদেশ সফর সেরে আকবর দেশে ফেরার পরে সেই ইঙ্গিতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এখনও পর্যন্ত যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের মন্ত্রিত্ব কাড়তে কোনও পদক্ষেপ করল না নরেন্দ্র মোদী সরকার। আকবর নিজেও মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পথে হাঁটেননি। উল্টে এক দীর্ঘ বিবৃতিতে অভিযোগকারী মহিলা সাংবাদিকদেরই আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, সব সাজানো, মিথ্যে! ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন আকবর। তাঁর ওই বিবৃতি নিয়ে মোদী সরকার এবং আকবরের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সব মহলের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। এবং সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, দেশজোড়া বিক্ষোভের মধ্যে কত দিন আকবরকে রাখতে পারবেন মোদী-অমিত শাহেরা?
রবিবার ভোরে আকবর দেশে ফেরার পরে আজ কংগ্রেসের তরফে চাপ তৈরি করা হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর উপর। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘নীরবতা ভঙ্গ’ করার দাবি জানিয়েছেন। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বিজেপিরও একটি বড় অংশের (যার মধ্যে রয়েছেন অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ী, মেনকা গাঁধী) দাবি— উনিশের ভোটের আগে এই বিতর্কে জল ঢালতে সরানো হোক আকবরকে। আজ মোদী সরকারের মন্ত্রী রামদাস আঠবালেও বলেন, ‘‘মহিলাদের কেউ অসম্মান করলে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এমনকি নানা পটেকর বা আকবরও যদি দোষী প্রমাণিত হন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ দেশ জুড়ে নারী বিক্ষোভের যে ঢেউ উঠেছে, আকবরকে না সরালে তা আরও জোরদার হবে বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট নেতাদের। মেনকা গাঁধী এবং স্মৃতি ইরানি এর আগে মি-টু আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন। তবে আকবরের ভবিতব্য নিয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি তাঁরা। সূত্রের খবর, মেনকা তাঁর মতো করে ঘটনাটি নিয়ে মতামত জানিয়েছিলেন সরকারের শীর্ষ স্তরে।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করছেন না মোদী-অমিত শাহ। যে যুক্তিগুলি ঘরোয়া ভাবে দলের আকবর-বিরোধী শিবিরের কাছে দেওয়া হয়েছে, তার প্রথমটি হল— অভিযোগগুলির সঙ্গে আকবরের মন্ত্রিত্ব বা তাঁর বিজেপি অধ্যায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। সেগুলি বহু পুরনো, প্রমাণ করা শক্ত। তার দায় মোদী সরকার কেন নিতে যাবে? দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নিলে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যেতে পারে। ভোটের আগে বিরোধীরা রাজনৈতিক ভাবে এর ব্যবহার করে অন্য কারও বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আনতেই পারে। সে ক্ষেত্রে আকবরের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে একের পর এক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠবে। তার চেয়ে আইন-আদালতের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পথে হাঁটাই ভাল।
সূত্রের খবর, আইনি পথে যাওয়ার পরামর্শ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকেই আকবরকে দেওয়া হয়েছে। আজ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘দেশের লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে হঠাৎ এই ঝড় উঠল কেন? এটার কি কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে?’’
কংগ্রেসের তরফে আকবরের এই বিবৃতির তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। দলের নেতা সঞ্জয় ঝা বলেন, ‘‘যৌন হেনস্থার অভিযোগকে আজ আকবর বলছেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র! এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার শামিল! #মিটু আন্দোলনের শীর্ষ বিন্দু হওয়া উচিত এই বিবৃতি। আপনারা পিছু হটবেন না। আরও বড় আন্দোলনে নামার সময় এসেছে।’’ কংগ্রেসের আর এক নেতা আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘এটা মহিলাদের সম্মান এবং নিরাপত্তার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে তাঁর নীরবতা ভঙ্গ করুন। এটা তাঁর সাংবিধানিক এবং নৈতিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও নীরবই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy