আজ বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে। যত্ন নিন হৃদয়ের। ছবি: শাটারস্টক।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে দুনিয়া আজ হাতের মুঠোয়। এ দিকে ব্যাপক ভাবে বদলে গিয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। আর এর ফলে বাড়ছে হাই ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবিটিস-সহ হার্টের অসুখের মতো নানা ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’।
ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশে যেখানে হার্টের অসুখের প্রবণতা কমছে, সেখানে আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যুর হার হু হু করে বেড়ে চলেছে।
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে আমাদের দেশে প্রতি লক্ষ মানুষের মধ্যে ২০৯.১ জন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান,অথচ ১৯৯০ সালে মৃত্যুহার আগে ছিল ১১৫.৭। গত ২৬ বছরে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার বেড়েছে শতকরা ৩৪ শতাংশ। ছোট থেকে সতর্ক থাকলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলা যায় সহজেই।
আরও পড়ুন
এই মারণ রোগের থাবায় এ বছরই মারা যাবেন প্রায় এক কোটি মানুষ!
শৈশবেই হার্টের অসুখের সূত্রপাত
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০৩০ সালে বছরে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাবেন। এদের সিংহভাগই ভারতীয়। ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে আমাদের দেশে একুশ লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে হার্টের রোগের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ চাইল্ডহুড ওবেসিটি। কার্ডিওলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দল পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশ জুড়ে এক সমীক্ষা করে দেখেছেন, গ্রাম, শহর, মফস্সল নির্বিশেষে প্রচুর বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। আর এখানেই লুকিয়ে আছে এ দেশে হার্টের অসুখের বাড়বাড়ন্তের প্রধান সূত্র। শৈশবেই বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে পারলে আগামী দিনে হার্টের অসুখের বাড়বাড়ন্ত অনেকাংশে আটকে দেওয়া যাবে।
শৈশবেই স্বাস্থ্য সচেতন হলে আগামী দিনে হার্টের অসুখ অনেকটা কমবে। ছবি: শাটারস্টক।
রিস্ক ফ্যাক্টরের তালিকা
হার্টের অসুখের অজস্র রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে মাত্র তিনটিকে প্রতিরোধ করা যায় না। ইচ্ছে থাকলে বাকি সব কটাকেই জব্দ করা যায় অনায়াসে। বেশি বয়স, বংশগতি আর জেন্ডার (পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি), এই তিনটি রিস্ক ফ্যাক্টর ছাড়া সবই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বাড়তি ওজন হার্টের অসুখের ঝুঁকি ভীষণ ভাবে বাড়িয়ে দেয়। সিগারেট হার্টের অসুখের সব থেকে বড় শত্রু। ধুমপান আর হার্ট অ্যাটাক প্রায় সমার্থক। ডায়বিটিস। হাই ব্লাডপ্রেশার। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাধিক্য। ফিজিক্যাল ইনঅ্যাক্টিভিটি, অর্থাৎ নাগাড়ে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলেও কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ। ভিটামিন ডি-৩ ও ক্যালসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি হার্টের রক্ত চলাচলের গতি কমিয়ে দেয়। সি–রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিনের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হলেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এলপিএ, অর্থাৎ লাইপোপ্রোটিন-এ বেশি থাকলেও হার্টের অসুখ প্রায় অবধারিত। আর যে তিনটি রিস্ক ফ্যাক্টরকে প্রতিরোধ করা মুশকিল, যেমন বেশি বয়স, বংশগতি আর পুরুষমানুষ, সেগুলি তো আছেই।
আরও পড়ুন
আপনার হার্টের অবস্থা কেমন, এ বার ঘরে বসেই জেনে নিন এক ক্লিকে
একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন শেষেরটি ছাড়া সব কটি রিস্ক ফ্যাক্টরকে প্রতিরোধ করা খুব একটা অসম্ভব নয়।
ছোটরাই পারে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে
হার্টের অসুখ মানেই বুড়ো বয়সের অসুখ। তাই ৫০ বছর পেরোলে দেখা যাবে এই কনসেপ্ট একেবারে বদলে গিয়েছে। কেননা শৈশবেই হার্টের অসুখের বীজ পোতা হয়ে যায়। তাই বাচ্চাদের বোকা বাক্স আর কম্পিউটারের সামনে থেকে তুলে মাঠে খেলতে পাঠাতে হবে। তবে বড়রা নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ছোটদের সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। কলকাতা সমেত রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রতিটি স্কুলে হার্টের অসুখ প্রতিরোধে বাচ্চাদের সচেতন করার কর্মসুচি নেওয়া হয়েছে। তাদের বোঝানো হচ্ছে যে ওজন ঠিক রাখতে নিয়ম করে মাঠে দৌড়োদৌড়ি করে খেলতেই হবে। একই সঙ্গে বাবা মা-সহ পরিবারের সবাইকে সচেতন করতে বাচ্চাদের বেশ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার কথা শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওরা যদি বাবা-মাকে বোঝায় ‘মাই হার্ট ইওর হার্ট’, তা হলে বড়রাও কিছুটা সাবধান হবে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন
ওষুধ ছাড়াই এই সব উপায়ে জব্দ করুন মাইগ্রেন
সিগারেট ছাড়ুন, সুস্থ থাকুন। ছবি: শাটারস্টক।
একটি মাত্র সিগারেট আপনার জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে ১৪ মিনিট। তাই সুস্থ থাকতে সিগারেট ছাড়তে হবে। নুন খাওয়া কমিয়ে হার্ট ভাল রাখতে হবে, দিনে আড়াই গ্রামের বেশি নুন না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। প্রতি দিন নিয়ম করে স্ট্রেস কমানোর জন্যে ভাললাগার কাজ করুন। তা বাচ্চার সঙ্গে খেলেই হোক বা পোষা প্রাণীকে আদর করে কিংবা স্ট্রেচিং করে। চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি খাবেন না। পরিবর্তে টাটকা ফল, মাছ ও চিকেন খান। আর অবশ্যই পর্যাপ্ত জল। এলপিজি-র যত্ন নিন। না, গ্যাস সিলিন্ডার নয়। এল মানে লিপিড, পি- প্রেশার আর জি– গ্লুকোজ। নিয়ন্ত্রণে না রাখলেই বিপদ। ফাস্ট ফুড, প্রিজার্ভড ফুডের বদলে টাটকা শাকসব্জি, ডাল, গম, চাল, ওটস খেতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণে। আর খাবেন মাছ ও চিকেন জাতীয় মাংস, অল্প তেলে রান্না করা। নিয়ম করে কিছু ক্ষণ এক্সারসাইজ করতেই হবে। তেল খাবার ব্যাপারেও নিয়ম মেনে চলুন। সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল আর অল্প সর্ষে তেলে রান্না খাবার খান। বাড়িঘর ও কাজের জায়গা থাকুক ধোঁয়ামুক্ত, দূষণহীন। কাল নয়, সুঅভ্যাস গড়ে তুলুন আজ, এই মুহূর্ত থেকেই।
হ্যাপি ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে, ভাল থাকুন, ভাল রাখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy