ছেলের সঙ্গে গুরু বালদাস (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
দিল্লির কুতুব মিনারের থেকেও উঁচু!
‘‘ঠিক তাই। কুতুব মিনারের থেকেও উঁচু। এই বিলাসপুর থেকেই ৮০ কিলোমিটার দূরে, আমাদের গিরোধপুরী ধামের ‘জৈতখাম’। সাদা ওই স্তম্ভ দেখলে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে,’’ খুব উৎসাহে বোঝাচ্ছিলেন হোটেলের ওয়েটার উপ্পল। বুক ফুলিয়ে বললেন, “অমিত শাহও গিয়েছিলেন!”
বিজেপি সভাপতিকে যেতেই হয়েছিল। তিনি জানতেন, ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে উপ্পলদের মতো দলিত সতনামী সমাজের ভোট পেতে হলে তাঁকে গিরোধপুরীতে গিয়ে মাথা ঝোঁকাতেই হবে। কারণ, সেখানেই ছত্তীসগঢ়ের সতনামী সমাজের প্রতিষ্ঠাতা গুরু ঘাসীদাসের জন্মস্থান। যা দলিত বা তফসিলি জাতিভুক্ত সতনামী সমাজের প্রধান তীর্থক্ষেত্র। লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তার মধ্যে ছত্তীসগঢ়ে জিততে হলে দলিত ভোট বিজেপিকে পেতেই হবে।
অমিত শাহের ইচ্ছা অবশ্য পূরণ হয়নি। ছত্তীসগঢ় বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে সতনামী সমাজের গুরু বালদাস কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। যিনি এত দিন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। তাতেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজেপি নেতাদের কপালে। কারণ, ছত্তীসগঢ়ে ভোটের অঙ্কে জাতপাতের সমীকরণটাই এতে পাল্টে গিয়েছে।
কী ভাবে?
এক সময় সামাজিক ভাবে অস্পৃশ্য দলিতদের নিয়েই সতনামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গুরু ঘাসীদাস। সেই সতনামী সমাজের হাতে এখন রাজ্যের ১৬ শতাংশ ভোট। ৯০ আসনের বিধানসভার ১৪টি আসনে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোট সতনামী সমাজের। তারাই নির্ণায়ক শক্তি। ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে রমন সিংহ ক্ষমতায় এলেও কংগ্রেসের থেকে মাত্র ১০টি আসন বেশি পেয়েছিল বিজেপি। এ বার সতনামী সমাজের ভোট কংগ্রেস পেলে সেই ফারাক মুছে যেতে সময় লাগবে না।
আরও পড়ুন: রাতারাতি ভোটবৃদ্ধি! প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস
সতনামী সমাজের ভোটের দাবিদার অবশ্য একা অমিত শাহ ছিলেন না। কংগ্রেস ভেঙে নতুন দল, ছত্তীসগঢ় জনতা কংগ্রেস তৈরির পরে অজিত জোগী এ বার দলিত নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। তাঁরও লক্ষ্য একটাই। সতনামী সমাজের ভোট ঝুলিতে ভরে ফের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসা। নিজেকে জোগী এই সতনামী সমাজের মুখিয়া বলে দাবি করেন।
কিন্তু অজিত জোগী বা অমিত শাহের বিজেপি, দু’পক্ষকে নিয়েই ক্ষুব্ধ গুরু বালদাস। তাঁর অভিযোগ, “সামাজিক ভেদাভেদের বিরুদ্ধেই সতনামী সমাজ তৈরি হয়েছিল। বিজেপি সমাজে সেই ভেদাভেদ তৈরির কাজই করে চলেছে।” নিজেকে সতনামী সমাজের মুখিয়া বলা অজিত জোগীকে নিয়ে বিরক্ত গুরু বালদাসের মন্তব্য, “আমাদের সমাজে গুরুই প্রধান। অজিত জোগী বা অন্য কেউ গুরুকে টপকে নিজেকে মুখিয়া বললে ভুল করছেন।”
এমনিতেই আদিবাসী বা তফসিলি জনজাতির ভোট মিলবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বেশির ভাগ আদিবাসী আসন এখন কংগ্রেসের দখলে। গোটা দেশেই দলিত-আদিবাসী সমাজের নানাবিধ নালিশ রয়েছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। রমন-রাজ্যে দলিত বা তফসিলি জাতির ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে গেলে, তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে ফেরা কঠিন হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে বধূ আজ গ্রামপ্রধান
পাঁচ বছর আগে অবশ্য ছবিটা অন্য ছিল। সতনামী সমাজ বরাবরই কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক। গত বার তাদের গুরু বালদাস নিজেই সতনামী সেনা নামে রাজনৈতিক দল গড়ে প্রার্থী দাঁড় দিয়েছিলেন। নিজেরা কোনও আসনে জয় না পেলেও ভোট কেটেছিলেন কংগ্রেসের। সেই সুবাদেই দলিতদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি আসনের মধ্যে ৯টিই দখল করে বিজেপি। আরও অন্তত এক ডজন আসনে কংগ্রেসের ভোট কেটেছিলেন গুরু বালদাস। ওই ভোটে হেলিকপ্টারে চেপে গুরু বালদাসের প্রচার দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল, কে মদত দিচ্ছে তাঁকে? বিজেপি? নাকি কংগ্রেসের প্রার্থীদের হারাতে এটা অজিত জোগীর খেলা?
গুরু বালদাস এ বার তাদের বিরুদ্ধে, কংগ্রেসের হয়ে মাঠে। ধর্মগুরুকে রাজনীতিতে দেখে সতনামী সমাজের অনেকের ভাল লাগছে না। কিন্তু বিলাসপুরের উপ্পলের কাছে গুরুবাক্যই শেষ কথা। অমিত শাহ, রমন সিংহের সেটাই বড় চিন্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy