Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
rice

ভাত খেলেও বাড়বে না মেদ, কী ভাবে আর কতটুকু খাবেন জানেন?

ভাত মানেই হু হু করে ওজন বাড়বে এমন নয় বলেই দাবি পুষ্টিবিদদের৷ , সুস্থ শরীরে কাজকর্ম করে যেতে হলে সকাল বা দুপুরের দু’–মুঠো ভাতের কোনও বিকল্প হয় না৷ কিন্তু কী ভাবে খাবেন?

নিয়ম মেনে ভাত খেলে মোটা হওয়ার কোনও ভয় নেই। ছবি: শাটারস্টক।

নিয়ম মেনে ভাত খেলে মোটা হওয়ার কোনও ভয় নেই। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ১৭:১২
Share: Save:

ওবেসিটির কড়া চোখের কারণে খাবারের পাত পাল্টে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। ভাত না খেয়ে ওজন কমানোর চিন্তায় বেছে নিচ্ছি পেট ভরানোর অন্য নানা বিকল্প৷ যে ভাত আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির মূল স্তম্ভ, তাকে বর্জন করে সুস্থ থাকার চেষ্টায় ইন্ধন জোগাচ্ছে ‘লো ফ্যাট নো কার্বস’ ডায়েট।

কিন্তু ভাত মানেই হু হু করে ওজন বাড়বে এমন নয় বলেই দাবি পুষ্টিবিদদের৷ তাঁরা জানিয়েছেন, সকাল–বিকেল এক থালা ভাত নিয়ে বসা যেমন কাজের কথা নয়, ঠিক তেমনই তাকে পুরোপুরি বর্জন করারও দরকার নেই কোনও৷ কারণ সারা দিন ধরে তরতাজা থাকতে হলে, সুস্থ শরীরে কাজকর্ম করে যেতে হলে সকাল বা দুপুরের দু’–মুঠো ভাতের কোনও বিকল্প হয় না৷ ফ্যান না ঝড়ানো ভাত হলে আরও ভাল৷ কারণ তাতে ভিটামিন বেশি পাওয়া যায়৷

কিন্তু ওজন!

সুষম খাবারের অঙ্গ হিসেবে পরিমাণে অল্প করে ভাত খেলে, সে যদি ফ্যানা ভাতও হয়, ওজন বাড়ে না। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশনের মতে, এতে বরং উচ্চ রক্তচাপ, মেটাবলিক সিনড্রোম (হৃদরোগের অন্যতম কারণ) ও কোমরের মাপ বাড়ার আশঙ্কা কমে যথাক্রমে ৩৪, ২১ ও ২৭ শতাংশ৷ কিছু কিছু ক্যানসারকে প্রতিরোধেরও ক্ষমতা বাড়ে। কাজেই শরীর ভাল রাখতে সারা দিনে ১৫০ গ্রামের মতো ভাত খেতেই পারেন৷

আরও পড়ুন: শ্বেতী হানা দিতে পারে যখন তখন, যে কারও শরীরে! আজ থেকেই মেনে চলুন এ সব

চেষ্টা করুন হোল গ্রেন বা আনপলিশ্ড চালের ভাত খেতে৷

রুটিপাউরুটিসিরিয়া

ভাবছেন রুটি না খেয়ে ভাত কেন? আসলে রুটির চেয়ে ভাতে ক্যালোরি কিছু বেশি নেই৷ ১০০ গ্রাম চাল বা আটা, দুইয়েতেই আছে ৩৪০ ক্যালোরির মতো৷ কাজেই ভাতের ভক্ত হলে, সকাল–দুপুর–রাত মিলে যদি ১৫০ গ্রাম চালের ভাতও খান, ৫০০ ক্যালোরির বেশি ঢোকে না শরীরে৷ দিনে ২০০০–২২০০ ক্যালোরি খাওয়ার বরাদ্দ থাকলে এর সঙ্গে স্যালাড, স্যুপ, কম তেলে রান্না করা ডাল–তরকারি–মাছ–মাংস, যাই খান না কেন, এক দিকে যেমন সুষম খাবারের হিসেব মেলে কাঁটায় কাঁটায়, অন্য দিকে ক্যালোরি বজায় রাখাও সহজ হয়৷ কারণ ভাত খেলে যে তৃপ্তি হয়, মুখরোচক খাবারের জন্য যত কম আকাঙ্ক্ষা জাগে, খুব কম খাবারেই তা হয়৷

তবে ভাতের গ্লাইকোজেন গলে দেরি করে, রুটির ক্ষেত্রে তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি গলে তা। তাই অনেকেই ভাতের চেয়ে রুটি বেশি পছন্দ করেন। সেটা ভুল নয়। তবে একেবারে বাত বাদ দেওয়ার মতো ভয়ের খাবারও নয় তা। বরং ভাত রুটি মিশিয়ে বা এক বেলা অল্প করে ভাত থেকে সঙ্গের তরিতরকারি বেশি করে খেয়েও দিব্য পেট ভরানো যায়। পূরণ করা যায় প্রয়োজনীয় ক্যালোরিও।

এ বার বলি পাউরুটি ও অন্য সিরিয়ালের কথা৷ হোল গ্রেন বা মাল্টি গ্রেন হলে তবু চলতে পারে, না হলে নয়৷ কারণ এ সব হল প্রক্রিয়াজাত খাবার৷ প্রসেসিংয়ের সময় এটা–সেটা মেশানোর ফলে প্রাকৃতিক গুণে ঘাটতি হয়৷ তার উপর হোল গ্রেন না হলে ফাইবার থাকে না বলে তারা পড়ে যায় সিম্পল কার্বোহাইড্রেটের তালিকায়৷

অতএব ভাত

ভাতের ভক্ত হলে, রুটি খেয়ে অতৃপ্ত থাকা বা পেটের গোলমালে ভোগার দরকার নেই৷ দিনে একবার কি দু’বার ভাতই খান৷ তবে চেষ্টা করুন হোল গ্রেন বা আনপলিশ্ড চালের ভাত খেতে৷

গ্রেন অর্থাৎ শস্যদানার আদি রূপ হল হোল গ্রেন৷ অর্থাৎ যখন প্রসেসিং ও পলিশিংয়ের পাল্লায় পড়ে তার উপরের উপকারি অংশের (যাতে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল থাকে অফুরান) বেশ কিছুটা হারিয়ে না যায়৷

হোল গ্রেন চাল নানা রকম হয়৷ বাদামি, লাল, কালো, ওয়াইল্ড ইত্যাদি৷ অ্যান্থোসায়ানিন নামে উপকারি উপাদানের জন্য লাল চালের রং ইটের মতো৷ কালো চাল আবার রান্না করলে বেগুনি রং ধরে তাতে৷ ওয়াইল্ড রাইস বা বন্য চাল যদিও আদতে চাল নয়, ঘাষের বীজ, উত্তর আমেরিকার মানুষ খেতেন এক সময়৷ কিন্তু এর উপকারের প্রমাণ পেয়ে আজকাল তাও চাষ হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এক কাপ বাদামি, লাল, কালো বা ওয়াইল্ড রাইস খেলে সারা দিনে যতটা হোল গ্রেন খাওয়ার কথা তার দুই–তৃতীয়াংশই পূরণ হয়ে যায়৷

তবে সমস্যা হয় তাদের স্বাদ–গন্ধ নিয়ে৷ কালো, বাদামি বা লাল চালের ভাতে বাদামের মতো গন্ধ থাকে, বন্য চালের ভাতে থাকে মাটি মাটি গন্ধ৷ ফলে অনেকেই খেতে পারেন না৷ সে ক্ষেত্রে সাদা ভাতই খান৷ কারণ তারও অনেক উপকার আছে৷ তবে পারলে পাতে রাখুন ঢেঁকি ছাঁটা চাল।

আরও পড়ুন: অকালে চুল ঝরা থেকে টাক পড়া, এই দাওয়াই দিয়েই করুন সমস্যার সমাধান

ভাতের উপকার

ভাতকে বলে ‘ফ্রি ফুড’৷ কারণ এতে সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, গ্লুটেন ইত্যাদি ক্ষতিকর উপাদান থাকে না৷ চর্বি থাকেই না প্রায়৷ বিশেষ করে ট্রান্স ফ্যাট, যা খেলে কোলেস্টেরল বাড়ার আশঙ্কা থাকে৷ স্যাচুরেটেড ফ্যাটও থাকে না৷ বরং থাকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা স্টার্চ, শরীরকে শক্তি জোগাতে যার বিরাট ভূমিকা৷ ফাইবারের উপস্থিতিও পেটের সমস্যা কমাতে, ওজন–সুগার–রক্তচা বশে রাখতে যার ভূমিকা আছে৷

ভাত সহজে হজম হয়৷ ফলে অসুখবিসুখের মধ্যেও খাওয়া যায়৷ ডায়াবিটিসেও সে ব্রাত্য নয়৷ সঙ্গে শাক–সব্জি–স্যালাড থাকলে এক–আধ কাপ ভাত খাওয়া যেতে পারে আরামসে৷

ভাত হজম হয় ধীরে, হোল গ্রেন চালের হলে আরও ধীরে৷ ফলে পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে৷ ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে বলে অল্প খেলেও শরীর–মন তৃপ্ত থাকে৷

ভাতে আছে প্রোটিন–ভিটামিন–মিনারেলস৷ বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিলিয়েমিশিয়ে খেলে সে উপকার আরও বাড়ে৷

আরও পড়ুন: বায়ুদূষণের কোপে পড়ছে আপনার সন্তানও, বাঁচতে মেনে চলুন এ সব

শরীর ভাল রাখতে সারা দিনে ১৫০ গ্রামের মতো ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত৷

ভাত রান্নার নিয়ম

চাল বার বার ধুলে বি ভিটামিনের অনেকটাই জলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়৷ কাজেই দু’–এক বারের বেশি ধোবেন না৷ চাল ভিজিয়ে রেখে ওই জলেই কম আঁচে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন৷ এমন মাপে জল দিন, যাতে ফ্যান ফেলতে না হয়৷ তা হলে ভিটামিন–মিনারেলসরা থেকে যাবে৷ ফুটন্ত জলে ভেজানো চাল দিয়েও রাঁধতে পারেন৷ চাল নরম হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে ঢাকা দিয়ে রাখুন৷ বাকিটুকু ভাপেই হয়ে যাবে৷ প্রেশার কুকারেও রান্না করা যায়৷ ভাপে রাখা ভাত যত আস্তে আস্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসে ততই তার মধ্যের স্টার্চ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে পরিণত হয় ও সেই ভাত খেলে অল্পেই পেট ভরে যায় বলে ওজন কমার সুরাহা হয়৷

আর ভাতঘুম?

সকাল থেকে তেমন কিছু না খেয়ে নানা কাজের পর দুপুরে পেটে কিছু পড়লেই ঝিমুনি আসবে, সে আপনি ভাত খান কি অন্য কিছু৷ তার উপর রাতে যদি ভাল ঘুম না হয় তো হয়েই গেল৷ তাই অনেক অফিসেই দুপুরে ১০–১৫ মিনিট গড়িয়ে নেওয়ার অবকাশ আছে৷ তাতে ব্রেন তরতাজা হয়৷ কাজের উৎসাহ বাড়ে৷ ওটুকু বিশ্রামে ওজনও বাড়ে না৷ যেখানে সে সুযোগ নেই সেখানে কয়েকটি নিয়ম মেনে এই বিপদ কাটান৷ যেমন: সকালে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান৷ ভাত/রুটি–ডিম/ডাল–সবজি৷ খিদে পেলে ৩–৪ ঘণ্টা বাদে আবার অল্প কিছু খান৷ দুপুরের আগে পর্যন্ত তরতাজা থাকবেন৷ দুপুরে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান পেট কিছুটা খালি রেখে৷ ভাত/রুটি–মাছ/ডাল/দই/চিকেন–সব্জি৷ খুব বেশি খাবেন না, নয়তো খাবার হজম করতেই সব এনার্জি ক্ষয় হয়ে যাবে৷ খাওয়ার পর ১০–১৫ মিনিট হাঁটাহাটি করুন বা আড্ডা দিন৷ ঘুমের ঝোঁক কেটে যাবে৷ জল কম খেলেও ঘুম ঘুম ভাব আসে৷ কাজেই সারা দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস জল খান৷ ঘুম তাড়াতে এক–আধবার কফি খেতে পারেন৷ তার বেশি নয়৷ নরম পানীয় খেলে সাময়িক তরতাজা লাগলেও পরে গ্রাস করে ক্লান্তি৷ কাজেই নিয়মিত ও রকম করবেন না৷ রাতে যাতে ভাল ঘুম হয়, সে ব্যবস্থা করুন৷

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy