Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Assembly Elections 2018

দু’দলেরই ঢাল বাজপেয়ী, নিজের কেন্দ্রে কঠিন লড়াই রমনের

করুণা শুক্ল। রাজনন্দগাঁও বিধানসভা কেন্দ্রে যাঁকে প্রার্থী করে একেবারে চমক দিয়েছে কংগ্রেস! চমকে যাওয়ার মতো কারণ আছে বইকি। এই করুণা শুক্ল সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি।

রমন সিংহ ও করুণা শুক্ল: এ বার জোর টক্কর।

রমন সিংহ ও করুণা শুক্ল: এ বার জোর টক্কর।

তাপস সিংহ
রাজনন্দগাঁও (ছত্তীসগঢ়) শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:০১
Share: Save:

ওই তো, এসে পড়েছেন!

সামান্য কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পরেই ভিড়ে ঠাসা জয়স্তম্ভ চক বাজারে এসে দাঁড়াল এসইউভি-টা। গাড়ি থেকে নেমে এলেন তিনি। এক মাথা সাদা চুল। পরনে শাড়ি। কোনও নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে নেই। আছেন শুধু কয়েক জন দলীয় কর্মী। ভিড়ের মধ্যেই জায়গা করতে করতে এগোলেন রাজনন্দগাঁও শহরে দলীয় কার্যালয়ের দিকে।

করুণা শুক্ল। রাজনন্দগাঁও বিধানসভা কেন্দ্রে যাঁকে প্রার্থী করে একেবারে চমক দিয়েছে কংগ্রেস! চমকে যাওয়ার মতো কারণ আছে বইকি। এই করুণা শুক্ল সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি। দীর্ঘ ৩৪ বছর বিজেপির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকার পরে হালে যিনি দলের সঙ্গ ছেড়েছেন। শুধু দল ছাড়লেও না হয় কথা ছিল, বিজেপির রক্তচাপ বাড়িয়ে একেবারে আদাজল খেয়ে আগের দলের বিরুদ্ধেই ময়দানে নেমে পড়েছেন করুণা। দাঁড়িয়েছেন একেবারে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের বিরুদ্ধেই। রমন যদিও করুণাকে সম্বোধন করছেন ‘বহেনজি’ বা বোন বলেই। যা শুনে করুণার মন্তব্য: ‘‘যখন দল ছেড়ে চার মাস বাড়িতে বসেছিলাম, এক বারও ফোন করেননি। এক বার জিজ্ঞাসাও করেননি, কী কারণে দল ছাড়ছি? আর আজ ভোটের ময়দানে বোন হয়ে গেলাম! এ রকম ভাইয়ের কোনও প্রয়োজন নেই আমার!’’

প্রচারেও বলছেন, অটলবিহারীর সঙ্গে তাঁরই দল কী ধরনের অসম্মান করেছে। এখন অটলের প্রয়াণের পর তাঁরই নাম ভাঙিয়ে কী ভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছে বিজেপি, সে কথাও জানাতে ভুলছেন না করুণা।

২০০৮ এবং ২০১৩-য় এই রাজনন্দগাঁও থেকেই বিধায়ক হয়েছিলেন রমন। এ বারেও দাঁড়িয়েছেন নিশ্চিন্ত আসনে। কিন্তু কতটা নিশ্চিন্ত? আনন্দবাজার ডিজিটালকে করুণা শুক্ল বলছেন, ‘‘এ বার দেখুন না কী হয়? আমি ওঁকে নিশ্চিন্ত থাকতে দেব না। জয় হবে আমারই। মানুষ এ বার খেপে আছেন।’’

আরও পড়ুন: রাজনীতি আর বুলেট, দুই লড়াই দেখার প্রতীক্ষায় সুকমা

খুব যে ভুল বলছেন করুণা, তা অবশ্য নয়। রাজনন্দগাঁও ঘুরলে সে ক্ষোভের আঁচ কিছুটা হলেও টের পাওয়া যায়। সব থেকে বড় আঁচ প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার। দীর্ঘ কাল ক্ষমতায় থাকলে যে কোনও নেতা বা দলের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ ওঠে। রাজনন্দগাঁও-ও তার ব্যতিক্রম নয়। মদের লাইসেন্স নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ, বেকারি নিয়ে অভিযোগ তো বিস্তর। সর্বত্রই ক্ষোভ: চাকরির বাজার অত্যন্ত খারাপ। শিল্পায়নের জোয়ারের যে ঢক্কানিনাদ বাইরে থেকে শোনা যায়, তা একেবারেই সত্য নয়। এলাকার প্রচুর ছেলেমেয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে, আর যারা তা পারছে না, তাদের দৌড় রায়পুরের বিভিন্ন শপিং মলে সেলসপার্সন বা কাউন্টারে চাকরি পর্যন্ত।

রাজনন্দগাঁও বিধানসভা কেন্দ্রে অটলবিহারী বাজপেয়ী-ই এখন ঢাল কংগ্রেস-বিজেপির। —ফাইল চিত্র।

সম্পূর্ণ অন্য ধরনের এক অভিযোগও কানে আসে। তা হল ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প নিয়ে।দারিদ্রসীমার নীচের মানুষের হাতে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের যে কার্ড আছে তাতে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ মেলে। আর দারিদ্রসীমার উপরের মানুষজনের জন্য রয়েছে স্মার্ট কার্ড। এতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা করানো যায়। গোড়ার দিকে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সরকারের চুক্তিও হয়েছিল। লোকজন এই প্রকল্পের কার্ড দেখিয়ে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি চলে যেতেন। প্রথম দিকে কিছু দিন ঠিকঠাক চললেও গন্ডগোল বাধে পরে। সরকারি হাসপাতালগুলির অভিযোগ, তারা দিনের পর দিন সরকারের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছে না। মাঝখান থেকে ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। সরকারি হাসপাতালের যা হাল, চট করে কেউ সেখানে যেতে চান না। কার্ড নিয়ে তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু পত্রপাঠ তাঁদের ফেরত পাঠাচ্ছে হাসপাতালগুলি। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে, এখানে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে চিকিৎসা করা হয় না।

আরও পড়ুন: ছত্তীসগ়ঢ়ে ক্ষমতায় এলে ১০ দিনের মধ্যেই ঋণ মকুব, আশ্বাস রাহুলের

পরিবেশ-বান্ধব ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্প নিয়েও বিস্তর গোলযোগ শোনা যাচ্ছে। সরকার দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দিচ্ছে। কিন্তু ফাঁকা সিলিন্ডার ভরার ব্যবস্থা কে করবে? গ্যাস ডিলারদের কাছে সিলিন্ডার নিয়ে গেলে তাঁরা বলছেন, গ্যাস ভরানোর টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই দিতে হবে। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের যদি এই হাল হয় তা হলে ঘটা করে সিলিন্ডার দেওয়ার কী দরকার ছিল?

এই কেন্দ্রে এ বার রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী। মোট ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে আম আদমি পার্টির(আপ) প্রার্থীও আছেন। আপ-এর জেলা নেতা সন্দীপ রাও বললেন, ‘‘স্বচ্ছ প্রশাসন উপহার দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার দেখে দেখে মানুষ বিরক্ত।মানুষ এ বার বদল চাইছেন। তা ছাড়া অজিত যোগীর ছত্তীসগঢ় জনতা কংগ্রেস এ বার কংগ্রেসের ভোট কাটবে। তাতে আমাদেরই সুবিধা’’

কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন করুণা শুক্ল। — ফাইল চিত্র।

ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগী এ বার তাঁর নতুন দল করেছেন। সেই দল যে কার্যত বিজেপিরই সুবিধা করবে, সে ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল। কারণ, যোগীর নিজস্ব একটি ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। তিনি সুদীর্ঘ কাল কংগ্রেস রাজনীতি করেছেন। কংগ্রেসের ভোট কাটার ব্যাপারে বিজেপি শিবিরও বেশ নিশ্চিন্ত। রাজনন্দগাঁওয়ের জি ই রোডে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের ক্যাম্প অফিসের ঠিক উল্টো দিকে বিজেপি দফতরে বসে জেলা নেতা সাওন বর্মা বললেন, ‘‘রাজনন্দগাঁওয়ের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে চান। নিছক এক জন বিধায়ককে চান না। করুণা শুক্ল এক জন বিধায়ক হিসেবে এই কেন্দ্রের মানুষকে কী দিতে পারবেন? বরং, রমন সিংহ অনেক বেশি উন্নয়নের কাজ করতে পারবেন।’’ গলাটা একটু নামিয়ে সাওন বলেন, ‘‘তা ছাড়া কি জানেন, করুণাজি এখানে বহিরাগত। কে ওঁকে চেনে? কেউ না। তাই সব জায়গায় গিয়ে বলতে হয়, আমি বাজপেয়ীর ভাইঝি। এ ছাড়া তাঁর বলার কী-ই বা আছে? কংগ্রেসের কি কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য আছে?’’

মুখ্যমন্ত্রী ২০১৩-র নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ৮৬৬ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। বিজেপি চাইছে, এ বার যেন সেই ব্যবধান আরও বাড়ে। তা হলে প্রমাণ করা যাবে যে, অটলবিহারীর নামে ভোট চাওয়ার অধিকারী একমাত্র তারাই। নিজের কেন্দ্রে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে বিপাকে পড়তে হোক, সঙ্গত কারণেই শাসক দল তা চাইবে না।

কিন্তু, যে বাজপেয়ীকে সামনে রেখে এ বার এগোতে চাইছে বিজেপি, এই রাজনন্দগাঁও কেন্দ্রে দেখছিসেই বাজপেয়ী-ই বিজেপির পক্ষে কেমন যেন অস্বস্তিকর হয়ে উঠছেন!

(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদেরদেশবিভাগে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE