খাদ্যরসিক বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে রসনাতৃপ্তির মতো গুরুত্ব আর কিসে আছে! তাই ঝালে-ঝোলে-অম্বলে প্রবাদের মতোই বৈচিত্র্যময় বঙ্গের খানাপিনা। কিন্তু খাবারের গুণাগুণ নিয়ে বিশ্লেষণের অভ্যাস তৈরি করলে আবার হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। শরীর-স্বাস্থ্যই যদি সঙ্গ না দেয়, তা হলে খাদ্যের রসাস্বাদন ব্যর্থ। তাই চেটেপুটে খাবারও খান, আবার সুস্থও থাকুন।
রসুনের মতো উপকারী মশলাও সব সময়ে কার্যকরী হয় না সুস্বাস্থ্য রক্ষায়। ভুল থেকে যায় ব্যবহারেই। ফলে কেবল স্বাদই মেলে, গুণ নয়। বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে রসুনের ব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের টোটকার কথা উল্লেখ করা হয়। যেগুলির মধ্যে জনপ্রিয়তম হল, রসুনের ‘১০ মিনিট নিয়ম’।
বলা হয়, রান্নায় দেওয়ার আগে ১০ মিনিট মুক্ত বাতাসে রেখে না দিলে রসুনের কোনও গুণই শরীর পর্যন্ত পৌঁছায় না। আদৌ কি কার্যকরী এই নিয়ম? যদি খোসা ছাড়িয়েই ঝপ করে কড়াইয়ের তেলে ফেলে দেওয়া হয়, তাতে কী ক্ষতি হয়? রসুনের ১০ মিনিট নিয়ম নিয়ে উত্তর দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরী। তিনি বলছেন, ‘‘এটি আসলে নতুন নয়, অনেক প্রাচীন টোটকা। ‘১০ মিনিট নিয়ম’ মেনে রসুন ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তার কম রাখলে, পাওয়া যাবে না, তা নয়। কিন্তু সর্বোচ্চ পরিমাণে পুষ্টি পাওয়া যায় এই নিয়মেই।’’

রসুন থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পেতে কী করবেন? ছবি: সংগৃহীত।
কী এই ১০ মিনিটের নিয়ম?
রসুনের খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা খেলে, অথবা কাটার সঙ্গে সঙ্গেই কড়াইতে ঢেলে দিলে কেবল স্বাদটুকুই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণগুলি রান্নার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। তাই বলা হয়, খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট করে কেটে অথবা থেতো করে ১০ মিনিট মতো খোলা হাওয়ায় রেখে দিতে হয়। তার পর কড়াইয়ে দিতে পারেন অথবা কাঁচা খেয়ে নিতে পারেন। দু’টিতেই লাভ। এই ১০টি মিনিট রসুনের কুচিগুলি কোনও ভাবেই আগুনের তাপের সংস্পর্শে নিয়ে আসা যাবে না।
আরও পড়ুন:
এই নিয়মের সঙ্গে পুষ্টিগুণের কী সম্পর্ক
রসুনের মধ্যে যত গুণ রয়েছে, তা আসে অ্যালিসিন নামে এক যৌগ থেকে। সেই অ্যালিসিন তৈরির জন্যই এই ১০টি মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। রসুনের মধ্যে অ্যালিনেজ় নামক এনজ়াইম এবং অ্যালিন নামক প্রোটিন মিলেমিশে তৈরি হয় অ্যালিসিন। রসুনের কাটাকুটি সেরে নেওয়ার পর ১০ মিনিটের ওই সময়ের মধ্যে মুক্ত হাওয়া-বাতাসের সংস্পর্শে এসে অ্যালিনেজ় ও অ্যালিনের মিলনে অ্যালিসিন তৈরি হয়। যেই অ্যালিসিনের জন্যই রসুনের এত গুণ। পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘অ্যালিনেজ় এনজ়াইম আসলে তাপের কাছাকাছি এলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। অ্যালিসিন তৈরি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই ১০ মিনিট তাপ থেকে দূরে রাখলে অ্যালিসিন তৈরি হয়ে যাবে। এক বার তৈরি হয়ে গেলে গরমে আর নষ্ট হয় না অ্যালিসিন। সেটির সম্পূর্ণ গুণ রসুনের মধ্যে থেকে যায়। রান্নাতেও তার প্রভাব পড়ে।’’
ফলে, আগুনে ছাড়ার আগে ১০ মিনিট মতো ফেলে রসুনকে নিজের মতো থাকতে দিন। এতে রসনাতৃপ্তি এবং সুস্বাস্থ্য, দু’টিই মিলবে খাবার থেকে।