অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানা।
যুদ্ধ চলছিল এক বছর ধরে। চুপ করে বসেছিল সরকার। মঙ্গলবার মাঝরাতে আচমকা জেগে উঠে যুযুধান দুই সেনাপতিকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিল তারা। বদলি হলেন ১৩ জন সেনা। তাঁদের মধ্যে এক জনকে পাঠানো হল দ্বীপান্তরে!
দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের অন্তর্কলহ থামাতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের এহেন নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, সংস্থার অধিকর্তা অলোক বর্মাকে বাধ্যতামূলক ভাবে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত কি না। মোদী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ এবং তোলা আদায়ের অভিযোগের তদন্ত করার জন্যই তাঁকে সরানো হল বলে অভিযোগও উঠেছে। তার সঙ্গে জুড়েছে রাফাল-দুর্নীতি নিয়ে নাড়াচাড়ার জল্পনা।
বর্মার সঙ্গে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে আস্থানাকেও। বর্মার অবসর নেওয়ার কথা জানুয়ারি মাসে। মাঝের সময়টুকুর জন্য ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করবেন সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা এম নাগেশ্বর রাও। গত কাল মাঝ রাতেই সিবিআই দফতরে এসে দায়িত্ব নিয়েছেন ১৯৮৬ ওড়িশা ক্যাডারের আইএএস নাগেশ্বর। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে আজই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বর্মা। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
এখন: মঙ্গলবার রাতে জারি পালাবদলের সেই নির্দেশ
এক বছর চুপ থাকার পরে আচমকা কেন এমন সিদ্ধান্ত, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে। বর্মার ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, গত কাল আস্থানার বাড়ি গিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই অফিসারেরা। আজ তাঁকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা ছিল বর্মার। সেই আঁচ পেয়েই নড়েচড়ে বসে সরকার। মাঝ রাতে বৈঠকে বসে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি)। তাদের দিয়ে সুপারিশ জারি করে ছুটিতে পাঠানো হয় বর্মা এবং আস্থানাকে। বদলি করা হয় ১৩ জন অফিসারকেও। যাঁরা বর্মার ঘনিষ্ঠ এবং রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ ও তোলা আদায়ের অভিযোগের তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। বাকিদের নাগপুর, জব্বলপুর পাঠানো হলেও, আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার এ কে বাস্সিকে পাঠানো হয়েছে সূদূর আন্দামানে। সিবিআই আজ সন্ধ্যায় জানায়, আস্থানার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
তখন: সিবিআই নিয়ে ৪ বছর আগে মোদীর আক্রমণ
সরকারের হয়ে সওয়াল করতে নেমে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সংবাদমাধ্যমই বলছে দু’জনের মধ্যে এক বছর ধরে ঝামেলা চলছে। এত দিন পরে সরকার পদক্ষেপ করল! দেরি করে করলেও অভিযোগ। দ্রুত করলেও অভিযোগ।’’
বদলির নির্দেশিকায় কেন্দ্র বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জনগণের স্বার্থে। এর ব্যাখ্যা কী জানতে চাইলে মুখে কুলুপ সিবিআই কর্তাদের। সংস্থার এক কর্তার মতে, ‘‘এ হল নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত।’’ আসলে দুই কর্তার বিবাদ গত কাল পৌঁছয় আদালতে। তার পরেই সক্রিয় হয় কেন্দ্র। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, সিভিসি-কে সামনে রেখে আসলে চলতি সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কারণ একমাত্র দুর্নীতি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের উপরে শেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে সিভিসি-র। আজ নিজেদের বিবৃতিতে সিভিসি জানিয়েছে, দুই কর্তার লড়াইয়ের ফলে সিবিআইয়ের কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল।
সিভিসি-র পর্যবেক্ষণকে হাতিয়ার করে তাঁর শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। সিলমোহর পড়ে বর্মা বিদায়ের সিদ্ধান্তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy