চোখা চোখা বাক্যবাণ বুনে চলার ফাঁকে গল্পও জুড়লেন রাহুল। ছবি: রয়টার্স।
পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল তখন সবে স্পষ্ট হচ্ছে। বিজেপি হারছে সব রাজ্যেই। দশ জনপথে রাহুল গাঁধীর দিকে তাকিয়ে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন সনিয়া গাঁধী। দলের নেতাদের বললেন, ‘‘এটি রাহুলের মেহনতের ফসল।’’ রাহুল সংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন রাতে। বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদীর, ‘‘২০১৯-এ আর ফিরছেন না মোদী।’’ বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছেই শিখেছি, কী করা উচিত নয়।’’ ২০১৯-এর লড়াইয়ের জন্য দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ‘বব্বর শের (সিংহ) বললেন তাঁদের।
মধ্যপ্রদেশের কাঁটা দূর না হওয়ায় রাহুল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অনেক রাতে। পরের পর বাক্যবাণে বিঁধে থাকেন মোদীকে:
এক, ভারতের হৃৎস্পন্দন শুনতে অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’’ দুই, ‘‘দুর্নীতির মতো বিষয়কে সামনে রেখে ক্ষমতায় এসেছেন মোদী। মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। তাঁরা বুঝে ফেলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত।’’ তিন, ‘‘২০১৪-তে মানুষ বিশাল সুযোগ দিয়েছিলেন মোদীকে। যুবক, কৃষক, দেশের কথা শুনলেনই না।’’ চার, ‘‘ঔদ্ধত্য এসে গিয়েছে। আমি তাঁর থেকেই শিখেছি, মানুষের কথা শুনে কাজ করতে। বিনয়ী হতে।’’ পাঁচ, ‘‘একুশ শতকের ‘দিশা’ দেখাতে পারবেন না মোদী। আমরা কোনও আক্রমণ না-করেই তা দেব।’’
চোখা চোখা বাক্যবাণ বুনে চলার ফাঁকে গল্পও জুড়লেন রাহুল। বললেন, ‘‘মাকে বলছিলাম, ২০১৪ সালের ভোট আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীও শিখিয়েছেন, কী করতে নেই। প্রধানমন্ত্রী পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। বিরোধীদের জবাব দেবেন কী, সেই চাপই তো নিতে পারছেন না। জবাবও দিতে পারছেন না। তাঁর জন্য সত্যিই খারাপ লাগে।’’ রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশে দু’জন করে, ছত্তীসগঢ়ে অন্তত তিন জন মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। কী ভাবে সামলাবেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী রাহুল বলেন, ‘‘এটা বড় বিষয় নয়। মসৃণ ভাবে মিটে যাবে।’’
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের ‘ফাইনালে’ মোদীর সঙ্গে টক্করে তৈরি রাহুল
রাহুলের সাংবাদিক বৈঠকের শেষে দলের নেতারা বলছেন, ‘‘আজ বিজেপির ফল ভাল হলে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের দাপাদাপি, ঔদ্ধত্য দেখতেন! রাহুল গাঁধী জয়ের পরেও বিনয়ী।’’ এ কথা বলার কারণ, রাহুল এ দিন শুরুতেই বলেছেন, ‘‘মিজোরাম, তেলঙ্গানায় জিততে পারিনি। আফশোস আছে। কিন্তু বাকি তিন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীরা জনতার জন্য যা কাজ করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। সময় বদলের, সেই কাজকেই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’’ বিজেপির কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার ডাক প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আজ ওদের হারিয়েছি। ২০১৯ সালেও হারাব। কিন্তু কাউকে দেশ থেকে মুছে ফেলা আমাদের লক্ষ্য নয়।’’ জয়ের পরেও রাহুলের ইতিবাচক, বিনয়ী মনোভাব প্রসঙ্গে কংগ্রেসের নেতারা মোহনদাস গাঁধীর একটি মন্তব্যের কথা তুলছেন। তা হল, ‘‘প্রথমে তোমাকে উপেক্ষা করবে, হাসাহাসি করবে, তার পর তোমার সঙ্গে লড়বে। শেষে জিতবে তুমিই।’’ ভোটে বিপর্যয়ের পরে মোদী-অমিত, কেউই আজ প্রকাশ্যে আসেননি। মুখোমুখি হননি সাংবাদিক বা দলের নেতা-কর্মীদের। নমো-নমো করে টুইট করেই দায় সেরেছেন রাতে।
সদ্য গত কালই ২১টি দল মোদীকে হারানোর পণ করেছে। সেই জোট অটুট রেখেই একসঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। ভোটের ফল জানার পরে উত্তরের অরবিন্দ কেজরীওয়াল থেকে দক্ষিণের এম কে স্ট্যালিনের মতো বহু নেতাই অভিনন্দন জানিয়েছেন রাহুলকে। মোদীকে বেঁধার এমন সুযোগ ছাড়েননি শিবসেনা প্রধান রাজ ঠাকরে। রাহুলকে নিয়ে টুইট করেছেন তিনিও। বেকারি ও কৃষক অসন্তোষ দূর করাকে কেন্দ্রে রেখে বিরোধীদের অভিন্ন রোডম্যাপও বলেছেন রাহুল।
তুলেছেন রাফাল প্রসঙ্গও। সাংবাদিক বৈঠক শেষ করেছেন দলের কর্মীদের একরাশ অভিনন্দন জানিয়ে। কঠিন পরিস্থিতিতেও ‘বব্বর শের’-এর মতো লড়ে বিজেপিকে হারানোর জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy