ও-পার বাংলা থেকে টলিউডে এসে এ-পার বঙ্গেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। সেই বাংলাদেশি অভিনেতা ফিরদৌস আহমেদকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ফরেনার্স ডিভিশন। মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তাঁকে ‘লিভ ইন্ডিয়া মেসেজ’ দেওয়া হয়। ‘বিজনেস ভিসা’ নিয়ে এ দেশে এসে রাজনৈতিক দলের প্রচারে যোগ দেওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র। ফিরদৌসকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হয়েছে। এ দিনই সন্ধ্যার বিমানে তিনি দেশে ফিরে গিয়েছেন।
‘‘ভিসার শর্ত মানেননি ফিরদৌস। বিদেশে এসে রাজনৈতিক দলের প্রচারে যোগ দেওয়াও নজিরবিহীন। তাই ভবিষ্যতে তাঁকে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব দেখানো হবে,’’ বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, শুধু এ দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নয়, কলকাতার বাংলাদেশি উপদূতাবাস থেকেও ফিরদৌসকে দ্রুত ঢাকায় ফিরে যেতে বলা হয়। এ রাজ্যে এসে ভোটের সময় ওই অভিনেতা রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে ঢাকার বিদেশ মন্ত্রকও।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ১৪ এপ্রিল ‘বিজনেস ভিসা’ নিয়ে কলকাতায় আসেন ফিরদৌস। ভিসার শর্ত অনুযায়ী তিনি সিনেমার শুটিং, বিনোদনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারতেন। ২০২২ সাল পর্যন্ত ভিসা ছিল তাঁর।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ফিরদৌস রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে প্রচার করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তৃণমূল জানিয়েছে, ১৪ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের হেমতাবাদ, বাঙালবাড়ি, নওদা, বিষ্ণুপুর ও চইনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা এবং রায়গঞ্জ ব্লকের মাড়াইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রোড শো করে নির্বাচনী প্রচার চালান ফিরদৌস। ১৫ এপ্রিল তিনি করণদিঘি ও ইসলামপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতেও প্রচার করেন তিনি।
কানাইয়ালাল অবশ্য মঙ্গলবার দাবি করেন, ফিরদৌস তাঁর সমর্থনে হেমতাবাদ ও রায়গঞ্জে রোড শো করে প্রচার চালিয়েছেন বলে তাঁর জানা নেই। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুরের সঙ্গে বরাবর যোগাযোগ রয়েছে ফিরদৌসের। এর আগে তিনি ছবির শুটিং করতে একাধিক বার এই জেলায় এসেছেন।’’
রায়গঞ্জে অভিনেতা অঙ্কুশ ও পায়েলের সঙ্গে প্রচারে ফিরদৌস (বাঁ দিকে)। ছবি: চিরঞ্জীব দাস
সংবাদমাধ্যমে ফিরদৌসের ভোট-প্রচারের খবর দেখে তথ্য যাচাই করে দিল্লি। কলকাতার ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) থেকে সবিস্তার রিপোর্ট পেয়েই উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ফিরদৌসকে দেশ ছাড়ার নোটিস ধরানো হয়। ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করায় ভবিষ্যতে তাঁর ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানাচ্ছেন দিল্লির কর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জেনেছে, ১৫ এপ্রিল রাতে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ফিরদৌস রায়গঞ্জ শহরের একটি হোটেলে ওঠেন। মন্ত্রকের কর্তারা তাঁর খোঁজ করায় হোটেল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, ফিরদৌস রাতে হোটেলে থাকেননি। তিনি ছিলেন তৃণমূলের এক জেলা নেতার বাড়িতে। যদিও মন্ত্রকের কর্তারা খবর পান, ওই অভিনেতা রায়গঞ্জের হোটেলেই ছিলেন। বাংলাদেশি অভিনেতার এ ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার খবর ঢাকার বিদেশ মন্ত্রককেও জানিয়েছে দিল্লি। এক মুখপাত্র জানান, ভিসার শর্ত মানাই শেষ কথা নয়, বিদেশে গিয়ে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার করা অনৈতিক। ফলে ব্যবস্থা নিতেই হচ্ছে।
ফিরদৌসের প্রচারে যোগদান নিয়ে এ দিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাবের কাছে অভিযোগ করেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘কোনও বিদেশি নাগরিক কোনও ভাবেই আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে বা সরকার গঠনে নাক গলাতে পারেন না। অর্থাৎ ভোটের প্রচারে নেমে জনমতকে প্রভাবিত করার অধিকার বিদেশি নাগরিকের নেই। তা সত্ত্বেও তৃণমূল ইসলামপুরে দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে এনে প্রচার করিয়েছে। কারণ, দলীয় কর্মী এবং নিজেদের শিবিরের চিত্রতারকাদের উপরে আর তাদের ভরসা নেই।’’
অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সঞ্জয় বসু জানান, এই ঘটনায় জেলা নির্বাচন অফিসার তথা জেলাশাসকের রিপোর্ট চাওয়া হয়। সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। ওই কমিশন সূত্রের ব্যাখ্যা, কোনও রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর হয়ে বিদেশিদের প্রচারের বিষয়টি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ কি না, সেটা কোথাও স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। সম্প্রতি কোথাও এই ধরনের বিষয় সামনে আসেনি। সেই জন্যই বিষয়টি নিয়ে কমিশনকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
রাহুলবাবুর দাবি, ফিরদৌস-সহ দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। যে-তৃণমূল নেতা বা কর্মীরা তাঁদের ডেকে এনেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা উচিত। ‘‘বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশের ফলেই এমনটা ঘটেছে বলে আমাদের সন্দেহ। তাই আমরা এই ঘটনায় এনআইএ তদন্ত চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিচ্ছি,’’ বলেন রাহুলবাবু। এক কদম এগিয়ে রাজ্যসভার বিজেপি সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এই ঘটনাকে ছোট করে দেখলে চলবে না। কারণ, এই উদাহরণ থেকে গেলে পাকিস্তান থেকেও কেউ এসে এখানে ভোটের প্রচারে নেমে পড়তে পারেন।’’
অভিযোগের জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy