নরেন্দ্র মোদী, মুকেশ অম্বানী এবং গৌতম আদানির কুশপুতুল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ কৃষকদের। —ফাইল চিত্র।
বিতর্কিত কৃষি আইনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাদের। চুক্তিভিত্তিক কৃষিকাজে নেই কোনও আগ্রহও। কৃষক আন্দোলনের আঁচ গায়ে পড়তেই বিতর্কিত আইনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ ঝেড়ে ফেলল রিলায়্যান্স। তাদের পাল্টা অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে। সোমবার সংস্থার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনায় আনমাদের হাজার হাজার কর্মীর জীবন বিপন্ন। সংস্থার যোগাযোগ পরিকাঠামো অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু রিলায়্যান্স রিটেল লিমিটেড, রিলায়্যান্স জিয়ো ইনফিকোম অথবা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অতীতে কখনও কর্পোরেট বা চুক্তিভিত্তিক কৃষিকাজে হাত দেয়নি। আর এই ব্যবসায় ঢোকার কোনও ইচ্ছেও নেই। পঞ্জাব, হরিয়ানা বা দেশের অন্য কোথাও চাষের জমিও কেনেনি রিলায়্যান্স এবং তাদের ভর্তুকিপ্রাপ্ত কোনও সংস্থা। তেমন কোনও পরিকল্পনাও নেই’। ১৩০ কোটির অন্নদাতা কৃষকদের তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে বলেও জানায় রিলায়্যান্স।
কেন্দ্রের ৩টি বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উপকণ্ঠে গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে যে আন্দোলন চলছে, তাতে মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স এবং আদানি গোষ্ঠীর উপরও রাগ গিয়ে পড়েছে কৃষকদের। তাঁদের অভিযোগ, কৃষিকাজের বাণিজ্যিকীকরণ করে আদতে অম্বানী-আদানিদের সুবিধা করে দিচ্ছে মোদী সরকার, যাতে কম দামে ফসল কিনে মজুত করে বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা যায় এবং পরে সেই ফসলই চড়া দামে বিক্রি করা যায়। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের রক্ষা কবচের জন্য যে কারণে এত কথা বলছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় রিলায়্যান্সের জমি কেনার খবর সেই আগুনে ঘি ঢালে। তার জেরে বিগত কয়েক দিনে দুই রাজ্যে জায়গায় জায়গায় রিল্যায়েন্সের সম্পত্তি তছনছ করার অভিযোগ সামনে এসেছে। শুধুমাত্র পঞ্জাবেই রিলায়্যান্স জিয়ো-র ১৫০০-টির বেশি টেলিকম টাওয়ারে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় রিলায়্যান্সেলের বিভিন্ন দফতরে। কেটে দেওয়া হয় কেবল সংযোগও। এমনকি জেনারেটর চুরির অভিযোগও সামনে আসে। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুকেশ অম্বানী এবং আদানির কুশপুতুলও পোড়ানো হয় একাধিক জায়গায়। এ নিয়ে সোমবার পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রিলায়্যান্স কর্তৃপক্ষ। দুর্বৃত্তদের হাতে এই বেআইনি ভাঙচুর রুখতে অবিলম্বে সরকারের পদক্ষেপ করা উচিত বলে জানায় রিলায়্যান্স।
আরও পড়ুন: অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন প্রত্যাহারের দাবি কৃষকদের, বৈঠকের আগে চাপ কেন্দ্রকে
আরও পড়ুন: খোলা বাজারে বিক্রির জন্য মার্চ মাসে আসতে পারে করোনা টিকা, জানালেন সিরাম সিইও
সংগঠিত খুচরো ব্যবসার বাজারে তাদের ধারেকাছে কেউ নেই বলে সোমবার বিবৃতিতে দাবি করেছে রিলায়্যান্স। তাদের বক্তব্য, ফলমূল, শাকসবজি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, জামা-কাপড়, ওষুধ, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, খাদ্যশস্য, এ সবকিছু বিক্রি করলেও, সরাসরি কৃষকদের থেকে তা কেনে না তারা। বরং এজেন্টরাই তা সরবরাহ করেন। কৃষকরা যাতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পান, সে ব্যাপারে এজেন্টদের কড়া নির্দেশও দেওয়া রয়েছে বলে দাবি ওই সংস্থার।
কিন্তু রিলায়্যান্সের এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কিসান একতা মঞ্চ। তাদের যুক্তি, ‘দালাল’রা যে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিচ্ছেন, সে ব্যাপারে কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছে রিলায়্যান্স? আর সরকারই বা কেন ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবি মেনে নিচ্ছে না? তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে ওই সংগঠন। এই আবহে আজ, সোমবার বিক্ষুব্ধ কৃষকদের সঙ্গে আরও একদফা বৈঠক চলেছে সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy