নির্যাতিতার মাকে সান্ত্বনা প্রিয়ঙ্কার। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা সামান্য আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথকে বুঝতে হবে, যেখানেই অন্যায় হবে, সেখানেই আমরা যাব। আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ব।’’
তার দু’মিনিটের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর ঘোষণা করল, হাথরসের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন যোগী। রাজনীতিকরা মনে করছেন, ঘরে-বাইরে চাপের মুখেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর মধ্যে বিরোধীদের রাজনৈতিক অস্ত্র ভোঁতা করে দেওয়ার কৌশলও রয়েছে। হাথরসের ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। যোগীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোরও দাবি উঠেছিল। যোগী আজ নিজের পুলিশ-প্রশাসনের থেকে সিবিআইয়ের দিকে নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইলেন।
যোগীর উপরে চাপ বাড়াতে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা কংগ্রেসের ৩৫ জন সাংসদকে নিয়ে হাথরসের উদ্দেশে এআইসিসি সদর দফতর থেকে রওনা দিয়েছিলেন। সাংসদরা ছিলেন মিনিবাসে। সঙ্গে কয়েকশো সমর্থক। কিন্তু দিল্লি পেরিয়ে উত্তরপ্রদেশে ঢোকার মুখে ডিএনডি (দিল্লি-নয়ডা-দিল্লি) উড়ালপুলের মুখে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করে কার্যত খাকি উর্দির প্রাচীর তৈরি করে ফেলা হয়। রাহুল হাথরস রওনা হওয়ার আগেই বলেছিলেন, ‘‘দুনিয়ার কোনও শক্তি আমাকে আটকাতে পারবে না।’’ প্রিয়ঙ্কাও বলেছিলেন, ‘‘আজ যেতে না-দিলে আবার চেষ্টা করব।’’
আরও পড়ুন: হাথরস-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ যোগী আদিত্যনাথের
আরও পড়ুন: ইতিহাসের ‘প্রবীণ’ ছাত্র যখন হাথরসের বর্তমান ‘ভিলেন’
কংগ্রেস নেতারা এ নিয়ে লাগাতার প্রচারের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন দেখেই যোগী সরকার কৌশল পাল্টায়। প্রথমে পুলিশবাহিনী লাঠি চালিয়ে কংগ্রেস নেতাদের আটকানোর চেষ্টা করে। এমনকি, এক পুরুষ পুলিশকর্মী প্রিয়ঙ্কার পোশাক টেনে ধরে তাঁকে বাধা দেয়। পরে অবশ্য মাথা নুইয়ে রাহুল, প্রিয়ঙ্কা, অধীররঞ্জন চৌধুরী, মুকুল ওয়াসনিক এবং কে সি বেণুগোপালকে যাওয়ার অনুমতি দেয়। পাঁচ জনে গাড়িতে সন্ধ্যায় হাথরসে পৌঁছন।
বাড়িতে ঢুকে তরুণীর মাকে সান্ত্বনা দিতেই তিনি প্রিয়ঙ্কাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টা ঘরের মেঝেতে বসে তরুণীর মা ও বাড়ির মহিলাদের কাছে গোটা ঘটনা শোনেন প্রিয়ঙ্কা। রাহুল নির্যাতিতার বাবা, ভাই ও অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে রাহুল বলেন, ‘‘পরিবারের লোকদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে কাগজে সই করানো হোক না কেন, কোনও শক্তি ওঁদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। ওঁরা ন্যায় চাইছেন। আমরা ন্যায় পাইয়ে দেব।’’
হাথরসে যাওয়ার পথে পুরুষ পুলিশকর্মীর বাধা প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
‘ন্যায়’ দিতে চেয়ে যোগী তো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তা হলে? নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে প্রিয়ঙ্কা কিন্তু জানান, হাথরসের পরিবারটির সিবিআই তদন্তে ভরসা নেই। তিনি জানান, পরিবার চায়, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। একই সঙ্গে জেলাশাসককে সাসপেন্ডের দাবি তুলে
পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন, কেন মেয়ের দেহ আমাদের জিজ্ঞাসা না করে জ্বালানো হল, কেন রোজ আমাদের ধমকানো হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে? সেই সঙ্গেই এ দিন পরিবারটি প্রিয়ঙ্কাদের জানিয়েছে, মানবিকতার খাতিরে অস্থি সংগ্রহ করলেও জানি না ওটা আমাদের মেয়েরই দেহ কি না! যোগী সরকারকে এর জবাব দিতে হবে।
Watch- @RahulGandhi listens to Hathras victim's father & mother inside their home.@PriyankaGandhi is looking at the pictures the family is showing to her of their daughter.
— Saahil Murli Menghani (@saahilmenghani) October 3, 2020
The moments to avoid which CM Aditynath put everything at stake. pic.twitter.com/iAsyybYp9u
গত তিন দিন ধরে হাথরসে দলিত তরুণীর গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়েই দেশের রাজনীতি উত্তাল। মঙ্গলবার মাঝরাতে পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন তরুণীর মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেয়। পরিবারের লোকেদের দাবি মতো সৎকারের সুযোগ দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার থেকে হাথরসে বুল গড়হী গ্রামে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া ও রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে যেতে না দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। শুক্রবার তৃণমূলের সাংসদরাও গ্রামে ঢুকতে পারেননি।
এ নিয়ে বিজেপির অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠেছিল। প্রবীণ বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী শুক্রবার রাতে প্রকাশ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যোগীর কাছে দাবি জানান, রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যমকে যেন পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। বিজেপির অনেক নেতারই মত ছিল, হাথরসের ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ প্রথমেই চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল। তার পরে পরিবারের আপত্তি অগ্রাহ্য করে মাঝ রাতে দেহ সৎকার করে, গ্রাম ঘিরে রেখে, সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের আটকে যোগী সরকার গোটা ঘটনা ধামাচাপা দিতে যায়। তাতে উল্টো ফল হয়।
পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাথরসের পথে রাহুল গাঁধী। (ডানদিকে) মৃতার পরিজনের কথা শুনছেন তিনি। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
শনিবার পুরনো অবস্থান থেকে সরে এসে যোগী সরকার রাহুল-প্রিয়ঙ্কা-সহ কংগ্রেসের পাঁচ নেতাকে হাথরসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়। তার আগে সংবাদমাধ্যমকেও গ্রামে ঢোকার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এমনিতেই প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা মাঠে নামার সুযোগ খুঁজছিলেন। হাথরসের ঘটনা রাহুল, প্রিয়ঙ্কার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। অখিলেশ যাদব, মায়াবতী রাস্তায় না নামলেও যোগী আদিত্যনাথের ইস্তফা দাবি করতে শুরু করেছিলেন। সিবিআই তদন্ত মেনে নেওয়ার পরে বিরোধীদের আর কিছু বলার থাকবে না। আবার কেন্দ্রের অধীন সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ায় যোগীরও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার যে সব প্রশ্ন তুলেছে, তাতে সমস্যা বাড়বে বলেই আশঙ্কা রাজ্য প্রশাসনের একাংশের।
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এন সি আস্থানার মন্তব্য, ‘‘সিবিআই মানেই নিরপেক্ষ তদন্ত হবে, এমন নয়। সিবিআইয়ের ট্র্যাক রেকর্ড খুবই খারাপ। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ একপ্রকার উত্তরপ্রদেশের পুলিশের ব্যর্থতারও স্বীকারোক্তি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy