এক সময় ভোপালে নরেন্দ্র মোদীর নাম ভাবা হচ্ছিল।— ফাইল চিত্র।
সেমিফাইনালে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে তীরে এসে তরী ডুবেছিল বিজেপির। ভারতের ‘দিল’ এখন কংগ্রেসের কব্জায়। মধ্যপ্রদেশের মতোই বেশ কয়েকটি রাজ্যে সেমিফাইনালে খুব একটা ভাল ফল করতে পারেনি পদ্মশিবির। তাই এ বারও লোকসভা নির্বাচনে ‘অধিনায়ক’ নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে ফাইনাল জিততে মরিয়া বিজেপি। আর ফাইনাল ম্যাচ জিততে হলে মধ্যপ্রদেশকে বাদ দিয়ে যে কখনওই সম্ভব নয়, তা ভালই জানেন অমিত শাহরা। তাই মধ্যপ্রদেশের ২৯টি আসনই পাখির চোখ বিজেপির।
রাহুলের টিমে কমলনাথ, দিগ্বিজয় সিংহের মতো অভিজ্ঞ নেতা যেমন রয়েছেন তেমনই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কমলনাথের ছেলে নকুলনাথের মতো তরুণ নেতাও লড়াইয়ের ময়দানে টক্কর দিতে তৈরি।
এই পরিস্থিতিতে টি-টোয়েন্টি নয়, বরং টেস্ট খেলায় মন দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। প্রয়োজনে ইনদওর, ভোপাল কিংবা বিদিশা থেকে নরেন্দ্র মোদীকে ব্যাট করতে দেখা যেতে পারে। এমনই গুঞ্জন মধ্যপ্রদেশ জুড়ে।
বারাণসীতে মোদীর পথের কাঁটা হতে পারেন কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ভোট প্রচারে নেমে প্রিয়ঙ্কাই নিজেই জল্পনা উসকে দিয়ে বলেছিলেন, “ভোটে যদি লড়াই করি, তা হলে বারণসী থেকে কেন নয়?”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এর পরেই ঘুম উড়ে গিয়েছে বিজেপি শিবিরের। সত্যিই যদি মোদীর বিরুদ্ধে প্রিয়ঙ্কা প্রার্থী হন, তা হলে টক্কর যে সমানে সমান হবে, তা বিজেপির অতিবড় সমর্থকও জানেন। রাহুল গাঁধী যেমন কেরলের ওয়েনাড আসন বেছে নিয়েছেন, তেমনই মোদীর জন্য দ্বিতীয় বিকল্প আসনের খোঁজ চলছে বিজেপির অন্দরে। সুরক্ষিত আসন খুঁজতে গিয়ে মধ্যপ্রদেশে নজর পড়েছে মোদীর ভোট ম্যানেজারদের।
জনসভায় বক্তব্য রাখছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। —নিজস্ব চিত্র।
বিকল্পের তালিকায় ইনদওর অন্যতম। ১৯৮৯ সাল থেকে এই আসনে বিজেপির সুমিত্রা মহাজন জিতে আসছেন। এ বার তিনি দাঁড়াবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। যদিও নিন্দুকেরা বলছেন, তাঁকে চাপ দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। কারণ, মোদীজি এখান থেকে দাঁড়াতে পারেন। পর পর তিন বার ‘পরিচ্ছন্ন শহর’-এর খেতাব রয়েছে ইনদওরের মুকুটে। আরএসএস-এর শক্ত ঘাঁটি। বিজেপির কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মতো নেতার খাস তালুক। এখান থেকে লড়লে, জয় প্রায় নিশ্চিত। এই একটি মাত্র আসনে এখনও কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। বাকি আসনে কংগ্রেসের প্রচার মধ্যগগনে। হাতে মাত্র আর কয়েকটা দিন, ইনদওরকে কেন্দ্র করে তাই স্নায়ুর লড়াই চলছে দুই দলের মধ্যে।
আরও পড়ুন: প্রচারে নিষেধাজ্ঞায় চ্যালেঞ্জ মায়াবতীর, আবেদন খারিজ শীর্ষ আদালতে
ভোপালে কংগ্রেস প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। এই আসনে নরেন্দ্র মোদীর নাম ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু দিগ্বিজয়ের মতো হেভিওয়েট নেতার কথা মাথায় রেখে, উমা ভারতীর মতো কাউকে দাঁড় করানো যায় কি না, তার চেষ্টা চলছে। কিন্তু উমা নিজেই ঘোষণা করেছেন, তিনি এই আসনে দাঁড়াবেন না। বিজেপি শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এই আসনেও প্রার্থীর নাম ঝুলে রয়েছে।
ভোপালের থেকে বিদিশা আসন বেশি নিশ্চিত বলে মনে করেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ ইনদওরের মতোই ১৯৮৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বিজেপির দখলেই রয়েছে বিদিশা। ১৯৯১ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীও লোকসভা নির্বাচনে লখনউয়ের পাশাপাশি দ্বিতীয় আসন হিসাবে বিদিশাকেই বেছে নিয়েছিলেন। পরে লখনউ আসন জিতে তিনি বিদিশা ছেড়ে দেন শিবরাজ সিংহ চৌহানের জন্য। মধ্যপ্রদেশের ‘মামা’ ওই আসনে পাঁচ বারের সাংসদ। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন সুষমা স্বরাজও। ঘটনাচক্রে এ বার সুষমা লড়ছেন না। নরেন্দ্র মোদীর জন্যে তাই বিদিশাও মাথায় রাখা হয়েছে হয়েছে।
২০১৪ লোকসসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৯টি আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি হেরেছিল। পরে উপ-নির্বাচনে আরও একটি আসন হাতছাড়া হয়। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরে গেলেও, কংগ্রেসের থেকে ১ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে (৪১ শতাংশ) লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে পদ্মশিবিরের ভাগ্য নির্ভর করছে আসনভিত্তিক হিসেবনিকেশের উপরেই। ২৯ আসনের মধ্যে ১০টি আসন সংরক্ষিত।
লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে যে কোনও একটি আসনে নরেন্দ্র মোদীর নাম জুড়ে যায়, তা হলে ভোটের লড়াই আলাদা মাত্রা পাবে বলে মনে করেন বিজেপি নেতৃত্ব। ভোপাল, ইনদওর, বিদিশার মতোই গুনা এবং সাগর আসনেও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy