লোকসভায় গৃহীত হল অনাস্থা প্রস্তাব। —ফাইল চিত্র
দেড় দশক পর ফের সংসদে গৃহীত হল সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব। সংসদে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনই টিডিপির অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। শুক্রবার এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা ও ভোটাভুটি হবে বলে নোটিস দিয়েছেন তিনি। যদিও তাতে সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বিজেপির হাতে পর্যাপ্ত সাংসদ সংখ্যা রয়েছে। তবু ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী ও শাসক দল উভয়েরই শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই অনাস্থা প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বুধবারই শুরু হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। এদিন একাধিক বিরোধী দল অনাস্থা প্রস্তাব আনে। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন জানান, এনসিপি, টিডিপি, কংগ্রেস-সহ অনেক দলই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। তবে লটারিতে টিডিপি সাংসদ কাশিনেনি শ্রীনিবাসনের নাম উঠেছে। তাঁর আনা প্রস্তাবের উপরেই আলোচনা হবে।
অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হলে নূন্যতম ৫০ জন সাংসদের সম্মতি লাগে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আস্থা নেই। কিন্তু এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই দেশবাসীর পূর্ণ আস্থা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপর।’’
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোট হতে পারে মার্চে, সঙ্গে কি ৮ বিধানসভাও
এর আগে শেষবার লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০০৩ সালে। সামনেই ছিল রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লির ভোট। তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী সোনিয়া গাঁধী অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব আনেন। কিন্তু সেই সময় অনাস্থা ভোটে সরকার পড়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ভোটাভুটিতে সরকার পক্ষের জয় হয়।
আরও পড়ুন: কাকতাড়ুয়া মোদি-অমিত শাহ! ভোট মিটতেই চাষের জমিতে কাটআউট
২০০৮ সালে ইন্দো-মার্কিন পরমাণু চুক্তির বিরুদ্ধে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়। তার জেরে আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হয় কংগ্রেস তথা ইউপিএ জোটকে। শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই অসুস্থ বা জেলে থাকা সাংসদদের পর্যন্ত ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণের জন্য হুইপ জারি করে। সেই সময় ১৯ ভোটে জেতে সরকার পক্ষ। টিকে যায় মনমোহন সিংহ সরকার।
তার আগে অবশ্য ১৯৯৯ সালে অনাস্থা ভোটেই ১৩ মাসের মাথায় সরকার পড়ে যায়। সেই সময় জয়ললিতা বিজেপির উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ায় আস্থা ভোটের মুখে পড়ে বাজপেয়ী সরকার। মাত্র এক ভোটের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। এটাই এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সংসদের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে অনাস্থা ভোটের ফলাফল নির্ধারণের নজির।
আরও পড়ুন: ‘বুড়ো’দের ছেঁটে ফেললেন রাহুল, কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে নবীন মুখের সারি
ফলাফল যাই হোক, রাজনীতিতে অনাস্থা ভোট সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর লোকসভা ভোটের আর কয়েক মাস বাকি। বিধানসভা ভোটের মুখে বেশ কয়েকটি রাজ্য। কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভা ভোট একসঙ্গে করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, টিডিপির চন্দ্রবাবু নায়ডু, আপ-এর কেজরীবালরা ফেডেরাল ফ্রন্ট নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। কংগ্রেসও আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোটের তোড়জোড় চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা ভোটে কে কোন দিকে ঝুঁকে, কার জোটসঙ্গী হবে সেই সমীকরণ অনেকটাই স্পষ্ট হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy