চার মিনিটেই শুনানি শেষ! লোকসভা ভোটের আগে অযোধ্যায় রাম মন্দির নিয়ে কোনও রায়ের সম্ভাবনায় কার্যত জল ঢেলে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়ে দিলেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঠিক হবে, কবে থেকে সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার শুনানি শুরু হবে।
কয়েক দিন ধরেই রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পক্ষে সওয়াল করে আবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মোহন ভাগবত, যোগী আদিত্যনাথেরা। কিন্তু প্রধান বিচারপতি আজ বুঝিয়ে দিলেন, রাম মন্দির ঘিরে আবেগ নিয়ে বিজেপি রাজনীতির অঙ্ক কষতেই পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট চলবে নিজস্ব অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। দীপাবলি ও বড়দিনের ছুটির ফাঁকে কাজের দিন মাত্র ২৭টি। তার মধ্যে অন্যান্য মামলাও দেখতে হবে আদালতকে।
প্রধান বিচারপতি গগৈ, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল ও বিচারপতি কে এম জোসেফের বেঞ্চের দিকে আজ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল দেশের সব রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে গেরুয়া শিবির। প্রশ্ন ছিল, কবে থেকে শুনানি শুরু হবে? দৈনিক শুনানি হবে কি? নতুন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেই কি শুনানি হবে? নাকি অন্য কোনও বেঞ্চ গঠন হবে? সব জল্পনার অবসান ঘটাতে এ দিন এক মিনিটও সময় নেননি প্রধান বিচারপতি। এজলাসে ভিড় করা আইনজীবী, সাধু-মহন্তরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘোষণা করেন, ‘‘শুনানির দিন ঠিক করার জন্য জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যথোচিত বেঞ্চে মামলাটি তালিকাভুক্ত হবে।’’
উত্তরপ্রদেশ সরকারের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা আর্জি জানান, অযোধ্যার বিতর্কিত জমি ঘিরে এই মামলা ১০০ বছরের পুরনো। একে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্তত নভেম্বরে আদালতের তালিকায় মামলাটি রাখা হোক। কিন্তু তা উড়িয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব অগ্রাধিকার রয়েছে। জানুয়ারিতে শুনানির দিন ঠিক হবে। শুনানি জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি বা মার্চেও হতে পারে। যথোচিত বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত নেবে। যে বেঞ্চে শুনানি হবে, তা-ও গঠন হবে।’’
স্বাভাবিক ভাবেই শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত গেরুয়া শিবিরের মনঃপূত হয়নি। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ মন্তব্য করেন, ‘‘অসংখ্য মানুষ এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চান। আমরা সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আর কিছু বলার নেই।’’ উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ায় ভাল বার্তা যাবে না।’’ বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ারের অভিযোগ, এর পিছনে ‘কংগ্রেসের চাপ’ রয়েছে। এতে মুচকি হেসে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে মামলা রয়েছে। রায়ের জন্যই সকলের অপেক্ষা করা উচিত। এটাই কংগ্রেসের অবস্থান। পাঁচ বছর অন্তর, ভোট এলেই অযোধ্যা প্রশ্নে মেরুকরণের চেষ্টা করে বিজেপি।’’
এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে অযোধ্যার বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করে দু’ভাগ হিন্দু শিবির ও এক ভাগ মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দিতে বলেছিল। তা না মেনে দু’পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে আসে। দীপক মিশ্র প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরের আগে রায় দিয়ে যান, মসজিদ ইসলামের অভিন্ন অঙ্গ কি না, তা নিয়ে আর সাংবিধানিক বেঞ্চ মাথা ঘামাবে না। অযোধ্যার মামলাকে নিছক জমি বিবাদ হিসেবে দেখা হবে।
ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে আছে এমন যে কোনও মামলাই এ দেশে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। শবরীমালা নিয়ে সম্প্রতি রায় হলেও তার বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। রায় পরের কথা, অযোধ্যা মামলা নিয়ে দ্রুত শুনানি হলেও ২০১৯-এর ভোটের আগে মেরুকরণের লক্ষ্যে মন্দির হাওয়া গরম করতে সুবিধা হত বিজেপির। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বার্তাটি স্পষ্ট, অযোধ্যা মামলাকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। এ নিয়ে তাড়াহুড়ো করতেও রাজি নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy