রাতারাতি বদলে গেল দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র। হিন্দি বলয়ের একটা বড় অংশের গেরুয়া রঙ মুছে হয়ে গেল সবুজ। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট এনডিএ বিরোধীদের এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এল যে, মোদী-শাহর বিজয়রথের ঘোড়া থামানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, এখনকার পরিস্থিতিতে এবং এই সমীকরণে ভোট হলে দিল্লির মসনদ থেকে যে পদ্ম উপড়ে ফেলা যাবে, তা নিয়েও আত্মবিশ্বাসী বিরোধী শিবির।
দিল্লির রাজনীতিতে বরাবরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয় মধ্য ভারত তথা হিন্দি বলয়। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু কাশ্মীর গুজরাত এবং দিল্লিই মূলত নিয়ন্ত্রণ করে রাজধানীর মসনদ। লোকসভার নির্বাচিত আসন সংখ্যা ৫৪৩। আর তার অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগারের চেয়েও বেশি ২৭৩টি আসনই রয়েছে এই গো বলয়ে। এখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র হাতে রয়েছে ২২৬ আসন। এই বিস্তীর্ণ এলাকা হাতে থাকলেই দিল্লির মসনদ যে পাক্কা, সেটা নিশ্চিত।
আর সেই বলয়েই থাবা বসিয়েছে কংগ্রেস তথা বিরোধীরা। গোরখপুর-ফুলপুরের উপনির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের দুই মেরুতে থাকা দুই দল যে জোট করে বিজেপিকে হারিয়েছিল, কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে তারা আবারও ইঙ্গিত দিল, লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-এসপি-বিএসপি মহাজোটের। এর সঙ্গে তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলের সমীকরণে লোকসভা ভোট হলে বিজেপি ৮০ থেকে ১০০টির বেশি আসন খোয়াতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
আরও পড়ুন: গহলৌত না পাইলট? মুখ্যমন্ত্রীর ‘তাজ’ কার মাথায় উঠবে, জোর জল্পনা রাজস্থানে
লোকসভায় বর্তমানে বিরোধী শিবিরের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে আগের বার মাত্র দু’টি আসন ছিল বিজেপির। সেখান থেকে বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে, মুখে বললেও বিজেপির অন্দরে তেমন আশা আগেও দেখেননি কট্টর কোনও বিজেপি সমর্থক। আর এখন পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ধাক্কায় এ রাজ্যেও দলের কর্মীরা কিছুটা হতোদ্যম হবেন, এটা বলাই যায়।
দাক্ষিণাত্যে এবারও পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ গেরুয়া ব্রিগেড। মোদী-অমিতের দাক্ষিণাত্য বিজয়ের স্বপ্নে কর্নাটকে কিছুটা আশার আলো দেখলেও রাহুল-কুমারস্বামী জোটের কাছে মুখ পুড়েছিল। এবার তেলঙ্গানায় কেসিআর ঝড়ে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ বিজেপি। ঝুলিতে মাত্র একটি আসন। অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেস টিডিপি জোট, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-এআইএডিএমকে, বা কেরলে বামেদের ঘাঁটি। আগামী লোকসভা ভোটেও সেখানে ভাল ফল করবে দল, এমন দূরাশা বিজেপির অন্ধ সমর্থকও বোধহয় করেন না।
আরও পড়ুন: গো হারা হারলেন রাজস্থানের সেই ‘গো-পালন মন্ত্রী’
তাহলে হাতে রইল শুধু উত্তর-পূর্ব ভারত। অসম থেকে সিকিম, মণিপুর কিংবা ত্রিপুরায় বিজেপির সরকার ছিলই। কংগ্রেসের হাতে থাকা মিজোরামও ছিনিয়ে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। বলার মতো এখন হাতে শুধু এইটুকুই। কিন্তু দিল্লির রাজনীতিতে উত্তর পূর্বের উপস্থিতি বিরাট কিছু নয়। শুধুমাত্র উত্তর পূর্বে ভর করে যে দিল্লির তখত ধরে রাখা অসম্ভব, মোদি-অমিত শাহ জুটি তাও ভাল করেই জানেন।
সব মিলিয়ে মোদী-অমিত শাহ জুটির অশ্বেমেধের ঘোড়া সেমিফাইনালের আগে পর্যন্ত যে গতিতে ছুটছিল, এবং যেভাবে থমকে গেল, তাতে লোকসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়াও যে অসম্ভব নয়, সেই দেওয়াল লিখন এখনই কার্যত পড়ে ফেলতে পারছেন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎদ্রষ্টাদের অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy