প্রতিবছর গুরুদ্বার দরবার সাহিব কর্তারপুরে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা।—ফাইল চিত্র।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গড়ে উঠবে ‘ধর্মীয় করিডর।’ যাতে পড়শি দেশের গুরুদ্বারে যেতে সুবিধা হয় দর্শনার্থীদের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিল পাস হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। পরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে করিডর তৈরির কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।পঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার ডেরা বাবা নানক থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পর্যন্ত ৩-৪ কিলোমিটার বিস্তৃত করিডরটি। যার নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে সরকারই। এ ব্যাপারে ইসলামাবাদকেও আর্জি জানানো হয়েছে, যাতে তাঁদের তরফেও সীমান্ত থেকে গুরুদ্বার পর্যন্ত একই রকম একটি করিডর গড়ে তোলা হয় এবং সেখানে গিয়ে অসুবিধায় পড়তে না হয় ভারতীয় দর্শনার্থীদের। প্রয়োজনীয় সবরকম সুযোগ সুবিধা পান তাঁরা।
দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য আগেই পাকিস্তানের তরফে কর্তারপুর সীমান্ত খুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত কানে যেতেই টুইট করেন সে দেশের তথ্য মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি। তিনি লেখেন, ‘‘ঢের আগেই কর্তারপুর সীমান্ত খুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল পাকিস্তান। এতদিনে তাতে সম্মত হল ভারত সরকার। এই পদক্ষেপ দু’দেশের মধ্যে শান্তিস্থাপনের পথ প্রশস্ত করল।’’ ইমরান খানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়া এবং কর্তারপুর সীমান্ত খুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে সেপ্টেম্বর মাসে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কংগ্রেস সদস্য এবং পঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোত সিংহ সিধু। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে ‘পবিত্র’ করিডরটিকে নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। এ দিন মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
লাহৌর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের নানকানা সাহিব শহরে ইরাবতী নদীর তীরে ঐতিহাসিক গুরুদ্বার দরবার সাহিব কর্তারপুর অবস্থিত। সেখানে জীবনের ১৮টি বছর কাটান গুরু নানক।তাঁর সমাধিও রয়েছে সেখানে। আগামী বছর এপ্রিলে তাঁর জন্মের ৫৫০ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে এখন থেকেই উৎসবে মেতেছেন শিখ ধর্মাবলম্বীরা। বুধবারই লাহৌর পৌঁছন প্রায় ৩০০০ ভারতীয় দর্শনার্থী। তাঁদের সুযোগ সুবিধার কথা মাথায় রেখেই করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘আগামী বছর নানকের জন্মের ৫০০ বছর পূর্তি। ধূমধাম করে তা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী সীমান্ত পেরিয়ে পড়শি দেশে যান। তাঁদের কথা ভেবেই করিডর গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যে কোনও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো সুযোগ সুবিধা মিলবে ওই করিডরে।’’
আরও পড়ুন: ২৭,১৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি! দেশের এক নম্বর রিয়্যালিটি বিল্ডার এই বিজেপি বিধায়ক
আরও পড়ুন: অযোধ্যায় শিবসেনাকে সভা করার অনুমতি দিল না যোগী সরকার
সীমান্ত পেরিয়ে যাঁরা পাকিস্তান যেতে পারবেন না, তাঁদের জন্য বিশেষ টেলিস্কোপিক পয়েন্ট থাকবে। সেখানে দাঁড়িয়েই গুরুদ্বারের দর্শন পেতে পারবেন সাধারণ মানুষ। করিডর ছাড়াও নানকের জন্মস্থান সুলতানপুর লোধি শহরটিকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেখানে স্মার্ট সিটির মতো সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকবে। ‘পিন্ড বাবা নানক দা’ নামে বিশেষ প্রদর্শনী রাখা হবে। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হবে নানকের জীবনধারা ও তাঁর চিন্তা ভাবনা ।
অমৃতসরের গুরু নানকদেব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে গবেষণা ও পঠনপাঠনের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়াও ব্রিটেন এবং কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানকের নামে বিশেষ পদ তৈরি করবে সরকার। দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিয়োয় বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। প্রকাশ করা হবে নতুন মুদ্রা এবং ডাকটিকিট। প্রায় সব ভারতীয় ভাষায় নানকের জীবনী প্রকাশ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট। পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায় সেগুলিকে অনুবাদ করতে ইউনেস্কোকে অনুরোধ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জেটলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy