জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে বাড়ি কেরলে। ছবি: পিটিআই
কেরলের বন্যা পরিস্থিতিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২৯। উদুক্কি, ওয়ানাড়, এর্নাকুলাম-সহ রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ চলেছে রাতভর। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। উদুক্কি, চেরুথানি বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় পেরিয়ার নদীর দুই পারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। দুর্গতদের উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে এনডিআরএফ, সেনা, নৌবাহিনী, পুলিশ ও দমকল। বহু দুর্গতকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। জোর কদমে শুরু হয়েছে ত্রাণ বিলির কাজ। সব মিলিয়ে ৫০ বছরের ভয়াবহতম বন্যা বলে দাবি করেছেন কেরলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কে জে আলফোন্স।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে ফোন করে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীও সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে ঘনঘন বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং তার মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ভয়াবহ পরিস্থিতি। বহু মানুষ বিপর্যস্ত। তাঁদের উদ্ধার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কুন্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। পর্যটন মন্ত্রক জানিয়েছে, বৃষ্টিতে ধস নেমে মুন্নারের প্লাম জু়ডি রিসর্টে আটকে পড়েছিলেন ৬৯ জন পর্যটক। তাঁদের মধ্যে রাশিয়া, সৌদি আরব, ওমান থেকে আসা ২৪ জন বিদেশি পর্যটকও ছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করেছে সেনা। গত কালই পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত ভয়াবহ’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কেরলের এই সঙ্কটে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন ফোনে বিজয়নের সঙ্গে কথা হয়েছে রাজনাথ সিংহের। ১২ অগস্ট বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাওয়ার কথাও টুইটারে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ দিকে, গত দু’দিনে অন্তত ৫০ হাজার মানুষকে ১৫৭টি ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে।
টানা ছ’দিন ধরে নাগাড়ে ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি। তার জেরে এমনিতেই নদীগুলির উপচে পড়ার মতো পরিস্থিতি। তার সঙ্গে অধিকাংশ বাঁধগুলি টইটম্বুর হয়ে ওঠায় জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। অধিকাংশ বাঁধ থেকে বিপুল জল ছাড়া হচ্ছে। এই সাঁড়াশি চাপে কেরলের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত জলের তলায়। বহু বাড়িঘর ডুবে গিয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে কয়েক হাজার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা।
পাঁচ দশকের ভয়াবহতম
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কেরলের কে জে আলফোন্স বলেন, গত ৫০ বছরে এত পরিমাণ বৃষ্টি দেখেনি কেরল। পাঁচ দশকে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
হেলিকপ্টার থেকে তোলা। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে
বিপর্যয়ের খতিয়ান
কেরলের বিপর্যয় মোকাবিলা ও তদারকি করতে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা, ও ধস সংক্রান্ত বিপর্যয়েই এই মৃত্যু। এর মধ্যে উদুক্কি ও মালাপ্পুরম জেলাতেই মৃতের সংখ্যা ১৭। বহু এলাকা থেকে অনেকের নিখোঁজের খবর মিলেছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বহু এলাকায় ব্রিজ ও রাস্তা ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে।
আটকে পর্যটকরা
ইদুক্কির একটি রিসর্টে আটকে পড়েছে পর্যটকদের একটি দল। আটকে পড়া মোট ৬৯ জন পর্যটকের মধ্যে ২০ জন বিদেশিও রয়েছেন। জানা গিয়েছে, রিসর্টে যাওয়ার রাস্তায় ধস নেমে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ওই রাস্তা প্রাখমিক ভাবে সারিয়ে পর্যটকদের উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তলব করা হয়েছে সেনা জওয়ানদের।
উদ্ধার ও ত্রাণ
দুর্গতদের উদ্ধারে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এছাড়া ধস ও অন্যান্য বিপর্যয় মোকাবিলায় সেনা জওয়ানরা কাজ করছেন। অধিকাংশ বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় নদীগুলি উপচে প্লাবিত হচ্ছে উপকূল এলাকা। সেই পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রেখেছে নৌসেনা। স্পিডবোটে টহল দিচ্ছেন তাঁরা। ছোট বিমান, হেলিকপ্টার ও অন্যান্য সরঞ্জাম-সহ তৈরি থাকতে বলা হয়েছে বায়ুসেনাকে। যে কোনও সময় উদ্ধারকাজে নামতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। সব হাসপাতালের চিকিৎসকদের সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ শিবিরগুলিতে গণ আহারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে বৃহস্পতিবারই ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গোটা পরিস্থিতি জানার পর রাজ্যের পাশে থেকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কেরল বিজেপির তরফে দলের কর্মীদের ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে আলাপ্পুঝায় শনিবারের নির্ধারিত নেহরু জাতীয় বোট রেস।
উপচে পড়ছে বাঁধ
উদুক্কি বাঁধের জল ধারণ ক্ষমতা ২৪০০ ফিট। সেই সীমার কাছাকাছি চলে আসায় বৃহস্পতিবারই ২৬ বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছিল একটি গেট। শুক্রবার সকালে চরম বিপদসীমার উপরে উঠে আসে জলস্তর। ফলে তিনটি গেট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বৃষ্টি না থামায় বেলার দিকে জলাধারের পাঁচটি গেটই খুলে দেওয়া হয়। যা গত ৪০ বছরে হয়নি। ফলে নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিনে সব মিলিয়ে ২৬টি বাঁধ থেকে জল ছাড়া চলছে। তার জেরে নদীগুলিতে জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পেরিয়ার নদীর অবস্থা সবচেয়ে বিপদ সংকুল। এছাড়া ইরুভানি, ইঙ্গাপুঝা, চেরুপুঝা, মারিপুঝা, মাথাপ্পনপুঝা, চেলিয়ার-সহ অধিকাংশ নদীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে।
নাগাড়ে বৃষ্টি
গত ছ’দিন ধরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উদুক্কিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২৯ মিলিমিটার। চেরুথানি সহ অন্যান্য বাঁধেও বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy