অক্ষয় কুমারের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: টুইটারের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া
‘মিত্রোঁ’! এই সম্বোধন তাঁর ‘ট্রেডমার্ক’। দল-মন্ত্রিসভায় তাঁর ‘বন্ধু’ প্রায় সবাই। কিন্তু বিরোধী শিবিরে? সেখানে কি শুধুই ‘শত্রু’? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন ‘না’। বরং অনেকেই বন্ধু। এবং তাঁদের মধ্যে অন্যতম ‘মিত্রোঁ’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর জন্য প্রতি বছর ‘মিষ্টি পাঠান’, ‘নিজে কুর্তা পছন্দ করে কিনে দেন’! বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের মুখোমুখি হয়ে এমনই ‘মনের কথা’ ফাঁস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাজনীতির ময়দানে যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ বিজেপি-তৃণমূল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে মোদীর ‘কোমরে দড়ি পরানো’র হুঙ্কার ছেড়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত পাঁচ বছরেও বহুবার কেন্দ্র রাজ্য সঙ্ঘাত চরমে উঠেছে। সেই সব চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফের লোকসভা ভোট। তিন দফা হয়ে গিয়েছে। বাকি আরও চার দফার ভোটগ্রহণ। ফের উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাতাবরণ। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ মোদী-মমতা। এ রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে মোদী যেমন মমতাকে তীব্র আক্রমণ করছেন, তেমনই মমতাও পাল্টা তোপ দেগে যাচ্ছেন। মোদী যেমন ‘স্পিডব্রেকার দিদি’ বলেছেন, সারদা, নারদা, সিন্ডিকেট নিয়ে নিশানা করছেন মমতাকে, মমতাও পাল্টা ব্যবহার করছেন ‘হিটলার আঙ্কল’, ‘এক্সপায়ারি বাবু’, ‘দাঙ্গাবাজ’, ‘নোটবন্দি কেলেঙ্কারির নায়ক’-এর মতো শব্দবন্দ। এমনই তপ্ত রাজনৈতিক আবহে মোদী ফাঁস করলেন মমতার সঙ্গে তাঁর ‘বন্ধুত্ব’র কথা।
‘রাউডি’ অক্ষয় কুমারের প্রশ্ন ছিল, ‘‘বিরোধীদের মধ্যে আপনার কোনও বন্ধু আছে?’’ মোদীর জবাবে উঠে এসেছে মমতার নাম। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা শুনে আশ্চর্য হবেন এবং ভোটের মরসুমে এটা বলা আমার উচিত নয়। কিন্তু মমতা দিদি আমার জন্য প্রতি বছর উপহার পাঠান। একটি বা দু’টি কুর্তা পাঠান এবং সেটা উনি নিজে পছন্দ করে কেনেন।’’ যদিও পরক্ষণেই তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছর নিয়ম করে তাঁর জন্য নতুন নতুন ধরনের মিষ্টি পাঠান। ‘‘মমতা দিদি সেটা যখন জানতে পারলেন, তখন উনিও আমাকে বছরে এক বার বা দু’বার মিষ্টি পাঠানো শুরু করলেন।’’— বললেন মোদী।
#WATCH PM Narendra Modi during interaction with Akshay Kumar, speaks on his friends in opposition parties, especially Ghulam Nabi Azad & Mamata Banerjee pic.twitter.com/8GkqrHpqXv
— ANI (@ANI) April 24, 2019
অক্ষয়ের সঙ্গে মোদীর এই সাক্ষাৎকারকে বলা হচ্ছে ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’। প্রধানমন্ত্রী নয়, ‘ব্যক্তি’ মোদী মুখোমুখি সুপারস্টার অক্ষয়ের। কিন্তু মোদীর মতো ধুরন্ধর এবং কথার মারপ্যাঁচে সিদ্ধহস্ত রাজনীতিবিদ যে কথার জালে রাজনীতির বার্তা দেবেনই, সেটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। পর্যবেক্ষরাও তাই মমতার সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পিছনে রাজনীতির ইঙ্গিত পাচ্ছেন। ভোট শেষ হওয়ার আগেই ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক সমীকরণও নিয়েও কি ছক কষতে শুরু করে দিয়েছেন মোদী। সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দিদি, কটাক্ষ মোদীর
আরও পড়ুন: গির্জায় হামলা হতে পারে, বিস্ফোরণের দু’ঘণ্টা আগেই শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করেছিল ভারত
মমতা-হাসিনার প্রসঙ্গের আগে অবশ্য কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের কথাও অক্ষয় কুমারকে বলেছেন মোদী। তাঁদের বন্ধুত্বের গভীরতা বোঝাতে একটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন মোদী। তার নির্যাস, সংসদে তাঁরা দু’জন খোশগল্প করছিলেন। কিন্তু বাইরে বেরনোর পর সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করতেই গুলাম নবি জবাব দেন, রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা সবাই একটা পরিবারের মতো। এটাই তাঁরা মনে করেন।
তবে এর পাশাপাশি মোদীর ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কথাই উঠে এসেছে সাক্ষাৎকারে। কখনও প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা কোনওদিনই ভাবেননি, জানিয়েছেন মোদী। সোশ্যাল মিডিয়ার মিম, সমালোচনাকে যে তিনি ইতিবাচক ভাবেই নেন, এবং তার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি দেখেন বলেও জানিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র তিন-চার ঘণ্টা ঘুমের কথা বলতে গিয়ে টেনে এনেছেন বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ। ওবামা নাকি দেখা হলেই মোদীকে ঘুম বাড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেছেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy