তিনি কলকাতা শহরের প্রাক্তন মেয়র। বর্তমানে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী। মেয়র থাকাকালীন কলকাতার দক্ষিণ শহরতলিতে গভীর নলকূপে আর্সেনিক থাকার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী হিসেবে সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই এখন মহানগরীর ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক সম্পর্কে উত্তরসূরি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সতর্ক করছেন।
জলসঙ্কট এড়াতে কলকাতা পুরসভা কলকাতার ১৬টি ওয়ার্ডে ১০০টি গভীর নলকূপ খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলির বেশির ভাগই বসার কথা দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন ওয়ার্ডে। পুরসভার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনেই নড়েচড়ে বসেছেন প্রাত্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ঘেঁষা কয়েকটি এলাকায় পানীয় জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক মিলেছে।” তাঁর বক্তব্য, “কলকাতায় নতুন করে যে সব জায়গায় গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, সেখানে ভূগর্ভে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক থাকার প্রবণতা রয়েছে। তাই সেখানকার জল পরীক্ষা না করে গভীর নলকূপ বসানো উচিত নয়।” আর পুরসভার এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত পুরসভার আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথও। তাঁর দাবি, ওই নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে টাস্ক ফোর্স কিছু জানে না।
শুধু সতর্ক করেই ক্ষান্ত হননি সুব্রতবাবু। আর্সেনিক পরিমাপে তাঁর দফতর পুরসভাকে সাহায্য দিতে চায় বলেও জানিয়েছেন তিনি। সুব্রতবাবু বলেন, পুরসভা চাইলে তাঁর দফতর বিশেষ যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন এলাকার জলে আর্সেনিকের পরিমাণ পরিমাপ করতে প্রস্তুত। কিন্তু এখনও পুরসভার তরফে সে ধরনের কোনও প্রস্তাব তাঁর কাছে না আসায় বিস্মিত কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি অবশ্য তাঁর পূর্বসূরির এ হেন উদ্বেগ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
তবে পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার দাবি, কলকাতার কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছিল দু’একটি এলাকায়। সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কলকাতায় তাই আর্সেনিক দূষণের সমস্যা এখন আর নেই।
ওই কর্তাটি বলেন, কলকাতা পুরসভা এলাকায় দলের নমুনা পরীক্ষা করার কোনও এক্তিয়ার নেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের। পুরসভার নিজস্ব ল্যাবরেটরি রয়েছে। সেখানে পুরসভাই জলের দূষণের পরিমাপ করে।
সুতরাং এ নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কোনও ভূমিকাই থাকতে পারে না। কলকাতা পুরসভার অন্য একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, তারক সিংহের কাছে গভীর ও অগভীর নলকূপের দায়িত্ব থাকার সময়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে দিয়েই পুরসভা বেশ কয়েকটি নলকূপের জল পরীক্ষা করিয়েছে।
নতুন করে গভীর নলকূপ বসানোর এই সিদ্ধান্ত থেকে অবশ্য নিজেদের পুরোপুরি আলাদা করে নিয়েছে আর্সেনিক দূষণ রোধে গঠিত পুরসভার বিশেষ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথও। তিনি বলেন, “সাত-আট মাস আগে কলকাতা পুরসভায় টাস্কফোর্সের যে মিটিং করা হয়েছিল, তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছিল ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমানো হবে। গঙ্গার জলের উপর জোর দেওয়া হবে। তার পরেও নতুন করে আরও গভীর নলকূপ বসানো হল কী কারণে তা বলতে পারব না।”
অর্থাৎ, নতুন করে ১০০টি গভীর নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে যে পুরসভা তাদের টাস্ক ফোর্সেরও মতামত নেয়নি, তা পরিষ্কার।
পুরসভা সূত্রের খবর, গার্ডেনরিচের জল দক্ষিণ শহরতলির সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই গভীর নলকূপ বসানোর এই সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যেই ২০টির মতো গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। বাকিগুলি বসানোর কাজ চলছে। ওই সব গভীর নলকূপগুলি সব বসানো হয়ে গেলে কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলের উপরে যেমন চাপ পড়বে, তেমনই আর্সেনিক দূষণের আশঙ্কাও বাড়বে বলে জানিয়ে দিচ্ছেন টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য।
দক্ষিণ কলকাতার লেক গার্ডেন্স, গল্ফ গার্ডেন, যোধপুর পার্ক, যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী, নাকতলা এলাকার বেশ কয়েকটি নলকূপে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক মিলেছে। কলকাতার লাগোয়া সোনারপুর-রাজপুর পুরসভা এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড আর্সেনিক দূষণে দুষ্ট।
পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গভীর নলকূপ বসানোর প্রক্রিয়া মাত্র ছয় মাসের জন্য। আগামী বছর পুরসভার নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখেই যে পুরসভাকে এই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে বলে তা স্বীকার করেছেন পুরসভার ওই কর্তা। তাঁর দাবি, সব দিক বিচার করেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy