Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Vegan

Veganism in Kolkata: কলকাতা শহরেও কি বাড়ছে ভিগান জীবনধারা

২০১০ সালে জাতিসংঘের রিপোর্টে ভিগানিজমের কথা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের বহু দেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হতে থাকে এই জীবনধারা।

কলকাতা শহরও কি বাড়ছে ভিগানিজম

কলকাতা শহরও কি বাড়ছে ভিগানিজম ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৪১
Share: Save:

ভিগানিজম একটি জীবনধারা। শুধু খাদ্য নয়, প্রাণী ও প্রাণিদেহের দ্বারা তৈরি সব পণ্যই বর্জন করা হয় এই রীতিতে। এক কথায়, নিরামিষাশীরা যখন প্রাণিজাত সমস্ত খাবার ও পণ্য বর্জন করেন, তখন তাঁদের ভিগান বলে। মাছ-মাংস তো নয়ই, ভিগানরা ডিম, দুধ আর দুধের তৈরি কোনও খাবারও খান না। যেমন ছানা, দই, পনির, সন্দেশ, রসগোল্লা, এ সব কিছুই চেখে দেখেন না তাঁরা। কয়েক দশক আগে থেকে ভিগানিজমের প্রচলন শুরু হলেও ২০১০ সালে জাতিসংঘের রিপোর্টে ভিগানিজমের কথা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের বহু দেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হতে থাকে এই জীবনধারা। সম্প্রতি কলকাতার বুকেও অনেকে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন ভিগান বলে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

নিরামিষ খেলেই কি ভিগান?

ভিগান ও ভেজিটেরিয়ানরা উভয়ই নিরামিষ খান। তাই অনেকেই আলাদা ভাবে ভিগানদের জীবনধারা বুঝতে পারেন না। কিন্তু এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। ভেজিটেরিয়ানরা মাছ-মাংস না খেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের খাদ্যতালিকায় দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য থাকে। মধুর মতো নানা প্রাণিজ দ্রব্যও থাকে। এমনকি, প্রাণীদেহ থেকে তৈরি পণ্য, যেমন চামড়ার তৈরি জুতো, বেল্ট কিংবা জ্যাকেটও ব্যবহার করেন। অন্য দিকে, ভিগানরা তাঁদের জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রাণিজ দ্রব্য ও পণ্য বর্জন করেন। উল, চামড়া বা সিল্কের পোশাকও পরেন না তাঁরা।

শুনে যত সহজ মনে হচ্ছে, ভিগান হওয়া কি আদৌ তত সহজ? কী বলছেন কলকাতার ভিগানরা?

শহরের এক প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী দেবব্রত ও সুজাতা (নাম পরিবর্তিত)। প্রেমে পড়ার সময়ে দু’জনেই লুকিয়ে গিয়েছিলেন নিজেদের পছন্দের খাবারের কথা। যখন জানতে পারেন যে দু’জনই ভিগান, তখন তো হাতে চাঁদ পাওয়ার জোগাড়। কিন্তু নিজেদের প্রেম বাড়লেও বন্ধুদের থেকে টিটকিরি শুনতে হয় অবিরাম। ‘‘সামনাসামনি কিছু না বললেও, পিছনে যে টিটকিরি চলতে থাকে, তা আমরা ভালই বুঝতে পারি,’’ বললেন দেবব্রত। পাশাপাশি, রোজকার জীবনে খাওয়াদাওয়া করতেও বেশ অসুবিধা হয় বলে জানান তাঁরা। সুজাতার কথায়, ‘‘বাড়িতে খুব একটা অসুবিধা না হলেও বাইরে খাওয়াদাওয়া করা অসুবিধাজনক। বিশেষ করে কলকাতায় দু’-একটি জায়গা ছাড়া আর কোথাও আলাদা করে ভিগান খাবার পাওয়া যায় না। তা ছাড়া, অনেকেই আমাদের ভেজিটেরিয়ান ভাবেন।’’ বাইরে কোথাও খেতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুব সতর্ক ভাবে বাছতে হয় খাবার। এমনকি খাবার ডেলিভারি করা বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করতেও বেশ অসুবিধা হয় তাঁদের। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় নিরামিষ খাবারের মধ্যেও ব্যবহার করা হয় ঘি-মাখন।

সমস্যা হয় পরিবারের মধ্যেও। সুজাতা ভিগান হয়েছেন প্রায় বছর চারেক। শুরু থেকেই বাড়ির লোক তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। কিন্তু দেবব্রত ভিগান হয়েছেন দেড় বছর আগে। এখনও বাড়িতে বলে উঠতে পারেননি সে কথা। দেবব্রত পড়াশোনার সূত্রে কলকাতায় থাকেন। মাঝে যে কয়েক বার বাড়ি গিয়েছেন, নিরামিষ খাওয়ার অছিলায় এড়িয়ে গিয়েছেন মাছ-মাংস। তবে এই লুকোচুরি যে বেশি দিন চলবে না, তা বুঝতে পারছেন।

তবে শুধু খাওয়াদাওয়াই নয়, চামড়ার কোনও জিনিস ব্যবহার করেন না তাঁরা। এ সব শুনে অনেকেই ভিগানিজমকে উচ্চবিত্তের বিলাস বলেন। কিন্তু সত্যিই কি তা? প্রশ্নটি শুনে দু’জনেই একসঙ্গে বলে উঠলেন, ‘না’। ‘‘খরচের বিষয়টি আসে বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বরং খরচ কম হয় অনেকটাই,’’ মত সুজাতার। দেবব্রত বলেন, ‘‘আসলে এটি এমন একটি ভাবনা যা রোজ মেনে চলা অনেকটা অধ্যবসায়ের মতো। তাই হয়তো এত প্রশ্ন।’’ তবে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ভিগানিজমের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই এই তরুণ তরুণীর মনে। তাঁরা জানান দেরিতে হলেও এই নতুন জীবনধারা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে কলকাতায়। গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ভিগান গোষ্ঠী। এমনকি কলকাতায় সম্প্রতি দু’-তিনটি রেস্তোরাঁ খুলেছে বলেও জানান দু’জনে।

প্রায় একই কথা শোনা গেল দক্ষিণ কলকাতার ঊর্মি ভট্টাচার্যের গলাতেও। ধর্মীয় বিশ্বাসে নিজে নিরামিষাশী ছিলেন অনেক দিন থেকেই। ভিগান হয়েছেন কয়েক বছর আগে। স্বামীর কাজের সূত্রে তাঁর সঙ্গে বছরের অনেকটা সময়েই বাইরের মুলুকে কাটাতে হয় তাঁকে। বিদেশে থাকার সময়ই প্রথম জানতে পারেন ভিগানিজমের কথা। এতদিন কলকাতায় ফিরে বাইরে খাওয়াদাওয়া করতে গেলে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হত তাঁকে। তাই প্রাণের শহর কলকাতায় ভিগানিজমের প্রসার ঘটায় খুশি তিনিও। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বাইরে খাদ্যাভ্যাস নিয়ে খুব একটা মাতামাতি করতে আগ্রহী নন ঊর্মি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকলের নিজের নিজের খাদ্যাভ্যাস বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত। বিশেষত ভারতের মতো বৈচিত্রময় দেশে তা খুবই জরুরি। কে কী খাবেন বা খাবেন না, তা অন্য কেউ বলে দিতে পারেন না।’’ তাই ভিগানিজম নিয়ে সচেতনতার প্রসার চাইলেও ‘কর্মসূচি ভিত্তিক’ প্রচার কিংবা নেটমাধ্যমে সক্রিয় প্রচারে খুব একটা আগ্রহী নন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Vegan Vegan Diet Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy