স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছিলেন একমাত্র চিকিৎসক। তিনিও প্রশিক্ষণে চলে গিয়েছেন। এর জেরে চিকিৎসা-সঙ্কটে পড়েছেন ঝালদা ১ ব্লকের চার-পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতি জেলা স্বাস্থ্য দফতর উদাসীন। তা না হলে একজন বিকল্প চিকিৎসকে পাঠানো হত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝালদা ১ ব্লকের ইলু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক প্রশিক্ষণে গিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে বাসিন্দাদের এখন আরও দূরে ঝালদা শহরে যেতে হচ্ছে। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিকল্প চিকিৎসক না দেওয়ায় তাই ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। ঝালদা ১ ব্লকের ইলু-জারগো, নওয়াডি ও পুস্তি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং আংশিক ভাবে মাঠারি-খামার ও তুলিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা চিকিৎসার জন্য ইলু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক একটি প্রশিক্ষণে রয়েছেন। তবে তাঁর পরিবর্তে একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে। জেলায় এখন প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম। সে কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অতীতে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু থাকলেও বহুদিন হল তা উঠে গিয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। কিন্তু প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেল অ্যালাপ্যাথির চিকিৎসক নেই। এখন এখানে চিকিৎসা পরিষেবা চলছে কার্যত জোড়াতালি দিয়ে। কোনও দিন একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, কোনও দিন ফার্মাসিস্টের ভরসায় কিংবা কোনও দিন নার্সের ভরসায় চিকিৎসা চলছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কানে ব্যাথা নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন স্থানীয় কুশি গ্রামের বাসিন্দা রামচরণ মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, “এখানে কোনও চিকিৎসক দেখতে পেলাম না। এক নার্স কান পরীক্ষা করে কয়েকটা ট্যাবলেট দিয়েছেন। জানি না, ব্যাথা কমবে কি না!” ইলুর বাসিন্দা নমিতা মুড়াও এসেছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাঁর অভিজ্ঞতা, “ডাক্তার পাওয়া গেল না। কাকে দেখাব ভেবে পেলাম না।” পাপড়াহুড়ুম গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্জন মাহাতোর জ্বরের সঙ্গে কাশি হচ্ছে। তিনিও জানান, নার্সের ভরসাতেই ওষুধ নিয়ে যাচ্ছি। কেমন থাকব কে জানে। চাষের সময় বাড়িতে বেশি দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।” একই অভিজ্ঞতা জারগো গ্রামের কর্ণ মাহাতোরও। তাঁর বছর পাঁচেকের ছেলে ভরত মাহাতোর পায়ে ঘা হয়েছে। তিনি বলেন, “এত মানুষ নির্ভরশীল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে। কিন্তু একজন চিকিৎসক থাকবে না কেন?”
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক কর্মী বলেন, “ডাক্তারবাবু ছুটি নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ফার্মাসিস্টস, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, নার্স সবাই মিলে রোগীদের পরিষেবা দিচ্ছি।” ইলু-জারগো গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শীলা মাহাতো বলেন, “এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি শুধু এখন নয়, অনেক আগে থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন। মানুষজন আমাদের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” নওয়াডি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কান্তপ্রসাদ মাহাতো জানান, এখন অনেক জায়গাতেই জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এই সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। কাজেই ডাক্তার দেখাতে অসুস্থদের ঝালদায় নিয়ে যেতে হচ্ছে।” এলাকার বিজেপি নেতা শঙ্কর মাহাতোর প্রশ্ন, “সরকার জঙ্গলমহলের উন্নতি হচ্ছে বলে দাবি করলেও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র এরকম অবস্থায় ফেলে রেখেছে কেন? স্বাস্থ্য দফতরকে সমস্যার কথা জানিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy